তাহলে অন্য কোনদিন—
আবারও বলছি আমি চাই না কেউ আমাকে বিরক্ত করুক। এখন বা অন্য কোন সময়। গুড ইভনিং মি,- বলে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল হেলেন।
বেকুব বনে গেল ভিনসেন্ট। তারপর রাগ হলো খুব। তার মুখের ওপর এভাবে। দরজা বন্ধ করে দেয়া? কেউ সলি ভিনসেন্টকে অপমান করে পার পায়নি। অতীতে পায়নি, এখনও পাবে না। মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে ভিনসেন্ট কি জিনিস। রাগে ফুলতে ফুলতে বাড়ি ফিরে এল ভিনসেন্ট। ওরকম মেয়ে হলেও তার চলবে। পুরুষ মানুষের টাকা থাকলে বিয়ে করা আবার সমস্যা নাকি?
টাকা! হ্যাঁ, মেয়েটার অনেক টাকা আছে। নিজের চোখে দেখেছে ভিনসেন্ট। নিশ্চয়ই ওই ক্রেটগুলো বোঝাই সোনার মোহরে। হেলেন ক্রেটের ভেতরে মোহর লুকিয়ে রেখেছে কম্যুনিস্টদের ভয়ে। কম্যুনিস্টরা জানতে পারলেই মোহরগুলো কেড়ে নেবে। কিন্তু ভিনসেন্ট নিচ্ছে না কেন? কে তাকে সাধু সেজে বসে থাকতে বলেছে? বিশেষ করে এত বড় অপমানের পরেও।
প্ল্যানটা সাথে সাথে মাথায় এল। শহরে গিয়ে কার্নি আর ফ্রমকিনকে খবর দিলেই হলো। ওরা সকল কাজের কাজী। মেয়েটা বাড়িতে একা! তিন মাইলের মধ্যে আর কেউ নেই। ঘটনা ঘটার পরে কেউ কোন সন্দেহও করবে না। ভাববে কম্যুনিস্টরা এসে মেরে রেখে গেছে মেয়েটাকে। যাবার সময় লুঠ করে নিয়ে গেছে সোনার মোহর।
পরদিন কার্নি আর ফ্রমকিনকে খবর দিল ভিনসেন্ট। বলল, রাত নটার মধ্যে বাসায় চলে আসতে। কাজ আছে। সাক্ষাতে বাকি কথা হবে।
কার্নি আর ফ্রমকিন যথাসময়ে হাজির হয়ে গেল ভিনসেন্টের বাড়িতে। ভিনসেন্ট তখনও বিষয়টি নিয়ে ভাবনায় মশগুল। তার চেহারা দেখেই কার্নি বুঝতে পারল কিছু একটা ভজকট আছে।
কি ব্যাপার? জানতে চাইল কার্নি।
হাসল ভিনসেন্ট। তোমাদের গাড়ি ঠিক আছে তো? কিছু মাল নিয়ে যেতে হবে। শহরে।
কি মাল? বলল ফ্রমকিন।
তা এখন বলা যাবে না। আমি মাল নিয়ে আসব।
কোথায় ওটা?।
মাল আনতেই বেরুচ্ছি।
ও ফিরে না আসা পর্যন্ত বাড়িতে ওদেরকে বসে থাকতে বলে গেল ভিনসেন্ট। বলল, আধাঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবে। তারপর বেরিয়ে পড়ল।
ওদেরকে বলেনি ভিনসেন্ট কোথায় যাচ্ছে। ওরা অনুসরণ করে কিনা বোঝার জন্য বাড়িটাতে বার দুয়েক চক্কর দিল ভিনসেন্ট। কার্নিরা পিছু নেয়নি বোঝার পরে হনহন করে এগোল হেলেনের কটেজের দিকে। বেডরুমের জানালায় আলো। জুলছে। এবার হেলেনকে মজা দেখিয়ে ছাড়বে ভিনসেন্ট! সে কি জিনিস বুঝবে মেয়েটা।
হেলেনের কি দশা করবে ভেবে মুচকি হাসছিল ভিনসেন্ট। হঠাৎ খেয়াল করল নিভে গেছে বেডরুমের আলো। তার মানে ঘুমাবে হেলেন। ঘুমাবে মোহরের বিছানায়। ভালই হলো। ভিনসেন্টকে কড়া নাড়তে হবে না। দরজা ভেঙে ভেতরে টুকবে। আঁতকে উঠবে হেলেন।
সদর দরজা ভাঙতে হলো না। খোলাই ছিল! পা টিপে টিপে এগোল ভিনসেন্ট। চাঁদের আলো গলে পড়ছে জানালা দিয়ে। প্রায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে সব কিছু। হঠাৎ গলার কাছটা ভারভার ঠেকল ভিনসেন্টের। খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লে এমন হয় তার।
বেডরুমের দরজা খুলে ফেলল ভিনসেন্ট। জানালার পর্দা তোলা বলে চাদের আলোয় উদ্ভাসিত ঘর। আলো পড়েছে বিছানায় শুয়ে থাকা হেলেনের ওপর। তার গা ভর্তি সোনার মোহর। চাদের আলোয় ঝিলমিল করছে। এমন সময় হেলেনের বরফসবুজ চোখজোড়া খুলে গেল। ভিনসেন্টের সাথে চোখাচোখি হলো। সেই ফাঁকা দৃষ্টি চোখে। হঠাৎ অদ্ভুত একটা পরিবর্তন শুরু হয়ে গেল। সবুজ আগুনের মত জ্বলজ্বলে হয়ে উঠল চোখজোড়া। হাত বাড়িয়ে দিল হেলেন। ডাকছে ওকে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ভিনসেন্ট। হঠাৎ পচা কাদামাটির গন্ধ ভক্ করে লাগল নাকে। মুহূর্তে চোখের সামনে থেকে নেই হয়ে গেল হেলেন। পরক্ষণে পেছন থেকে একটা ধাক্কা খেল। ভিনসেন্ট। হুমড়ি খেয়ে পড়ল বিছানায়। বিছানা কোথায়? এ তো পচা কাদা! উঠে বসতে গেল ভিনসেন্ট, হেলেন চট করে ওর হাত ধরে ফেলল, মুচড়ে গিয়ে গেল পিঠের ওপর। যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল ভিনসেন্ট। ধস্তাধস্তি করতে লাগল। মেয়েটার গায়ে কি শক্তি! ওর সাথে কিছুতেই পেরে উঠছে না ভিনসেন্ট। মেয়েটা ঠাণ্ডা, শক্ত কি একটা জিনিস দিয়ে যেন বাড়ি মারল ওকে। আমার পিস্তল, ভাবল ভিনসেন্ট নিয়ে গেছে পকেট থেকে।
একটু পরে গরম একটা তরল ধারা, গড়িয়ে পড়তে শুরু করল ভিনসেন্টের মুখ বেয়ে। রক্ত! গা গুলিয়ে উঠল মেয়েটা ওর রক্ত চেটে খাচ্ছে দেখে।
হেলেন খাটের সাথে খুব শক্তভাবে বেঁধে ফেলেছে ভিনসেন্টকে। নড়তে পারছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর। বাতাসে পচা মাটির গা গোলানো গন্ধ। শুধু বিছানা নয়, মেয়েটার গা থেকেও আসছে। মেয়েটা হাসছে।
শেষ পর্যন্ত তুমি এলে, অ্যাঁ? ফিসফিস করে বলল মেয়েটা। তোমাকে আসতেই হলো, না? বেশ করেছ এসেছ। এখন থেকে তুমি এখানে থাকবে। আমি তোমাকে আমার পোষ্য করে রেখে দেব। তুমি বেশ মোটাতাজা আছ। গায়ে অনেক রক্ত। তোমাকে দিয়ে অনেক দিন চলে যাবে আমার।
মেয়েটার মুখ থেকে কথা বলার সময় তীব্র দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে। মুখ সরিয়ে নিল ভিনসেন্ট। আবার হেসে উঠল মেয়েটা।
এরকম প্ল্যানই করেছিলে তুমি, তাই না? আমি জানি তুমি কেন এসেছ। মোহরের জন্য। সোনার মোহর আর কাদা মাটি নিয়ে এসেছি আমি আমার দেশ থেকে। ওর ওপর সারাদিন ঘুমাই আমি জেগে উঠি রাতের বেলা। আর রাতে যখন জেগে উঠব তখন তুমি থাকবে এখানে। কেউ আমাদের খোঁজ পাবে না। বিরক্ত করতেও আসবে না। তাগড়া শরীর তোমার। আমার খিদে মিটবে ভাল ভাবেই।