…হয়তো বা। তারপরও কিছু জিনিস অব্যাখ্যাত থেকে যাচ্ছে। তাঁর বাড়িতে লুকিয়ে থাকা বেড়ালটার গতিবিধি এত রহস্যময় কেন? ওটা কেন শুধু লুকিয়ে থাকছে? তবে কি ওই বেড়ালটা মানুষজন ভয় পায়? বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে ওটা, রাস্তার ছেলেরা ঢিল মেরে মানুষ সম্বন্ধে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে ওটার মধ্যে?
সে যাহোক, আবরার সিদ্ধান্ত নিলেন আজ বেড়ালটাকে খুঁজে বের করবেনই।
তবে আজ আর ওটাকে খুঁজতে হলো না। নীচে নামতেই আবরার দেখতে পেলেন সামনের দরজায় নিতান্ত নিরীহ চেহারা নিয়ে বসে আছে বেড়ালটা।
বেড়ালটাকে তাঁর মোটেই বিপজ্জনক মনে হলো না। ছোট, ধূসর রঙের বেড়াল। দেখে মনে হচ্ছে না ক্ষুধার্ত বা আবরারকে দেখে ভয় পেয়েছে। বরং চাউনিতে যেন বন্ধুত্বের আভাস। মিউ করে ডেকে উঠল বেড়াল, দরজায় থাবা দিয়ে আঁচড়াল। বেরুতে চায়। ওটার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন আবরার। ‘এখন নয়, বেড়াল। পরে। আগে তোমার সাথে কিছু কথা বলা দরকার। এসো, নাস্তা খেয়ে নিই।’
রান্নাঘরে ঢুকলেন ডক্টর, পিছু পিছু বেড়ালও। তবে এত কাছে নয় যে আবরার ওটার গায়ে লাথি মারতে পারবেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মেঝের ওপর বসল ওটা, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ডক্টরের দিকে। যেন বলতে চাইছে, ‘আমাকে বেরুতে দাও, প্লীজ।’
এদিক-ওদিক মাথা নাড়লেন ডক্টর, কঠিন গলায় বললেন, ‘না বেড়াল। এখন কোথাও যেতে দেয়া যাবে না তোমাকে। আগে আমাকে ভাবতে দাও।’ ফ্রিজ খুলে দুধ বের করলেন তিনি, একটা বাটিতে ঢেলে এগিয়ে দিলেন বেড়ালটার দিকে। বেড়ালটা ফিরেও তাকাল না ওদিকে। আবরার নিজের জন্যে নাস্তা তৈরি করছেন, সে আগের জায়গায় ঠায় বসে রইল। ডিমভাজা আর কফি নিয়ে টেবিলে বসলেন ডক্টর, নড়ে উঠল বেড়াল, ঝাঁপিয়ে পড়ল দুধের বাটিতে, চুকচুক করে খেতে লাগল।
‘সুন্দর বিল্লি,’ ডিম ভাজায় কামড় দিয়ে বললেন ডক্টর। ‘আমি এখন একটু বেরুব। তুমি বাড়িতেই থেকো কেমন?’
বেড়াল কোনও জবাব দিল না, শুধু একবার মুখ তুলে তাকাল আবরারের দিকে।
আবরার বেরুবেন বেড়ালটার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে। যদি এটা কারও হারানো বেড়াল হয়, তাঁকে তিনি ফেরত দিয়ে দেবেন। আর সেই লোক যদি তাঁকে বেড়ালটা বিক্রি করতে চায়, সানন্দে কিনে নেবেন তিনি। কারণ বেড়ালটাকে ভারী পছন্দ হয়েছে তাঁর। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন গোটা বাড়িতে নেট লাগাবেন। এখানে মাছির বড় উৎপাত। বেড়ালটাকে জ্বালিয়ে মারবে।
কফির কাপে চুমুক দিয়ে আবরার বেড়ালটাকে বললেন, ‘সিরিয়াসলি বলছি এখানে কটা দিন থাকতে কেমন লাগবে তোমার? আর ভাল কথা, কী নাম তোমার?’
বেড়াল দুধ খাচ্ছিল, খেতেই লাগল।
‘বুঝলাম। বলবে না। ঠিক আছে, তোমাকে আজ থেকে বিল্লি বলে ডাকব, কি রাজি?’
দুধের বাটি প্রায় শেষ, বেড়াল দরজার ধারে গিয়ে বসে বলল, ‘ম্যাও।’
‘বুঝলাম রাজি,’ বললেন আবরার। ‘তবে তোমার আচরণ দেখে বুঝতে পারছি তুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছ। ঠিক আছে, আমি দেখছি কার বাড়ির পোষা মিনি তুমি।’
.
হারানো বেড়ালের খোঁজে শহরে এলেন ড. আবরার! ক্লারিয়ন পত্রিকার সম্পাদককে বললেন তাঁর বাড়ির ধূসর বেড়ালের কথা। জানতে চাইলেন কোথায় খোঁজ নিলে জানা যাবে কারও ধূসর রঙের বেড়াল হারানো গেছে কিনা। ক্রামারদের বাড়িতে খোঁজ নিতে বললেন এড হোলিস। ওদের বাড়িতে অনেক বেড়াল আছে। কোলদের প্রতিবেশী ওরা।
ক্রামারদের বাড়ি যাবার আগে শিলাকে ফোন করলেন আবরার। শিলা জানাল বিষ্যুদবারের মধ্যে সে কাজ শেষ করতে পারবে। এরপর জানতে চাইল আবরার বেড়ালের খোঁজ পেয়েছেন কিনা। আবরার বেড়াল বিষয়ক সমস্ত ঘটনা তাকে বললেন। তারপর রওনা হয়ে গেলেন ক্রামারদের বাড়ির উদ্দেশে।
মিসেস ক্রামারের সাথে দেখা হলো আবরারের। কথা শুনে বোঝা গেল আবরারকে চেনেন তিনি, এর আগেও দেখেছেন। ‘ভেতরে আসুন,’ আমন্ত্রণ জানাল মিসেস ক্রামার।
‘আজ থাক, মিসেস ক্রামার, বিনয়ের সুরে বললেন ডক্টর! ‘ছুটকো একটা কাজে আপনাকে বিরক্ত করছি। শুনলাম আপনার একটা ধূসর বেড়াল আছে। আমার বাড়িতেও ধূসর রঙের একটা বেড়াল হঠাৎ ঢুকে পড়েছে। ভাবলাম-’
জ্বী, আমার ধূসর রঙের একটা বেড়াল ছিল। দুদিন ধরে ওটা লাপাত্তা।’
‘তা হলে ও বেড়ালটাই আপনার হবে। আমি ওটাকে পুষব ভাবছি। অবশ্য আপনি যদি বিক্রি করতে রাজি হন—’
হেসে উঠলেন মহিলা। ‘বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে আপনি পুষতে চাইলে রেখে দিতে পারেন! আমার বাড়িতে বেড়ালের অভাব নেই।’
‘ধন্যবাদ। মিসেস ক্রামার। আপনার ধূসর বেড়ালটার নাম কী?’
‘জেরী।’
‘আমি ওর নাম দিয়েছি বিল্লি। কেমন হয়েছে বলুন তো।’
জবাবে হাসিতে ফেটে পড়লেন মিসেস ক্রামার।
.
বেড়ালটা নিশ্চয়ই শুনতে পেয়েছে ডক্টর আবরার আসছেন, সে তাড়াতাড়ি দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আবরার দরজা খুলতেই বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করল, চট করে ওটাকে ধরে ফেললেন আবরার। ‘উঁহু, তোমার কোথাও যাওয়া চলবে না, বিল্লি। আমার সাথে কয়েকদিন তোমাকে থাকতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেবে বিল্লি হয়ে আমার কাছে থাকবে নাকি জেরী হয়ে ফিরে যাবে ক্রামারদের কাছে।
ষোলো
মশা-মাছি প্রতিরোধের জন্যে বাড়িতে নেট টাঙানো দরকার! তাই ডক্টর আবরার পরদিন শহরে গেলেন ছুতোর মিস্ত্রি হ্যাঙ্ক পার্ডির সাথে কথা বলতে। পার্ডি বলল এখন সে খুব ব্যস্ত, আগামী হপ্তার আগে সময় দিতে পারবে না। ‘ঠিক আছে’ বলে ওখান থেকে সোজা শিলা রহমানের বাসায় গেলেন আবরার।