জানি তো, হাসিমুখে বলল রবিন। আমি—
না। তুমি জানো না? প্রতিবাদ করল বাচ্চা। তোমার হ্যালোউইন ড্রেস কই? তোমার মুখে মুখোশও নেই।
আহ, এভাবে বলে না, রন্টি, বললেন ভদ্রলোক। রবিনকে একটা ক্যান্ডি বার ধরিয়ে দিলেন, রন্টির কথায় কিছু মনে কোরো না, কেমন? আস্তে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন তিনি।
এক মুহূর্ত ওখানে দাঁড়িয়ে রইল রবিন। শুনল বাচ্চাটা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে, ওর মুখোশ নেই কেন, আব্বু?
মুখোশ কেনার পয়সা নেই বোধহয় ছেলেটার, জবাব দিলেন রন্টির বাবা। আর সবাই তো তোমার মত হ্যালোউইন ডে বলে অস্থির হয়ে ওঠে না।
আবার মন খারাপ হয়ে গেল রবিনের। ওর আসলে আজ বেরুনোই উচিত হয়নি। গুলশানের বড়লোকের ছেলেদের এসব মানায়। তারা সাড়ম্বরে হ্যালোউইন ডে পালন করে। তার মত মধ্যবিত্ত ছেলে হ্যালোউইন ডে পালন করার জন্য একেবারেই বেমানান। এ জন্যই জনিরা ওকে দলে নিতে চায়নি, এতক্ষণে বুঝতে পারছে রবিন। নাহ, একদম বোকা বনে গেছে রবিন। আর কখনও সে এসব হ্যালোউইন ডে-ফে-তে অংশ নেবে না। স্কুল ব্যাগটার দিকে তাকাল রবিন। ওটা প্রায় খালি। শুনেছে হ্যালোউইন ডে-তে নানা জনে নানা উপহার দেয়। কিন্তু রবিন কোন উপহার পায়নি। বাবা-মাকে বড় মুখ করে বলে এসেছিল ব্যাগ ভর্তি উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরবে। ওর খালি ব্যাগ দেখে বাবা-মা হয়তো কষ্টই পাবেন। ভাববেন, ছেলেটার সত্যি কোন বন্ধু নেই।
পকেট হাতড়ে পঞ্চাশটা টাকা পেল রবিন। এ দিয়ে কিছু চকলেট কিনবে সে। অন্তত বাবা-মাকে দেখানো যাবে চকলেট উপহার পেয়েছে।
গুলশান গোল চক্করের দিকে পা বাড়িয়েছে রবিন, এমন সময় কে যেন উঁচ গলায় ওর নাম ধরে ডাকল। এই যে, রবিন। হ্যালোউইন ডে-তে এমন দশা কেন তোমার?
ঘুরল রবিন। অন্ধকার মোড় থেকে বেরিয়ে এল ওরা, খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে।
আমি ওর রক্ত খাবোওওও! বলল ড্রাকুলার মুখোশ পরা একজন।
একটা মেয়ে পাউডার মেখে মুখটাকে ফ্যাকাসে করে রেখেছে, চোখের নিচে কালো, মোটা দাগ। ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। সে খিকখিক হাসল। আমি ডাকলার বউ। তুমি কে হে? বখাটে? * বখাটেই বটে, বলল এক জলদস্যু। তার এক চোখে কালো তাঞ্জি, হাতে নকল বড়শি, কোমরের বেল্টে কার্ডবোর্ডের তরবারি গুজে রাখা। দেখি তো ওর ব্যাগে কী ধন সম্পদ লুকিয়ে রেখেছে। ঘোত ঘোত করে উঠল সে। খপ করে চেপে ধরল রবিনের ব্যাগ।
আমাকে ছেড়ে দাও! হিসিয়ে উঠল রবিন, টান মেরে ছাড়িয়ে নিল ব্যাগ।
লংজন সিলভার যা চাইছে ভালয় ভালয় ওকে তা দিয়ে দাও, বলল একটা ছেলে। তার মাথায় রাবারের ছোরা গাথা, সারামুখে নকল রক্ত দিয়ে দাও বলছি। নইলে আমার মত দশা হবে তোমারও।
দলটা বৃত্তাকারে ঘিরে রেখেছে রবিনকে হাসছে, তামাশা করছে ওকে নিয়ে। জলদস্যু সংজন সিলভার কার্ডবোর্ডের তরবারি দিয়ে খোচাতে শুরু করল রবিনকে। ড্রাকুলা নকল দাঁত নিয়ে মুখ খিচাচ্ছে। রবিনের শরীর ঘামতে লাগল, অপমানে জ্বালা ধরে গেছে গায়ে। ছেলেগুলোকে চিনতে পেরেছে ও। জনি সেজেছে ড্রাকুলা, জেসি হয়েছে ড্রাকুলার বউ। আবিদ জলদস্যু আর লিটন মাথায় নকল ছুরি গেঁথে রেখেছে। এদেরকেই সকালে রবিন অনুরোধ করেছিল ওদের দলে নেয়ার জন্যে।
তুমি এমন সাধারণ বেশে রাস্তায় বেরুলে কেন, বোকা? হাসতে হাসতে বলল জনি।
জলদস্যু আবিদ রবিনের কাধে ধাক্কা দিল। ঘটনা কী, রবিন খোকা? তোমার কি কোন বন্ধু নেই?
বুকের ভেতর ব্যথা হচ্ছে রবিনের। সত্যি তো ওর কোন বন্ধু নেই। ওদের দিকে একবার তাকাল সে। তারপর মুখ নিচু করল।
কী ব্যাপার, জবাব দিচ্ছ না কেন? বলল আবিদ।
অ্যাই, চলে এসো তোমরা, বলল জেসি, ওর চক সাদা মুখখানায় সহানুভূতির ছাপ। এভাবে ওকে আর অপমান কোরো না।
একটা মুখোশ কিনতে পারো না! বিস্ময় প্রকাশ করল আবিদ। এতই ফকির তুমি।
ওর মা তার বখাটে ছেলের জন্য কোন ড্রেস বানিয়ে দিতে পারেনি, কপালের ছুরিটা খুলে পড়ে যাচ্ছিল, ওটা সামলাতে সামলাতে বলল লিটন।
আমার মা ঠিকই ড্রেস বানিয়ে দিয়েছে, গর্জে উঠল রবিন। তোমরা অন্ধ। তাই চোখে দেখতে পাও না।
আহ-ওহ, বিদ্রুপ করল জনি। বেচারী রবিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।
তুমি কী সাজতে চেয়েছ? আবিদ তরবারি দিয়ে আরেকটা খোঁচা দিল রবিনকে।
এমন কিছু যা কেউ কখনও কল্পনাও করেনি, বলল রবিন। আমার বাবার আইডিয়া ওটা।
আইডিয়াটা কী, শুনি? জানতে চাইল আবিদ। তোমাকে তো সেই আগের মতই বোকা বোকা টাইপের লাগছে।
আইডিয়াটা হলো, গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল রবিন। সাধারণ বেশে বেরিয়ে পড়া।
ফু! হেসে উঠল জনি। সাধারণ বেশে বেরিয়ে পড়া। এটা একটা আইডিয়া হলো?
হেই, বলল জেসি, তোমার মা না একটা ড্রেস বানিয়ে দিয়েছে বললে। ওটা পরে আসোনি কেন?
আমার মা- বলতে গেল রবিন।
কথা শেষ করার আগেই ওর হাত থেকে জলদস্যু আবিদ ছিনিয়ে নিল ব্যাগটা।
আমার ব্যাগ ফিরিয়ে দাও, রেগে গেল রবিন। ফিরিয়ে দাও বলছি। নইলে কিন্তু-
নইলে কী? মুখ ভেংচাল আবিদ। বাবা-মার কাছে গিয়ে নালিশ করবে?
হ্যাঁ, তাই করব, ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল রবিন। আমার বাবা-মার অনেক ক্ষমতা। তারা তোমার বারোটা বাজিয়ে দেবেন।
তাই নাকি? হা হা করে হেসে উঠল আবিদ। কী রকম বারোটা বাজাবেন, শুনি?