আর্থারের দোকানে ফিতে আর লেস কিনতে প্রায়ই আসে মিস ম্যাবেল। ম্যাবেল বিধবা। স্বামী গত হয়েছে অনেকদিন। সুন্দরী, তন্বী। লাবণ্যে মুখখানা ঢলঢল, ওকে প্রথম দেখার পরেই আর্থারের বুকে, যাকে বলে প্রেমের তুফান ছুটেছিল। একদিন সে সাহস করে দুরুদুরু বক্ষে ম্যাবেলকে প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলল, বলল ম্যাবেলকে খুব পছন্দ তার, বান্ধবী হিসেবে তাকেই কামনা করে। এহেন প্রস্তাবে ম্যাবেলকে দৃশ্যত বিরক্তিতে সামান্য ভুরু ভঙ্গী করতে দেখা গেলেও তার গভীর নীল চোখের ঝিকিমিকিতে বোঝা গেল প্রস্তাবটা একেবারে ফেলে দিচ্ছে না সে, বিবেচনায় রাখছে। আর্থারের বান্ধবী হতে খুব একটা আপত্তি নেই তার। কিন্তু মুখে বলল, দেখুন, মি. নোয়াকস, আপনার স্ত্রী মারা গেছেন বেশি দিনও হয়নি। এরই মধ্যে অন্য কোনও মহিলাকে বান্ধবী হিসেবে প্রত্যাশাটা কি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? এডিথের কথা বলতেই আর্থার সামান্য কেঁপে উঠল। তবে পরক্ষণে সামলে নিল নিজেকে। কারণ ম্যাবেলের সাগর নীল দুই চোখের প্রশ্রয়কে চিনে নিতে ভুল হয়নি তার। কথা বলার রাজা সে। মেয়েদেরকে পটাতে পারে খুব সহজে। গলায় পুরো এক বোতল মধু ঢেলে সে এবার আবেগমথিত কণ্ঠে বলতে শুরু করল, মাই ডিয়ার ইয়াং লেভী, আপনাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিনই আমার বুকে ঢেউ উঠেছে। প্রচণ্ড ভাললাগায় প্লাবিত হয়েছিল অন্তর। আবেগের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আমি। অনেক চেষ্টা করেছি তীব এই আবেগকে সংযত করতে পারিনি। মানেনি হৃদয়। মনে হয়েছে আমার হৃদয়ের কথাগুলো আপনাকে বলতে না পারলে বুক ফেটে মরে যাব। আপনি যদি আমাকে বান্ধবী হিসেবে একটুক্ষণ সঙ্গ দেন, আপনার পাশে একটু হাঁটার সুযোগ দেন, নিজেকে ধন্য মনে করব আমি। যদি আপনার আপত্তি থাকে প্রকাশ্যে গল্প করতে, তাহলে কি আমরা শহরের বাইরে কোথাও গিয়ে মিলিত হতে পারি না, যেখানে কেউ আমাদের দেখবে না? আমার অব্যক্ত কথাগুলো বলতে পেরে হালকা বোধ করছি, মিস ম্যাবেল। সবই তো শুনলেন আপনি, এরপরেও কি এই ভালবাসার কাঙাল মানুষটিকে আপনার মধুর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত করবেন? কথাগুলো বলে নিজেই চমৎকৃত হলো আর্থার। সাগ্রহে চেয়ে রইল ম্যাবেলের দিকে। ম্যাবেল চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ডান পা হালকাভাবে। মেঝেতে ঘষছে। ইতস্তত একটা ভঙ্গী। যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি বলবে। আর্থার দেখল ওর মসৃণ গাল ধীরে ধীরে রাঙা হয়ে উঠছে। লাজুক এক টুকরো হাসি ফুটে উঠছে মুখে। হার্টবিট বেড়ে গেল আর্থারের। তবে কি সে সফল হতে চলেছে?
চোখ তুলল মার্বেল। ভীরু লাজ সেই চোখে। কেউ আমাদের দেখবে না এমন কোথায় আমরা দেখা করতে পারি? লজ্জা লজ্জা ভাব করে জানতে চাইল সে, যেন পরপুরুষের আহ্বানে এভাবে দ্রুত সাড়া দেয়া প্রগলভতারই পরিচয়।
জয়ের উল্লাস অনুভব করল আর্থার। ইচ্ছে করল একপাক টুইস্ট নাচে। জায়গাটা তার আগে থেকেই চেনা ছিল। কারণ এর আগেও সে ওখানে গিয়েছে। এ্যাবেগকে জায়গাটার রোমান্টিক বর্ণনা দিয়ে জানাল ওখানে কেউ তাদের বিরক্ত করতে আসবে না! এখন ম্যাবেল সাহস করে এলেই হয়। ম্যাবেল মৃদু গলায় বলল, সন্ধেয় সে আর্থারের সঙ্গে ওখানে দেখা করবে।
শহর থেকে দূরে, ছোট নদীটার ওপরের সেতুটাই হচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকাদের অন্তরঙ্গ আলাপনের একমাত্র গোপনীয় স্থান। চমৎকার জায়গাই বেছে নিয়েছে আর্থার। এখানে সত্যি কেউ ওদের বিরক্ত করতে আসবে না। সন্ধ্যায় আগেভাগে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে নতুন প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সে। ম্যাবেল বুদ্ধিমতী মেয়ে। তাই বেশিক্ষণ তার অপেক্ষায় চাতকের মত হাঁ করে থাকতে হলো না আর্থারকে। দেখল ভীরু পদক্ষেপে সে ব্রিজের ওপর দিয়ে আসছে। আনন্দের ষােলো কলা পূর্ণ হলো আর্থারের। খুশিতে সবকটা দাঁত বেরিয়ে পড়ল। ম্যাবেল এল। আর্থারের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়ল। তারপরের ঘটনা সহজেই অনুমেয়। সেই দীর্ঘ কামকলার কাহিনী বয়ান করে পাঠককুলের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না।
এভাবে দিনের পর দিন চলতে লাগল অভিসার। নির্ধারিত সময়ে ম্যাবেল। আসে ওখানে। তারপর দুজনে ঘাসের বুকে শুয়ে শুয়ে ভালবাসার গল্প বলে, প্রেম করে। এমনি করে দিব্যি হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় একটু ছন্দপতন হলো। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে, অথচ ম্যাবেলের এখনও দেখা নেই। আর্থার প্রথমে ভাবল কোনও কাজে হয়তো সে আটকা পড়ে গেছে, তাই আসতে দেরী হচ্ছে। কিন্তু দেখতে দেখতে এক ঘণ্টা গেল, অথচ ম্যাবেলের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। এবার খুব চিন্তায় পড়ে গেল আর্থার। মেয়েটার হলো কি? আসছে না কেন এখনও? নাকি ওকে অপেক্ষায় রেখে মজা পাচ্ছে সে? হয়তো আজ আর আসবেই না! বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে আর্থার যখন ঠিক করে ফেলেছে চলে যাবে, এমন সময় ম্যাবেলকে দেখতে পেল সে। ব্রিজের ওপর দিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছে।
দাড়াও, মজা দেখাচ্ছি তোমাকে, এরকম ভেবে আর্থার একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাড়াল। অপেক্ষা করতে লাগল ম্যাবেল ওদের প্রেমকুঞ্জে এসে দাঁড়ালেই ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চমকে দেবে। ম্যাবেল সোজা হেঁটে এসে ওদের ভালবাসাবাসির জায়গাটায় দাঁড়াল, আর্থারের দিকে পেছন ফিরে আছে সে। হঠাৎ আর্থার বেরিয়ে এল গাছের আড়াল থেকে। মার্বেলকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ওর সরু কোমর জড়িয়ে ধরল সে দুহাতের বেড়িতে।