এলিস আর্থারের জন্য খুব যত্ন করে ভাল ভাল সব খাবার তৈরি করেছে। তরল পানীয় হিসেবে রেখেছে জিন আর বীয়ার। এমনকি চমৎকার সিগারও জোগাড় করেছে। সিগারটা সম্ভবত ওর স্বামীর, ভাবল আর্থার। এলিস যত্ন করে আগুন ধরিয়ে দিল সিগারে। বড় একটা টান দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল আর্থার। মুখে মৃদু হাসি। যা যা আশা করেছে সব ঠিক সেভাবে ঘটছে দেখে তৃপ্তিবোধ করছে সে .. এলিস ওর পাশেই বসা। আস্তে একটা হাত বাড়িয়ে দিল সে এলিসের দিকে। মৃদু আদর করতে করতে চুমু খেল। উঠে দাঁড়াল এলিস।
তোমার সিগারটা শেষ করো, আর্থার। এই ফাঁকে আমি পোশাকটা বদলে ফেলি। মোহিনী কণ্ঠে বলল এলিস, চোখ দুটো চকচক করছে। স্পষ্ট আমন্ত্রণ সেখানে। আমি যখন ডাকৰ, চলে এসো ওপরে।
তা আর বলতে, সোনামণি, গদগদ কণ্ঠে বলল আর্থার।
তবে বেশি দেরী কোরো না কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা সইতে পারব না আমি। গালে টোল ফেলে নিতম্বে ঢেউ তুলে চলে গেল এলিস।
মিনিট দুই পর, এলিস আবার ফিরে এল। নতুন পোশাক পরনে। এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল! অবাক হলো আর্থার। কিন্তু অতশত ভাবার সময় কোথায়। তার? সে তাড়াহুড়ো করে জ্বলন্ত সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলল কার্পেটের ওপর। কার্পেট পুড়ে যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই, ও এখন প্রেমময় আলিঙ্গনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আর উত্তেজিত ছিল বলেই খেয়াল করেনি মুখ নিচু করে ভেতরে ঢুকেছে এলিস। এলিস রুমে ঢোকার সাথে সাথে একরাশ ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেছে ভেতরে। হাত বাড়াল আর্থার। মুখ তুলল এলিস। আতঙ্কে জমে গেল সে। এলিস কোথায়-তার সামনে দাঁড়ানো এটা এডিথের ভূত। সাদা, মরা মুখটা বিকৃত ভঙ্গীতে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এডিথ আরও কাছে এগিয়ে এল, হাড্ডিসার বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল ওর ঘাড়। ঠাণ্ডা বরফের তীব্র ছ্যাকা খেল আর্থার! এডিথের প্রাণহীন চোখ দুটো যেন ওকে ঠাট্টা করছে। রক্তশূন্য ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে পচা মাংসের বিকট গন্ধ বেরিয়ে এল।
এই সময় ওপর থেকে এলিসের নরম কণ্ঠ ভেসে এল, এখন তুমি ওপরে আসতে পারো, আর্থার ডার্লিং। সাথে সাথে সামনের বিকট মূর্তিটা হাওয়া হয়ে গেল। কিন্তু আর্থারের মনে হলো এখনও যেন হাড্ডিসার হাত দুটো তার ঘাড় জড়িয়ে আছে, কবর থেকে উঠে আসা ঠাণ্ডা আর পচা গন্ধটা সিগারের মিষ্টি গন্ধ। ছাপিয়ে এখনও যেন নাকে এসে লাগছে।
হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পেল আর্থার। হলওয়ে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছুটল সে। মনেই পড়ল না দোতলায় তরবারির মত ধারাল শরীর নিয়ে একজন তীব্র কামনায় তার জন্য অপেক্ষা করছে। দরজায় ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনে এলিস নিচে এসে অবাক হয়ে দেখল দরজা খোলার জন্য পাগলের মত টানাটানি করছে আর্থার। ধড়াস করে পাল্লা দুটো খুলে যেতেই একলাফে সে বেরিয়ে পড়ল বাইরে। এমন জোরে দৌড়াল যেন নরকের সব কটা পিশাচ একযোগে তাড়া করেছে ওকে।
এলিসের সঙ্গে আর্থারের সম্পর্ক ওখানেই শেষ। বলাবাহুল্য, পরবর্তী একটা সপ্তাহ আর্থার ঘর থেকেই বেরুল না। প্রতিটি সন্ধ্যা মদ খেয়ে ভুলে থাকতে চাইল ভৌতিক স্মৃতিটাকে। দিন দিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠল। খদ্দেরদের সাথেও এমন খারাপ ব্যবহার শুরু করল যে, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বলাবলি শুরু করল শহরে যদি কসমেটিকসের আরেকটা দোকান থাকত তাহলে তারা ভুলেও আর্থার নোয়কসের। দোকানে পা দিত না। খুব দ্রুত খদ্দেরের সংখ্যা কমতে লাগল। কিন্তু সেদিকে আর্থারের কোনও হুঁশ নেই। সে সারাদিন বাড়িতে পড়ে থাকে আর মদ খায়। কিন্তু যেদিন তার চীফ অ্যাসিস্ট্যান্ট জানাল ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়, আর্থারের। চৈতন্যোদয় হলো। বুঝল কিছু একটা করা দরকার। নইলে এভাবে চলতে থাকলে নিজেই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নিল ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে লন্ডন চলে যাবে। ওখানে নিশ্চয়ই এডিথের প্রেতাত্মা তাকে তাড়া করবে না। লন্ডনে সে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবে। বড়দিনের সময় আর্থার ওর ব্যবসাপাতি সব বিক্রি করে লন্ডন চলে এল। চেয়ারিং ক্রস স্টেশনের কাছে ছোট একটা হোটেলে উঠল কিছুদিনের জন্য। বড়দিন এখানে কোনও ঝামেলা ছাড়াই গেল। কারণ হোটেলে যে সব মহিলা ছিল এদের কারও বয়সই চল্লিশের নিচে নয়। আর আর্থার তাদের প্রতি কোনও আগ্রহও অনুভব করেনি। দিনগুলো ওর কাটল রুমে বসে মদ গিলে।
ক্রিসমাসের ছুটি শেষ হওয়ার পর ব্যবসা শুরু করার জন্য চেষ্টা শুরু করল আর্থার। ও চাইছিল নিউহাস্টে যে ব্যবসা করুত এখানেও ওরকম কিছু একটা। করত। অনেক চেষ্টার পর সুযোগ মিলল। গ্রীন উইচ এলাকায় ব্যবসা ফেঁদে বসল আর্থার। ব্যবসা শুরু করতে পাই পয়সা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে গেল। কিন্তু ভাগ্যটা ওর। ভালই। দেখতে দেখতে এখানেও জমে উঠল ব্যবসা। পয়সাপাতি ভালই পেতে শুরু করল সে। ধীরে ধীরে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠল ওর।
দোকানের কাজে সাহায্য করার জন্য দুটি মেয়েকে সহকারী হিসেবে রেখেছিল আর্থার। এদের মধ্যে একজন, মেরী থম্পসনের প্রতি সে দুর্বলতা অনুভব করতে লাগল। রক্তের উন্মাদনা কি আর সহজে ঝিমিয়ে পড়ে? আর আর্থার নোয়াকসের মত পরস্ত্রী লোভী নারীসঙ্গ কামনায় ব্যাকুল লোক যে তার সুন্দরী সহকারিণীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বে এ তো খুবই স্বাভাবিক। মেরী তার বাপ মায়ের সাথেই থাকে। কিন্তু আর্থারের দোকানে কাজ করতে হচ্ছে যুদ্ধে আহত পঙ্গু বাপের সংসার চালানোর জন্য।