ঠাট্টা নাকি? মার্থা ঠাট্টা কি জিনিস জানেই না। ঠাট্টা করে ওকে কোনদিন হাসতে দেখেনি পল। তাই সে বুঝতে পারল না মন্তব্যটা কিভাবে নেবে।
আমাকে বোকা বানিয়েছ মানে? অস্বস্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। তুমি আবার মানুষকে বোকা বানাতে জানো নাকি?
জানব না কেন? আমি খুশি যে রান্নাটা তুমি উপভোগ করেছ। তোমার জন্য এটাই আমার শেষ রান্না, ডিয়ার। আর কোনদিন তোমাকে বেঁধে খাওয়াব না। ব্যাপারটা খুব মিস করব আমি। অথচ রান্নার শখ আমার কত!
মার্থা, আবোল-তাবোল কি বলছ? শেষ রান্না
হ্যাঁ। আমি আজ চলে যাচ্ছি।
চলে যাচ্ছ?
হুঁ। তবে ঠিক কখন যাব এখনই বলতে পারছি না। ব্যাপারটা নির্ভর করবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপরে। কেমন লাগছে তোমার?
ভয় লাগছে পলের। বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে। বুকের ভেতরে ধুপধাপ লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া খাবারগুলো পেটের ভেতর হঠাৎ যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে, মোচড় দিচ্ছে পেট।
কেমন লাগছে? আবার প্রশ্ন করল মার্থা।
কি কেমন লাগছে?
খাবারের কথা বলছিলাম। কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
কেন হবে? তুমি তো বরাবরই ভাল রান্না করো। মার্থা, তোমার হয়েছেটা কি বলো তো? ইয়ার্কি করছ?
আমি কখনও ইয়ার্কি করি না। গম্ভীর হলো মার্থা। আজ বিকেলে এস্টেলের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
আঘাতটা এত দ্রুত এসে লাগল, রীতিমত অসুস্থ বোধ করল পল। তবে কোন মন্তব্য করল না।
হাসল মার্থা।
বিড়বিড় করল পল: ওর খোঁজ পেলে কি করে?
হঠাৎ বলতে পারো। তোমার ট্রাউজারের পকেটে ওর একটা চিঠি পেয়ে যাই আমি, লন্ড্রিতে দিতে যাচ্ছিলাম কাপড়টা। তবে এটা কয়েক মাস আগের ঘটনা। কি করব বা করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় লেগেছে আমার।
এ জন্যেই আজ ওকে বাসায় পাইনি। হতবুদ্ধি দেখাল পলকে। তুমি নিশ্চয়ই বিকেলে ওর বাসায় গিয়েছ, বলেছ আমাদের ব্যাপারটা আর অজানা নেই তোমার কাছে–
ঠিক ধরেছ, বলল মার্থা। এখন কেমন বোধ করছ?
কেমন বোধ করছি মানে?
মানে-সাপারটা খাওয়ার পরে হজমে কোন গোলমাল—
বমি বমি লাগছে আমার, স্বীকার করল পল।
বেচারা পেট! ওর আর দোষ কি!
তুমি আমার খাবারে বিষ-টিষ মেশাওনি তো? ফিসফিস করল পল, কপালে এবং হাতে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
সেটা নির্ভর করে বিষ বলতে তুমি কি বোঝো তার ওপর।
কি বুঝি মানে! আর্তনাদ করে উঠল পল। তুমি আমার খাবারে তাহলে সত্যি বিষ মিশিয়েছ!
না, বলল মার্থা, হাসছে।
সত্যি বলছ?
হাসিটা মুছে গেল মুখ থেকে। তোমাকে আমি কখনও মিথ্যা কথা বলিনি, পল। কোনদিন নয়। কিন্তু তুমি আমার সাথে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছ। তোমার সঙ্গে আমার ফারাকটা এখানেই। আমি কখনও মিথ্যা বলি না। আজও তোমার কাছে কিছু সুকাব না। আমি একটা প্ল্যান করেছিলাম, সেটার বিশদ বর্ণনা অত্যন্ত আনন্দের সাথেই তোমাকে দেব।
ঠিক আছে, বলো।
এমন সময় বেজে উঠল কলিংবেল। লাফিয়ে উঠল পল। মার্থা বসে রইল চুপচাপ।
দেখো তো কে এসেছে, বলল সে। যে-ই হোক তাকে ভেতরে নিয়ে এসো। বাইরে খুব ঠাণ্ডা।
পল দরজা খুলতে গেল।
দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে দোরগোড়ায়। মি. পল ফেরো? জিজ্ঞেস করল লম্বা জন।
জী।
আপনার সাথে কথা আছে আমাদের। ভেতরে আসতে পারি?
ঘরে ঢুকল ওরা। লম্বা পুলিশ অফিসার পলের সাথে লিভিংরুমে ঢুকে পড়ল। অন্যজন দাড়িয়ে রইল সদর দরজায়।
উনিই কি মিসেস ফেরো! বলল লম্বু।
জী। আমার স্ত্রী, জবাব দিল পল। কিন্তু আপনারা–
মি, ফেরো, আজ কি আপনি ১৪, এক্সেল কোর্টে মিস এস্টেল মন্টজয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন?
গিয়েছিলাম। কিন্তু ওর সাথে দেখা হয়নি। বাইরে গেছে।
তখন কটা বাজে?
দেখুন, আপনার প্রশ্নের মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছি না আমি।
যা জানতে চেয়েছি তার জবাব দিন দয়া করে।
আটটার সময় ওর বাসায় যাই আমি। কলিংবেল টিপলেও কোন সাড়া পাইনি। এস্টেল বোধহয় বাড়িতে ছিল না।
মিসেস ফেরো, আপনার স্বামী আজ কখন বাড়ি ফিরেছেন?
নটার অল্প আগে।
এস্টেলের কিছু হয়নি তো? উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করল পল।
জ্বী, জবাব দিল পুলিশ অফিসার। মারা গেছেন তিনি।
প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেল পল, আরও অসুস্থ বোধ করল। মারা গেছে? এস্টেল? কিভাবে?
সে ব্যাপারটাই আপনার কাছে জানতে চাইছি। ওর লাশের পাশে, বেড-সাইড টেবিলের ওপর আপনার নাম-ঠিকানা লেখা এই কাগজের টুকরোটা পেয়েছি আমরা।
কাগজে পরিষ্কার হস্তাক্ষরে পলের নাম আর ঠিকানা লেখা। হাতের লেখাটা মার্থার। পল স্ত্রীর দিকে মুখ তুলে চাইল। খুব মিষ্টি করে হাসল মার্থা।
ওকে যদি আমিই খুন করতাম, বলল পল, নিশ্চয়ই নিজের নাম-ঠিকানা লিখে রেখে আসতাম না।
সেটা অবশ্য আমরাও ভেবেছি। বলল পুলিশ অফিসার।
ওর খোঁজ পেলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল পল।
রাত আটটার আগে একটা উড়ো কল পাই আমরা। এক মহিলা ফোন করেছিল। বলল ওই ফ্ল্যাটে যেন চলে যাই, কারণ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মারা গেছে। খবরটা ভুয়াও হতে পারত, কিন্তু আমরা অনুসন্ধান করে দেখব ঠিক করি। বেল বাজিয়েছি কয়েকবার, কারও সাড়া পাইনি। শেষে হল পোর্টারের কাছ থেকে পাসকি নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ি। এস্টেল মনটজয় গলা কাটা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়ে ছিলেন বিছানায়, এ ছাড়া আরও
থেমে গেল অফিসার, ঘুরল মার্থার দিকে, ও রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে।