[মূল: কার্ল জ্যাকবির দ্য কাইট]
মার্থার সাথে সাপার
আজ শুক্রবার। এস্টেলের সাথে তার অভিসারের রাত। এস্টেল তার রক্ষিতা। প্রতি শুক্রবার পল মার্থাকে কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে রাতটা এস্টেলের বাড়িতে কাটিয়ে আসে। মার্থা স্ত্রী হিসেবে খুব ভাল। কখনও পলকে আলফালতু প্রশ্ন করে ব্রিতকর অবস্থায় ফেলে না। মার্থা খুব গোছানো স্বভাবের মেয়ে। বাড়িটাকে সবসময় ঝকঝকে, তকতকে করে রাখে। ব্যবসার স্বার্থে পলকে প্রায়ই বাড়িতে পার্টি দিতে হয়। মার্থা কখনও না বলে না। পলের মনে পড়ে না মার্থা তার সাথে কখনও ঝগড়া করেছে কিনা। পলকে খুব বিশ্বাস করে মার্থা। কখনও অন্য পুরুষের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলতে যায় না। বিছানাতেও মন্দ নয় সে। রাগ কি জিনিস। জানা নেই মার্থার। আর তার রান্নার হাত? উফ, রান্নার ব্যাপারে মার্থা একটা প্রতিভা বটে! একবার যে মার্থার হাতের রান্না খেয়েছে জীবনে সে সেই স্বাদের কথা ভুলতে পারবে না।
মার্থাকে নিয়ে পল সুখী। এতই সুখী যে তার বন্ধুরা তাদের সুখকে ঈর্ষা করে। তাহলে পলের রক্ষিতার কাছে যাবার দরকারটা কি? আসলে মার্থা বড় চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে, সাত চড়ে রা করে না, আর তার মধ্যে রসবোধের বড় অভাব। কদাচিৎ তাকে হাসতে দেখেছে পল, তাও কসরৎ করে ওকে হাসাতে হয়েছে। আর এ ব্যাপারটাই পলের একদম ভাল লাগে না, সহ্যও হয় না।
এস্টেল সম্পূর্ণ মার্থার বিপরীত। মার্থার মাঝে অনুপস্থিত দোষের সবগুলোই তাঁর মধ্যে বিরাজমান। এস্টেল অমনোযোগী, চট করে রেগে ওঠে, সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে, বেপরোয়া স্বভাবের, সুদর্শন পুরুষ দেখলেই গলে যায়। তবে সে যথেষ্ট হাসিখুশি, তার সাহচর্যে জীবনের আনন্দময়, মজার দিকটা খুঁজে পাওয়া যায়। আর শয্যাসঙ্গিনী হিসেবেও সে মার্থার চেয়ে যথেষ্ট উদ্দীপক। সন্ধ্যাগুলো তাদের কেটে যায় আনন্দ ফুর্তিতে, বয়ে যায় মদের বন্যা, আর বিছানায় ওঠে প্রবল ঝড়। সাপারে স্যান্ডউইচের বেশি কিছু থাকে না, তা-ও যেমন তেমন করে বানানো, কিন্তু মার্থার সুস্বাদু রান্না খেয়ে অভ্যস্ত পল এস্টেলের অখাদ্য রান্নাকে ক্ষমা সুন্দর চোখেই দেখে থাকে।
এস্টেলের মত রগচটা, আগুনের গোলাকে বিয়ে করার কথা কল্পনাও করতে পারে না পল, কিন্তু টানা ছটা দিন মার্থার নিরানন্দ সাহচর্য তাকে এত ক্লান্ত করে তোলে যে সপ্তাহের ওই বিশেষ দিনটির জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে সে।
আজ শুক্রবার। মার্থাকে পল বলে এসেছে তার ব্যবসায়ী মক্কেলদের সাথে জরুরী কাজ আছে, বাড়িতে ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ। তারপর যথারীতি চলে এসেছে প্রণয়ীর অ্যাপার্টমেন্টে।
দরজার বেল বাজাল পল। সাধারণত বেল বাজানোর পরপরই দরজা খুলে দেয় এস্টেল, সেঁধিয়ে যায় পলের বাড়িয়ে দেয়া বাহুডোরের মাঝে। এ কাজটা মার্থা জীবনেও করবে না, জানে পল। অবশ্য এ নিয়ে তার আর আফসোসও নেই। আর এস্টেলের কাছে আসা মানেই ভালবাসার সাগরে মন্থন। এস্টেল যখন ওকে জড়িয়ে ধরে, গা থেকে ভেসে আসে তারই প্রেজেন্ট করা দামী সেন্টের গন্ধ, সুবাসটা পাগল করে তোলে পলকে। তারপর কলহাস্যে ভেঙে পড়ে দুজনে, চলে উজ্জ্বল। ঝাড়বাতির নিচে মিউজিকের তালে উদ্দাম নৃত্য, মাঝে মাঝে মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে শরীরটাকে আরও গরম করে নেয়-আহ, এরই নাম জীবন!
কলিংবেল টিপে বরাবরের মত সুখ-স্বপ্নে বিভোর ছিল পল। কিন্তু দরজার আড়ালে দ্রুত পায়ের শব্দ না শুনে কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। তাহলে কি এস্টেল শুনতে পায়নি বেলের আওয়াজ? আবার বেল টিপে অপেক্ষা করতে লাগল সে।
ঘড়ির দিকে তাকাল পল। ও কি নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এসেছে নাকি। দেরী করে ফেলেছে? না, কাটায় কাঁটায় আটটা বাজে। সাধারণত এ সময়েই সে আসে। তৃতীয়বারের মত বেল বাজাল পল। এস্টেলের কোন সাড়া নেই।
ঝুঁকে, লেটার-বক্সের ফাঁক দিয়ে ভেতরে তাকাল পল। ছোট্ট হলঘরটা অন্ধকার এবং খালি। লিভিংরুমের দরজা বন্ধ। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক, অন্তত আলো জ্বেলে থাকার কথা, আর ওই দরজাটাও সব সময় ভোলা থাকে। আজ বন্ধ কেন? গানবাজনারও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ পল এলেই এস্টেল চালু করে দেয় রেকর্ড প্লেয়ার।
অবাক হলো পল, রাগও হলো খুব। এস্টেল নিশ্চয়ই বাইরে গেছে। আজ তার আসার দিন আর আজকেই সে কোন সাহসে বেরুল? যাওয়াটা এতই যদি জরুরী, অফিসে তাকে অন্তত ফোন করে জানাতে পারত। আজ সারাদিন পল অফিসেই ছিল।
হতাশায় এবং রাগে ফুলতে ফুলতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল পল। গাড়িতে ওঠার আগে একবার মুখ তুলে চাইল এস্টেলের বাড়ির জানালার দিকে। জানালা অন্ধকার, পর্দা তোলা। এস্টেল কোথায় যেতে পারে ভেবে পেল না পল।
বাড়ি ফিরবে,, ঠিক করল ও। এ ছাড়া করার আছেটাই বা কি। মার্থা তাকে অসময়ে ফিরতে দেখে অবাক না-ও হতে পারে। তার প্রকৃতিই তো এমন। কোন কিছুতেই অবাক হয় না। পলের খুব খিদে পেয়েছে। রাগের চোটে অনেকের খুব খিদে পেয়ে যায়। মার্থা সুস্বাদু কিছু খাবার নিশ্চয়ই তাকে খাওয়াতে পারবে। কারণ মার্থার কিচেনে সব সময়ই কোন না কোন আইটেম রান্না করা থাকে।
বিরসবদনে নিজের বাড়ি ঢুকল পল, হলস্ট্যান্ডে রেখে দিল ওভারকোট এবং হ্যাট, লক্ষ করল মার্থার কোটটাও ওখানে ঝুলছে, বেডরুমে ওয়ার্ডরোকের বদলে কোটটা এখানে কেন এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাল না সে, সোজা চলে এল লিভিংরুমে।