আমি নিশ্চিত যে ভয়ঙ্কর কোনও বিপর্যয়ের কারণে খালগুলো সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে এবং পূর্ববর্তী মার্শিয়ান রাজবংশের যে পতন শুরু হয়েছিল তার পেছনে ওই করিডর যাকে আমরা শূন্য বলে জানি, তার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
আমরা নিশ্চিতভাবে এটাও জানি, ক্যানাল গ্র্যান্ড বহু আগেই ওই করিডরকে গ্রাস করে চলে গেছে, এবং বর্ণালিবীক্ষণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় মহাখালটির কোথাও জমা আছে মহামূল্যবান রেটনাইট যার বৈজ্ঞানিক নাম কেমিক্যাল এক্স। কেমিক্যাল এক্স আজও মানব জাতির সর্বাধিক প্রত্যাশার বস্তু। আমার কোনই সন্দেহ নেই একদিন অবশ্যই এই মহামূল্যবান বস্তুটি আবিষ্কার হবে এবং জানা যাবে শূন্যের সকল রহস্য।
ক্রামার জানে ইন্টারপ্ল্যানাটেরী কাউন্সিলে নয়জন সদস্যের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে চোদ্দ কিলোগ্রাম রেটনাইট সংরক্ষিত আছে। রেটনাইট এক ধরনের ড্রাগ, মেন্টালস্টিমুল্যান্ট, ঠিকমত ডোজ নিলে মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি বাড়িয়ে দেয় হাজার গুণ। রেটনাইট-এর ডোজ যে নিতে পারে সে পরিণত হয় সুপার ইন্টেলেকচুয়ালে।
ক্রামার এই পরশমণির সন্ধানই চায়। চায় কারণ রেটনাইট তার জন্য সাফল্যের দ্বার খুলে দেবে। তাকে আর ছোটখাট চুরি বা ঠগবাজী করতে হবে না, পুলিশের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেও হবে না।
হেলমেটের চিবুকের দিকে একটা বোতামে চাপ দিল ক্রামার। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্শিয়ান চুরুট বেরিয়ে এল একটা র্যাক থেকে, টুপ করে ওর ঠোঁটের ওপর পড়ল। খুদে একটা তাপপ্রবাহ ওটাকে ছুঁয়ে গেল, জ্বলে উঠল চুরুট। ঘাড়ের পেছনের এগজস্ট বালব্ ফুলে উঠল ধোঁয়া বের করে দেয়ার জন্য। চুরুট ফুঁকতে ফুঁকতে হেঁটে চলল ক্ৰামার।
প্ল্যানের সূচনাপর্ব ক্রামারের মাথায় এসেছিল অদ্ভুত উপায়ে। ফাগান্ডার ছোট এক কিউরিও শপে সে পুরানো একটা ফুলদানি কিনেছিল। ফুলদানিটার একপাশে ছিল কিছু বর্ণমালা, অন্যপাশে ছন্দহীন একটা কবিতা।
আশ্চর্য হয়ে ক্রামার আবিষ্কার করল বর্ণমালা আর কবিতা দুই মিলে ইঙ্গিত করছে ‘ব্যুরো অভ স্ট্যান্ডার্ডস’-এর প্রাচীন এক পার্চমেন্টকে।
ক্রামার পরদিন রাতে লুকিয়ে থাকল গ্যালারিতে। ‘একশো ছাব্বিশটা গ্লাসকেস থেকে বাছাই করে একটা বিশেষ বই চুরি করল সে। ওটার মধ্যেই শূন্যের সকল রহস্য নিহিত, জানত ও। কিন্তু বই চুরির ব্যাপারটা শিগগিরই জানাজানি হয়ে যাবে যদি হোম ভাল্লাকে চিরতরে সরিয়ে না দেয় সে। হোম ভাল্লা মার্শিয়ান ভাষাবিজ্ঞানী। বহুবছর গবেষণায় নিয়োজিত থাকার পর কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছে অচিরেই সে প্রাচীন মার্শিয়ানদের সকল পুস্তকের মর্মার্থ উদ্ধার করবে।
সুযোগের সন্ধানে থাকল ক্রামার। জানল হোম ভাল্লা ছুটি কাটাতে কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাবে। তারপর সে একদিন ভাল্লার বাড়িতে ঢুকে হিট গানের আঘাতে ভাল্লাকে মেরে লাশটাকে লুকিয়ে ফেলল নগরীর পরিত্যক্ত টিউবগুলোর একটাতে।
কিন্তু ব্ল্যানচার্ড? হ্যাঁ, ব্ল্যানচার্ড সম্ভবত তিনটে ঘটনার মধ্যে কোনও কু খুঁজে পাবে: চুরি যাওয়া বই, হোম ভাল্লার মৃত্যু এবং ক্রামারের অন্তর্ধান 1 কিন্তু সব জানতে ওরও সময় লাগবে। ইতিমধ্যে ক্রামার আইনের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
হাঁটার সময় খালটাকে ভাল করে লক্ষ করল ক্রামার। ধারাল ব্লেডের মত সোজা চলে গেছে গ্র্যান্ড ক্যানাল সামনের দিকে। দেয়ালগুলো খাড়া, লাল পাথরের। করাতের মত কালো, খাঁজকাটা দাগ দেখল সে মাটিতে | শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ, জানে ক্রামার।
শূন্যের রহস্য জানার জন্য কত অভিযাত্রী এই পথ পাড়ি দিয়েছে কে জানে, কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ থেকেছে। যদি শূন্যের গর্ভে রেটনাইট থেকেই থাকে তা হলে কোন্ সেই শক্তি সকল অনুপ্রবেশকারীদের গ্রাস করে নিচ্ছে?
চুরি করা বইটা ক্রামারকে হতাশই করেছে। গোলক ধাঁধার মত অসংখ্য খাল আঁকা আছে বইয়ের মানচিত্রে, কিন্তু আসল রহস্য সম্পর্কে একটা কথাও উল্লেখ নেই।
দুপুরের দিকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামল ক্রামার। আধঘণ্টা পর আবার যাত্রা শুরু করল। কিছুদূর এগোবার পর ওর চোখের ওপর ‘ভিশন প্লেট’-এ ম্লান একটা আলো জ্বলে উঠল।
ভয়ের ঠাণ্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল ক্রামারের শিরদাঁড়া বেয়ে। ভিশন প্লেটে একটা লাল দেয়াল আর বড় একটা দরজা দেখতে পেল সে। ওই দরজা পেরিয়ে এসেছে সে বহুক্ষণ আগে। ক্রামার দেখল খুলে গেল দরজাটা, স্পেসসুট পরিহিত এক লোক আবির্ভূত হলো। ক্রিস্টাল হেলমেট মাথায় তার, চেহারা স্পষ্ট চেনা গেল। ব্ল্যারচার্ড!
পুলিশ ইন্সপেক্টর ব্ল্যানচার্ড মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসল, বালু পরীক্ষা- করছে। হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াল সে, দ্রুত পা বাড়াল সামনে।
গালি দিল ক্রামার। দু’ঘণ্টাও হয়নি হোম ভাল্লাকে সে খুন করে এসেছে, এরই মধ্যে ধূর্ত লোকটা ওর পিছু লেগে গেল? এত দ্রুত সে কী করে এখানে হাজির হলো! ক্রামার নিশ্চয়ই কোনও চিহ্ন ফেলে এসেছে।
আতঙ্কের একটা ঢেউ মুহূর্তের জন্য গ্রাস করল ক্রামারকে। পরক্ষণে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনল সে। শুয়ে পড়ল বালুতে, খাবার ট্যাবলেট চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে পড়ল একটু পরই।
ভোরের আগে ঘুম ভেঙে গেল ক্রামারের। আবার এগোতে শুরু করল অন্ধকারে। কিন্তু সূর্যের প্রথম আলো গ্র্যান্ড ক্যানালে প্রবেশ করতেই তিনটে কোয়ানথ্র ওকে আক্রমণ করে বসল।