কোথায় যাচ্ছেন, মিসেস ফেরো? জিজ্ঞেস করল সে।
একটা জিনিস দেখাব আপনাকে, বলল মার্থা।
মার্থার পেছন পেছন রান্নাঘরে গেল অফিসার, পলও গেল। মার্থা টান মেরে একটা ড্রয়ার খুলল, ভেতরে অনেকগুলো কিচেন নাইফ। সবচে ধারাল নাইফটা অফিসারের হাতে দিল সে।
আমিই আপনাদের ফোন করেছি, বলল মার্থা, এ জিনিসটা দিয়ে ওই মেয়েটাকে হত্যা করেছি। আমার লুকোবার কিছু নেই। আপনি এখন আমাকে স্বচ্ছন্দে জেল-হাজতে পুরে দিতে পারেন। আমি যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছি। সুন্দরী এস্টেলের কি দশা আমি করেছি তা আমার স্বামীকে বলার দরকার নেই। আমিই ওকে বলছি।
পলের দিকে ঘুরল মার্থা।
এস্টেলের সাথে আমি নিজেই যোগাযোগ করি, শুরু করল সে। নিজের পরিচয় দিই ওকে, ও তারপর আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়। আমরা তোমাকে নিয়ে গল্প করেছি, এমন গল্প যা ছেলেদের শোনা বারণ, শুধু মেয়েরাই এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। খুব জমে উঠেছিল আমাদের আড়া। কথায় কথায় ওকে জানাই আমি খুব ভাল রান্না করতে পারি। যে কোন জিনিস সুস্বাদে পরিণত করতে আমার জুড়ি নেই। কথা বলতে বলতে আমি অফিসারের হাতের ওই কিচেন নাইফটা হ্যান্ডব্যাগ খুলে বের করি, এস্টেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর গলায় ধারাল ব্লেড চালিয়ে দিই। ডাক্তারী বই পড়ে আগেই জেনে নিয়েছিলাম কোথায় ছুরি চালালে দ্রুত মারা যায় মানুষ। গরু জবাই করার মত রক্ত ঝরছিল এস্টেলের কাটা গলা দিয়ে। তবে অত রক্ত দেখেও আমার বমি-টমি আসেনি। আমি এরপর ওকে টেনে ওর বেডরুমে নিয়ে যাই, শুইয়ে দিই বিছানায়। তারপর একটা কাগজে তোমার নাম-ঠিকানা লিখে ফেলি। কাগজটা নিজেই দেখেছ। এ ধরনের কেসে পুলিশকে কারও না কারও সাহায্য করতেই হয়। তারপর এস্টেলের গা থেকে জামা-কাপড় খুলে বিছানার পাশে একটা চেয়ারে রেখে দিই। তারপর কেটে নিই ওর কিডনি জোড়া।
ব্যস, ব্যস, ম্যাডাম। অনেক হয়েছে। এবার আসুন আপনি, বলল পুলিশ অফিসার, চোখে নির্জলা আতঙ্ক ফুটে উঠেছে, সে মার্থার কনুই চেপে ধরে তাকে নিয়ে হলঘরের দিকে এগোল।
লিভিংরুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় এক ঝটকায় পুলিশ অফিসারের শক্ত মুঠ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল মার্থা, ইজি চেয়ারের ওপর রাখা মোটা মেডিকেলের এইটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল:
এস্টেলকে কাটা ছেড়া করার সময় আমি অ্যানাটমির সাহায্য নিয়েছি, ডিয়ার। অত্যন্ত দক্ষ হাতে কাজটা করেছি আমি। আমার প্রথম অপারেশন! যদি ওই সময় আমাকে দেখতে অভিভূত না হয়ে পারতে না। চমৎকার ভাবে ওর কিডনি দুটো বিচ্ছিন্ন করেছি ওর শরীর থেকে।
ও যা বলছে তা সত্যি? জিজ্ঞেস করল পল।
জ্বী, ছোট্ট করে জবাব দিল অফিসার।
পল ঘুরে দাঁড়াল মার্থার দিকে। তুমি ওর–
কিডনি দুটো কেটেছি, ডিয়ার। হ্যাঁ। হেসে উঠল মার্থা। পরিতৃপ্তি এবং আনন্দের হাসি। কলকণ্ঠে সে হাসতেই লাগল। ওকে এভাবে কখনও হাসতে দেখেনি পল। সে হাসতেই লাগল-হাসতেই লাগল-হাসতে হাসতে বলল মান্ধা, ওটা ছিল আমার জীবনের সবচে সুখের এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। আমি ওর কিডনি কেটে নিয়েছি। আর সে জিনিসই তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছ তুমি! সাপারে!
[মূল: রোজমেরী টিম্পারলির ‘সাপার উইথ মার্থা’]
প্রেতাত্মার প্রতিশোধ
এডিথ তার স্বামী আর্থার নোয়াকসের স্বভাব চরিত্র খুব ভালই জানত। জানত তার মৃত্যুর পরপরই সে পরস্ত্রীর দিকে ঝুঁকে পড়বে। কারণ বিয়ের পর থেকেই সে দেখে এসেছে আর্থার পরস্ত্রীর প্রতি ভীষণ দুর্বল। হিংসায় ছটফট করত এডিথ। কিন্তু শত চেষ্টা করেও স্বামীকে ওই লাইন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি সে। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে সুখ নামের শুক পাখিটির সন্ধান পায়নি সে। এজন্য আর্থারকেই মনে প্রাণে দায়ী করে এসেছে এডিথ। তাই ওর মৃত্যুশয্যায় শেষবারের মত স্বামীকে সতর্ক করে দিয়েছিল-তার মৃত্যুর পর আর্থার যদি কোনও নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তবে এডিথ তাকে ছাড়বে না। সারা জীবনে যা করতে পারেনি মৃত্যুর পর কবর থেকে উঠে এসে সে তাই করবে। আর্থার কোনও মেয়ের দিকে যদি ফিরেও তাকায়, জীবন নরক করে তুলবে এডিথ। যে আগুনে এতদিন দগ্ধ হতে হয়েছে তাকে, সেই আগুনেই পুড়িয়ে মারবে ওকে।
আর্থার নোয়াকসের মুখ দেখে মনে হয়নি স্ত্রীর হুমকিতে তার কোনও ভাবান্তর ঘটেছে। মৃত্যু পথযাত্রী স্ত্রীর শেষ কথা সে প্রলাপ বলেই ধরে নিয়েছিল। এবং স্ত্রী বিয়োগের অল্প কদিনের মধ্যেই দেখা গেল পরস্ত্রীদের পেছনে ঘুরঘুর শুরু করে দিয়েছে। এডিথের মৃত্যুতে আসলে সে মনে মনে উল্লসিতই হয়েছে। কারণ এখন সে মুক্ত ভ্রমরের মত ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়াতে পারবে। বাধা দেয়ার কেউ নেই। কেউ তাকে আর জ্বালাতন করতে আসবে না। চাই কি আবার বিয়ে করেও ফেলতে পারে। অবশ্য এখনই ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীতে মেয়ের অভাব নেই। আপাতত কিছুদিন সে মৌজ করে নেবে।
নিউহাস্টের খুদে শহর সাসেক্স টাউনে জামাকাপড়, কসমেটিকস থেকে শুরু করে চুলের কাটা কিংবা ফিতের জন্য সব মেয়েকেই একটা দোকানে আসতে হয়। কারণ সবেধন নীলমণি দোকান আছেই এই একটা। আর এটার মালিক হচ্ছে আর্থার নোয়াকস। সাসেক্স টাউনের সুন্দরী মহিলারা এই দোকানেই কেনাকাটা করতে আসেন। আর্থারের মনে সাধ জাগে এদের কারও সাথে প্রেম করতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেখতে হ্যান্ডসাম হলেও বিপত্নীক আর্থারের সঙ্গে কোনও কুমারী সম্পর্ক গড়তে ভয় পায়। কারণ সাসেক্স টাউন খুবই ছোট শহর। এখানে প্রেমের মত একটা ব্যাপার কিছুতেই গোপন থাকবে না। আর বিপত্নীক কোনও পুরুষের সাথে মাখামাখির কথা একবার কেউ জানতে পারলে ব্যাপারটা খুব দ্রুত মুখরোচক সংবাদে পরিণত হবে, সন্দেহ নেই। কুমারীদের সাথে প্রেম প্রেম খেলার কোনও চান্স নেই দেখে আর্থার নোয়াকস সিদ্ধান্ত নিল সে সুন্দরী কোনও বিধবাকেই প্রেম নিবেদন করবে। এদিকে ঝুঁকি কম। ঠিকমত টোপ ফেলতে পারলে মাছ বড়শি গিলতে বাধ্য। তক্কে তক্কে ছিল সে। একদিন সুযোগ মিলেও গেল।