আচ্ছা, ওর বিস্ফারিত চোখের মধ্যে যদি গরম শিকটা ঢুকিয়ে দেয়া যায়?
ঠিক এই ভাবে।
ওয়াক থুঃ, মাংস পোড়ার কি বিশ্রী গন্ধ!
একটু পরে নড়াচড়া থেমে গেল লোকটার। চিৎ হয়ে পড়ে থাকল সে মাটিতে। চোখের জায়গায় মণি নেই, লাল ঘা দগদগ করছে। আমার গা গুলিয়ে উঠল। তবে আনন্দও হচ্ছে বেশ। খেলাটা জমেছিল চমৎকার। সুযোগ পেলে এরকম খেলা অরও খেলব বড়দের নিয়ে, একমত হলাম আমি আর টুলু।
বড়দের আমরা ঘৃণা করি।
ওদের কষ্ট দিতে ভাল লাগে আমাদের।
ভাল লাগে গায়ে আগুনের ছ্যাকা দিতে।
[নিরম্যান কাউফম্যানের ‘ফ্লেইম’-এর ছায়া অবলম্বনে]
উদ্বাস্তু
শ্রমিক দিবসের পর থেকেই হঠাৎ ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করল। সামার কটেজের লোকজন ফিরে যেতে লাগল যে যার বাড়ি। লস্ট লেকে জমতে শুরু করল বরফ। ওখানে সলি ভিনসেন্ট ছাড়া কেউ থাকে না। ভিনসেন্ট মোটাসোটা মানুষ। বছরখানেক আগে, বসন্তে লেকের পাড়ের বাড়িটি কিনেছে। সারাটা গ্রীষ্ম তার কেটেছে স্পাের্টস শার্ট পরে। কেউ কখনও তাকে শিকারে যেতে বা মাছ ধরতে দেখেনি। যদিও প্রতি হায়, ছুটির দিনে শহর থেকে বন্ধুবান্ধব এনে বাড়িতে বসে ফুর্তিফার্তি করে ভিনসেন্ট। বাড়ি কিনেই সে দরজার সামনে বিরাট এক সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে-সনোতা বীচ।
শহরে খুব কম আসত ভিনসেন্ট। একদিন দেখা গেল সে ডকস বার-এ ঢুকেছে। তারপর মাঝে মাঝে সে আসতে শুরু করল, ব্যাক রুমে নিয়মিত জুয়াড়ীদের সাথে কার্ড খেলল।
পোকারটা ভালই খেলে ভিনসেন্ট, সুগন্ধী, দামী সিগার খায়। কিন্তু নিজের সম্পর্কে বলে না কিছুই। একদিন স্পেকস হেনেসি তাকে সরাসরি একটা প্রশ্ন করে বসলে জানায়, সে এসেছে শিকাগো থেকে। আগে ব্যবসা করত। এখন কিছুই করে না। তবে কিসের ব্যবসা করত জানায়নি ভিনসেন্ট।
ভিনসেন্ট হয়তো মুখে সব সময় তালা দিয়েই রাখত যদি না সেদিন স্পেস হেনেসি তাকে সোনার মোহরগুলো দেখাত।
এ জিনিস দেখেছে কেউ কখনও আগে? জিজ্ঞেস করে হেনেসি তার বন্ধুবান্ধবদের। কেউ কিছু বলে না। তবে ভিনসেন্ট একটা মোহর তুলে নেয় টেবিলের ওপর থেকে।
জন্মদিন, তাই না? বিড়বিড় করে ভিনসেন্ট। দাড়িঅলা লোকটা কে-বিসমার্ক?
খিকখিক হাসে স্পেকস হেনেসি। এবার ধরা খেয়ে গেছ, বন্ধু। ওটা বুড়ো ফ্রাঙ্ক জোসেফের ছবি। অস্ট্রোহাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের নেতা ছিল, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে। ব্যাঙ্কে এই তথ্যটাই দিয়েছে ওরা আমাকে ?
কোত্থেকে পেয়েছ এ জিনিস? স্লট মেশিনে? জানতে চায় ভিনসেন্ট। এদিক ওদিক মাথা নাড়ে হেনেসি। একটা ব্যাগে। বোঝাই ছিল সোনার মোহরে।
এই প্রথম ভিনসেন্টকে কোন ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে উঠতে দেখে সবাই। মোহরটা আবার হাতে নিয়ে মোটা আঙুলের মধ্যে ঘোরাতে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করে, ঘটনাটা বলবে আমাকে?
গল্পবাজ হেনেসির উৎসাহের অভাব নেই। খুব অদ্ভুত একটা ব্যাপার। বলতে শুরু করল সে। গত বুধবার অফিসে বসে আছি। এমন সময় এক মহিলা এসে জানতে চাইল আমি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করি কিনা এবং বিক্রি করার মত কোন লেক প্রপাটির সন্ধান জানা আছে কিনা আমার। বললাম, অবশ্যই জানা আছে। লস্ট লেকের ধারে শূলজ কটেজটি বিক্রি হবে। আসবারপত্রসহ।
মহিলা দেখতে চাইল বাড়িটি। বললাম, কোন অসুবিধা নেই। কাল দেখাতে পারব। কিন্তু মহিলা বলল, সে ওই রাতেই বাড়ি দেখতে চায়।
আমি নিয়ে গেলাম তাকে বাড়ি দেখাতে। বাড়ি দেখে পছন্দ হয়ে গেল তার। বলল, কিনবে। নির্দেশ দিল কাগজপত্র ঠিক করতে। সে সোমবার রাতে এল এক ব্যাগ বোঝাই মোহর নিয়ে। ত ব্যাঙ্কের হ্যাঙ্ক ফেলচকে ডেকে এনেছিলাম দেখাতে। মোহরগুলো নকল কিনা। সে বলল সব ঠিক আছে। খিকখিক হাসল হেনেসি। তখন আমি ফ্রানজ জোসেফের নামটা জানতে পারি। ভিনসেন্টের কাছ থেকে মোহরটি নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দিল সে। যা হোক, মনে হচ্ছে তুমি নতুন এক প্রতিবেশী পেয়ে যাচ্ছ। শূলজের বাড়ি থেকে তোমার কটেজের দূরত্ব আধা মাইলও না। ভাল কথা, মহিলার নাম হেলেন এস্টারহেজি। সম্ভবত হাঙ্গেরিয়াম রিফুজি ? কাউন্টেস জাতীয় কিছু একটা হবে। হয়তো দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। এমন কোথাও লুকিয়ে থাকতে চায়, যেখানে কমুনিস্টরা তার খোঁজ পাবে না। তবে আমার অনুমান ভুলও হতে পারে। কারণ মহিলা নিজের সম্পর্কে কিছুই বলেনি।
কি পোশাক পরনে ছিল মহিলার? জিজ্ঞেস করে ভিনসেন্ট।
লাখ টাকা দামের পোশাক। হাসে হেনেসি তার দিকে তাকিয়ে। কেন ওকে বিয়ে করার চিন্তা করছ নাকি? ওর টাকার জন্য? তবে মহিলাকে দেখলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে। কথা বলার ঢং অনেকটা অভিনেত্রী শা শা গেবর-এর মত। চেহারাতেও খানিকটা মিল রয়েছে। তবে মহিলার চুলের রঙ লাল। আমি যদি বিয়ে না করতাম, তাহলে
বাড়িতে কবে উঠছে সে? বাধা দেয় ভিনসেন্ট।
বলেনি। তবে দুএকদিনের মধ্যেই হয়তো উঠে যাবে।
হাই তুলে উঠে দাঁড়ায় ভিনসেন্ট।
আরে, চললে কোথায়? খেলা মাত্র শুরু হয়েছে—
ক্লান্ত লাগছে, বলল ভিনসেন্ট। বাড়ি যাব।
বাড়ি ফিরে এল ভিনসেন্ট। তবে সে রাতে ঘুম এল না। সারাক্ষণ নতুন প্রতিবেশীর কথা ভাবল।
নতুন একজন প্রতিবেশী পেয়ে খুশি হয়নি ভিনসেন্ট। সে যতই সুন্দরী হোক না কেন ? ভিনসেন্ট নিজেও এক ধরনের রিফুজি। উত্তর থেকে পালিয়ে এসেছে। শুধু অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু ছাড়া কারও সাথে যোগাযোগ নেই তার। এদেরকে বিশ্বাস করে সে। এরা ছিল তার ব্যবসার সহকারী। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের চেহারা আর দেখতে চায় না ভিনসেন্ট। কখনও নয়। এদের কেউ কেউ প্রতিহিংসা পরায়ণ আর ভিনসেন্টের প্রাক্তন ব্যবসায় প্রতিহিংসা ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে।