সাবধান! সাবধান! মুখ টুখ ভেংচে বিচিত্র একটা ভঙ্গি করল জনি। আমি খুউউব ভয় পাচ্ছি। রবিনের বাবা-মা কিন্তু খুব শক্তিশালী। তা কোথায় কাজ করেন তারা?
শাক্কুরা গ্রহে। চিৎকার করে উঠল রবিন।
শাক্কুরা গ্রহ? সেটা আবার কোথায়। হেসে উঠল জেসি।
গ্রহটার নাম শাক্কুরা নাকি শুক্র? মুখ বাঁকাল জনি।
গ্রহের নামও ঠিক মত বলতে পারো না। অথচ গপ্পো মারতে এসেছ।
আগুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল রবিন। এত রেগে গেছে যে কথা ফুটছে না মুখে।
জনি বলল, তা তোমার গ্রহের গল্প একটু বলো না শুনি। শুনে ধন্য হই আমরা। জ্ঞান বাড়ক আমাদের।
তোমরা খুবই বোকা, গনগনে গলায় বলল রবিন। তোমরা আসলে-
আমরা আসলে কী, অ্যাঁ? বোকা বলায় রেগে গেছে জনি। ঘুসি মারল সে রবিনের বুকে। ঘুসি খেয়ে আবিদের গায়ে পড়ে গেল রবিন। আবিদ ওকে ধাক্কা মারল। হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল রবিন। তীব্র ঘৃণা নিয়ে। তাকিয়ে থাকল ওদের দিকে।
তোমার শাক্কুরা না ফাকুরা গ্রহের গল্প শোনালে না? হাসি মুখে বলল জনি। তোমার বাবা-মার গল্প? কী করেন তাঁরা?
তারা বিজ্ঞানী, চিৎকার করে বলল রবিন। তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে দেখতে, পৃথিবী দখল করে নেয়া যায় কিনা। আমার বাবা-মার মত ভাল বাবা-মা গোটা ব্রহ্মাণ্ডে আর একটিও নেই। ওরা আমার জন্য সব কিছু করেন। আমার মা আমার জন্যে একটা মুখোশ বানিয়ে দিয়েছেন। সেই মুখোশ পরে আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই। সেই মুখোশই আমি এখনও পরে আছি। এটা সাধারণ একটা ছেলের মুখোেশ। তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না করো তাহলে দেখিয়ে দিচ্ছি।
হাসল জনি, তোমার মাথা আসলেই ঠিক নেই, খোকা। তুমি–
গলা থেকে আর স্বর বেরুল না ওর। মুখ থেকে হাসি মুছে গেল বেমালুম, সেখানে ফুটে উঠল নির্জলা ভয় আর আতঙ্ক। রবিনকে দেখছে ও। রবিন মুখোশ খুলে ফেলছে-সাধারণ ছেলের মুখোশ।
চিৎকার করে উঠল জেসি।
আঁতকে উঠল লিটন।
মুখ হাঁ হয়ে গেল আবিদের।
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে। রবিনের হাতে মানুষের মুখের মুখোশ…ওর আসল মুখটার দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠল সকলে। মুখটা মাছের আঁশের মত আঁশ দিয়ে ঢাকা, শ্বাপদের মত হলুদ চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রাগে ফেটে পড়ছে।
রাতের নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে গেল ওদের চারজনের সম্মিলিত ভয়ার্ত চিৎকারে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে করতে ওরা ছুটল যে যার বাড়ির উদ্দেশে। আর ভয়ঙ্কর মুখটা কুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওদের গমন পথের দিকে।
বাড়ি ফেরার পথে মানুষের মুখোশটা আবার পরে নিল রবিন। ঘরে ঢোকামাত্র বাবা-মা বুঝে ফেললেন কিছু একটা ঘটিয়ে এসেছে তাদের ছেলে।
কোন সমস্যা? জানতে চাইলেন বাবা।
বিরাট সমস্যা, বাবা। বলল রবিন।
মা ছেলের কাধে একটা হাত রাখলেন। কী হয়েছে বল তো, বাপ।
চেয়ারে বসল রবিন। ছেলেগুলো এত খারাপ! হাঁপাচ্ছে ও। আমার সাথে শুধু শুধু ইয়ার্কি মারছিল, ধাক্কা দিচ্ছিল। শেষে আমি আর সইতে না পেরে
ওহ, রবিন। না! আঁতকে উঠলেন মা। তুই নিশ্চয়ই
দুঃখিত, মা, কেঁদে ফেলল রবিন। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। ওরা তাহলে তোর পরিচয় জেনে গেছে? গম্ভীর গলায় বললেন বাবা। আমাদের কথাও বলে দিয়েছিস?
কাঁদতে কাঁদতে মাথা দোলাল রবিন।
তাহলে আর কি, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মা। এখানকার পাততাড়ি আবার গোটাতে হবে।
সবকিছু গুবলেট করে ফেলেছি আমি, অপরাধীর গলায় বলল রবিন। সব আমারই দোষ। আমি
হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ হলো বাসার সামনে। কথা শেষ করতে পারল না রবিন। দ্রুত জানালার সামনে গিয়ে পর্দা উঁচিয়ে দেখল।
পুলিশ! আর্তনাদ করে উঠল রবিন। ছেলেগুলো নিশ্চয়ই আমার কথা বলে দিয়েছে পুলিশকে।
শান্ত হও। বললেন ওর বাবা। জানালার সামনে গিয়ে উঁকি দিলেন।
ওরা এদিকেই আসছে! কাঁপা গলায় বলল রবিন। দুজন!
রবিনের কাধের ওপর থেকে স্ত্রীর দিকে তাকালেন বাবা। প্রাণীদের স্যাম্পল কেমন জোগাড় হয়েছে।
মন্দ না, জবাব দিলেন রবিনের মা। তবে মানুষ স্যাম্পল জোগাড় করতে পারলে আরও ভাল হয়। দরজায় সজোরে কড়া নড়ে উঠল।
বেশ। বললেন রবিনের বাবা। শহর ছাড়ার আগে এক জোড়া মানুষ নিয়ে বি শ্রামরা কুরায় স্যাম্পল হিসেবে।
বুদ্ধি খারাপ না, হাসলেন রবিনের মা।
রবিনের বাবা খুলে দিলেন দরজা। গুড ইভনিং, অফিসার। বললেন তিনি। কোন সমস্যা?
একটা অদ্ভুত ফোন পেয়ে এসেছি আমরা, বলতে লাগল মোটা পুলিশ অফিসার। এখানে একটা ছেলে থাকে। সে নাকি ভিনগ্রহের দানব।
আমার ধারণা, এটা হ্যালোউইন নাইটের কোন ঠাট্টা, বলল অপরজন। তবু আমাদের একবার চেক করে দেখতে হবে।
অবশ্যই, খুশি খুশি গলায় বললেন রবিনের বাবা। ভেতরে আসুন আপনারা, অনুগ্রহ করে চলে আসুন।
পুলিশ দুজন ভেতরে পা বাড়াল। তারা জানে না তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে!
[ডন উলফসনের দ্য ফ্রাইট মাস্ক অবলম্বনে]
ঘুড়ি
মঙ্গলবার বড়দিন বলে আমি ঘুমাতে গেলাম দেরীতে, বাটাভিয়া মেডিকেল জার্নাল, এর জন্য একটি লেখা তৈরি করলাম দুপুর পর্যন্ত, তারপর গেলাম জাহাজঘাট। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য জাহাজের টিকেট কাটতে। সামারিন্ডায় কম দিন তো কাটালাম না। পুরো ছয় বছর। এখন এই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছি চিরতরে। অবশ্য এজন্য আমি মনে মনে খুশি।