এসব ভেবে রাতে ভালভাবে ঘুমাতে পারল না ভিনসেন্ট। তবে বালিশের নিচে তার পূরানো ব্যবসার ছোট একটি স্যুভেনির কেম রেখে দিল সে তা কেউ ঝুলতে পারবে না।
পরদিন ভিসেন্ট সিদ্ধান্ত নিল নতুন প্রতিবেশীর ওপর নজর রাখবে। কারণ তার সন্দেহ হচ্ছে মহিলার প্রতি। মহিলা হাঙ্গেরিয়ান উদ্বাস্তু হলেও কে বলতে পারবে তাকে প্ল্যান করে এখানে পাঠানো হয়নি?
সকাল সকাল শহরে গেল ভিনসেন্ট। দামী একজোড়া বিলকিউলার কিনে আনল। তারপর নজর রাখতে শুরু করল শূলজের বাড়ির দিকে।
রান্নাঘরের জানালা দিয়ে শূলজের বাড়ি পরিষ্কার দেখা যায়। একটা ছোট ভ্যান নতুন প্রতিবেশীর জিনিসপত্র নিয়ে এল। জিনিস বলতে কতগুলো বাক্স এবং ক্রেট। ভ্যানের লোকজন ধরাধরি করে নামাল বাক্সপেটরা। মনে হলো বেশ ভারী। বাক্সের মধ্যে কি সোনার মোহর আছে? ভাবল ভিনসেন্ট। অপেক্ষা করতে লাগল বাড়ির নতুন মনিবণী কখন আসে দেখার জন্য। ভ্যান চলে গেল কিন্তু মহিলার দেখা মিলল না। সমস্ত বিকেল বিনকিউলার চোখে ঠেকিয়ে রাখতে রাখতে হাত এবং চোখ দুইই ব্যথা হয়ে গেল। ভিনসেন্ট বিনকিউলার রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রান্নায়। খিদে লেগেছে। একটা স্টিক ভাজল সে। খেল। তারপর লেকের পাড়ে তাকাল। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শূলজের বাড়ির জানালায় জ্বলে উঠেছে আলো। তার মানে মহিলা এসেছে। কখন এল? ভিনসেন্ট যখন রান্নায় ব্যস্ত নিশ্চয়ই তখন।
আবার বিনকিউলার চোখে তুলল ভিনসেন্ট। যে দৃশ্য দেখল তাতে বিনকিউলারটি তার হাত থেকে প্রায় খসে পড়ে যাচ্ছিল।
মহিলার বেডরুমের পর্দা ওঠানো। মহিলা শুয়ে আছে বিছানায়। গায়ে কিছু নেই। সোনার মোহরে সমস্ত শরীর ঢাকা।
চোখ কচলে আবার বিনকিউলার অ্যাডজাস্ট করল ভিনসেন্ট। না, ভুল দেখেনি সে। সত্যি মহিলার গা ভরা সোনার মোহর, বাতির আলোতে ঝলকাচ্ছে। লাল টকটকে চুল তার, ডিম্বাকৃতি, মুখখানা বিষণ্ণ, বড় বড় চোখ, উঁচু চোয়াল। ঠোঁটজোড়া দেখে মনে হলো হাসছে। সোনার মোহর ভরা গায়ে হাত বোলাচ্ছে।
ভিনসেন্ট টের পেল তার গলা শুকিয়ে এসেছে, দপদপ লাফাচ্ছে কপালের একটা শিরা। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকল লম্বা, ফর্সা মোহরে ঢাকা শরীরটার দিকে। অনেকক্ষণ পরে বিনকিউলার নামাল ভিনসেন্ট। জানালার পাল্লা বন্ধ করল। তারপর থম মেরে বসে রইল! সে রাতেও ঘুম হলো না তার।
পরদিন সকালে ইলেকট্রিক রেজর দিয়ে দাড়ি কামাল ভিনসেন্ট। লোশন মাখল গায়ে। নতুন টাই পরল। তারপর মুখে চওড়া হাসি ধরে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোল শূলজের কটেজের দিকে।
কটেজের দরজায় নক করল ভিনসেন্ট।
কোন সাড়া নেই।
আবার কড়া নাড়ল ভিনসেন্ট।
কেউ সাড়া দিল না।
ডজনখানেক বার ঘন ঘন কড়া নেড়েও লাভ হলো না কোন। কটেজের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ। ভেতর থেকে কারও সাড়া শব্দ মিলল না।
দরজা ভেঙে ঢুকতে পারে ভিনসেন্ট। মহিলাকে সত্যি কেউ পাঠিয়েছে কিনা জানে না সে। অবশ্য পকেটে ছোট্ট স্যুভেনিরটা আছে তার। যে কোন ঘটনার জন্য প্রস্তুত। মহিলার সোনার মোহর মেরে দেয়ার ইচ্ছে তার নেই। মহিলাকে খুব পছন্দ হয়েছে তার। সত্যিকারের কাউন্টেস হবে হয়তো। এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে মন্দ হয় না। তবে জোর করে ঢোকা ঠিক হবে না ভেবে ফিরে গেল ভিনাসেন্ট। সারাদিন জানালার ধারে বসে রইল সে। অপেক্ষা করল। মহিলার দেখা মিলল না। সম্ভবত কেনাকাটা করতে শহরে গেছে। তবে ফিরে আসবে। আর ফিরে আসলেই
এবারও হেলেন কখন বাড়ি ফিরল দেখা হলো না তিনসেন্টের। ওই সময় সে বাথরুমে ছিল। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। বাথরুম থেকে ফিরে এসে নিজের জায়গায় বসতেই ভিনসেন্ট দেখতে পেল হেলেনের বাড়িতে আলো জ্বলছে। এবার আর দ্বিধা করল না ভিনসেন্ট। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল হেলেনের বাড়িতে। সদর দরজায় কড়া নাড়ার মুহূর্তে একটু ইতস্তত করল। শেষে টোকা দিল দরজায়। দরজা খুলে দিল হেলেন।
দোরগোড়ায় দাড়িয়ে হেলেন, চেয়ে আছে অন্ধকারে। বাতির আলো পড়েছে তার লাল চুলে। জ্বলজ্বল করছে। পরনে লম্বা গাউন।
বলুন? বিড়বিড় করল হেলেন।
ঢোক গিলল ভিনসেন্ট। মেয়েটা এত সুন্দরী বুঝতে পারেনি। এই মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে বুঝে শুনে।
আমার নাম সলি ভিনসেন্ট, অবশেষে বলল সে। আমি আপনার প্রতিবেশী। লেকের ওধারে থাকি। শুনলাম আপনি নতুন এসেছেন এখানে। তাই পরিচয় করতে এলাম।
তো?
হেলেন তাকিয়ে আছে ভিনসেন্টের দিকে। হাসছে না। নড়ছে না। অস্বস্তি লাগল ভিনসেন্টের।
আপনি হেলেন, তাই না? শুনেছি আপনি হাঙ্গেরিয়ান। এদিকে বোধ হয় এই প্রথম এসেছেন! এখনও থিতু হতে পারেননি। আর–
আমি এখানে ভালই আছি। বলল হেলেন। এবারও হাসল না সে, নড়াচড়াও করল না। স্রেফ মূর্তির মত তাকিয়ে আছে। ঠাণ্ডা, কঠিন, সুন্দরী একটি পাষাণ মূর্তি।
শুনে খুশি হলাম। আপনি আমার বাড়িতে একবার পা দিলে ধন্য হব। আমার বাড়িতে টোকে ওয়াইন আছে, আছে বড় একটি রেকর্ড প্লেয়ার, বেশ কিছু ক্লাসিক মিউজিকসহ। এমনকি সেই বিখ্যাত সঙ্গীত হাঙ্গেরিয়ান ব্যাপসডির দুর্লভ কালেকশনও রয়েছে আমার কাছে। এ ছাড়া।
হঠাৎ হেসে উঠল মেয়েটা। হাসির দমকে গোটা শরীর কাঁপছে, কিন্তু বরফ-সবুজ চোখজোড়া হাসছে না তার। অবশেষে হাসি থামাল হেলেন। বরফ ঠাণ্ডা গলায় বলল, নো। খ্যাঙ্কিউ। আমি এখানে ভাল আছি। আমাকে কেউ বিরক্ত না করলেই বরং খুশি হব।