আমরা যাচ্ছি কোথায়?
উইল চাচা এবং ইডা চাচীর বাড়িতে, বলল হ্যাল।
হ্যাল বাথরুমে ঢুকল। জানালা দিয়ে তাকাল রাস্তায়। পেটিকে দেখা যাচ্ছে। শার্টজ্যাকেট গায়ে, কাধের ফ্লাইট ব্যাগের ডেলটা লেখাটাও পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে। পার্কের দিকে এগোচ্ছে পেটি।
পার্ক থেকে প্রমাণ সাইজের গোটা তিনেক পাথর জোগাড় করল। তারপর রাস্তা পার হতে শুরু করল। মোটেলের বাথরুম থেকে ওকে এখনও লক্ষ করছে হ্যাল। মোটেলের কোণ ঘেঁষে হঠাৎ একটা গাড়ি বেরিয়ে এল তীব্র স্পীডে। পেটি ঠিক ওই মুহূর্তে পার্ক থেকে রাস্তায় নেমেছে, এগোচ্ছে মোটেলের শিকে। এক সেকেন্ডের জন্যে গাড়ি চাপা পড়ল না পেটি! দৌড়ে পার হয়ে গেল রাস্তা। ওর পাশ দিয়ে হুস করে বেরিয়ে গেল গাড়ি।
বিস্ফারিত দৃষ্টিতে রাস্তার দৃশ্যটা দেখছিল হ্যাল। পেটিকে নিরাপদে রাস্তা পার হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এরই মধ্যে ঘেমে নেয়ে গেছে সে।
পেটি এল হাঁপাতে হাঁপাতে। মুখ গোলাপী। বাবা, তিনটা বড় বড় পাথর পেয়েছি। আমি- হঠাৎ থেমে গেল ও। বাবা তুমি ঠিক আছ তো?
হ্যাঁ, কপালের ঘাম মুছল হ্যাল। ব্যাগটা নিয়ে আয়।
ব্যাগ নিয়ে এল পেটি। খুলল। ভেতরে বড়সড় তিনটা পাথর। বানরটাকে ধরে ব্যাগের মধ্যে ছুঁড়ে মারল হ্যাল। টিং করে শব্দ হলো। ঢোল বাড়ি খেয়েছে পাথরে। ব্যাগটা কাধে ফেলল হ্যাল। ছেলেকে বলল, চল বাপ।
যাব কি করে? বলল পেটি। মা গাড়ি নিয়ে গেছে।
একটা ব্যবস্থা হবেই, বলে ছেলের চুল নেড়ে দিল হ্যাল আদর করে।
ডেস্ক ক্লার্ককে নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাল হ্যাল। কুড়ি ডলার দিল। ক্লার্ক লকে নিজের লঝঝড়ে এ এমসি গ্রেমলিন গাড়িটা দিল চালাতে। রুট ৩০২ ধরে ওরা কাসকোর দিকে এগোল। হ্যাল কথা বলতে শুরু করল ছেলের সঙ্গে। প্রথমে আস্তে তারপর দ্রুত হয়ে উঠল ভঙ্গিটা। বলল হ্যালের বাবা অর্থাৎ পেটির ঠাকুরদা বানরটাকে বাইরের কোন দেশ থেকে সম্ভবত কিনে এনেছিলেন ছেলেদের উপহার দিতে। তবে খেলনাটার মধ্যে অসাধারণত্ব কিছুই ছিল না। এ রকম চাবি দেয়া খেলনা বানর লাখ লাখ আছে সারা বিশ্বের দোকানে। কিছু তৈরি হয় হকং-এ, কিছু তাইওয়ানে, কিছু কোরিয়ায়। হ্যালের বাবার বানরটা ছিল হংকং-এর। এ বানরটাকে নিয়ে শৈশব থেকে দুঃস্বপ্নের শুরু হলের। ওটার মধ্যে অশুভ, ভয়ংকর কিছু একটা আছে।
তবে পেটিকে ভয় পাইয়ে দিতে চায় না বলে অনেক কিছু চেপে গেল হ্যাল। অবশ্য পেটি বাপকে বানরের ব্যাপারে কোন প্রশ্নও করল না। হয়তো বাবার গল্পের সাথে নিজের কল্পনা মিলিয়ে সে সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছে।
মা মারা যাবার পরে ইডা চাচী মায়ের মত আগলে রেখেছিলেন হ্যাল আর বিলকে। কানেকটিকাট থেকে ওরা যেবার মেইনে চলে এল, বাড়ির অনেক হাবিজাবি জিনিস ফেলে দিয়েছিলেন ইডা চাচী। ট্রাক বোঝাই করে সে সব আবর্জনা নিয়ে গেছে এক ইটালিয়ান লোক। ওই ট্রাকে অশুভ বানরটাকেও পাচার করে দিয়েছিল হ্যাল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল ওটাকে আর দেখতে হবে না ভেবে।
, এই ঘটনার মাস তিনেক পরে হার্টফোর্ডের বাড়ির চিলেকোঠায় হ্যালকে ইড়া চাচী পাঠান ক্রিসমাস ডেকোরেশনের কিছু বাক্সপেটরা নিয়ে আসতে। গায়ে ধুলোটুলো মেখে মহা উৎসাহে বাক্স নামাচ্ছিল হ্যাল, হঠাৎ একটা বাক্সের দিকে চোখ যেতে জমে যায় সে। ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। ওখানে, র্যালস্টন-পুরিনা কার্টনের এক কোণায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওটা। দাঁত বের করে হাসছে, দুহাতে ঢোল। যেন ওটা হ্যালকে। বলছিল:
ভেবেছিলে আমার কাছ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে, তাই না? আমার কাছ থেকে রেহাই পাওয়া অত সোজা না, হ্যাল। তোমাকে আমি পছন্দ করি, হ্যাল। আমরা পরস্পরের জন্য এ পৃথিবীতে এসেছি। যেমন সম্পর্ক থাকে পোষা বানরের সাথে তার প্রভুর। এখান থেকে দক্ষিণের কোথাও এক ইটালিয়ান ট্রাকঅলা চিৎ হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। তার চোখ বেরিয়ে এসেছে কোটর ছেড়ে, দাঁতের পাটিও বের হয়ে আছে মুখ থেকে। লোকটা তার নাতির জন্য উপহার হিসেবে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমাকে সে রেখেছিল তার শেভিং কিটসের মধ্যে। লোকটাকে আমার পছন্দ হয়নি। তাই ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তোমার কাছে এসেছি, হাল। আমি তোমার ক্রিস্টমাস উপহার, হ্যাল। হ্যাল, আমাকে জাগিয়ে তোলো। এবার কে মারা গেছে, হ্যাল? বিল? উইল চাচা? নাকি তুমি?
হ্যাল সভয়ে চলে এসেছে ওখান থেকে। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় আরেকটু হলে ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যেত। চাচীকে বলেছে সে ক্রিসমাস ডেকোরেশনের বাক্স খুজে পায়নি। জীবনে ওই প্রথম চাচীকে মিথ্যা কথা বলে হ্যাল। চাচী তার কথা বিশ্বাস করেছেন কিনা জানে না হ্যাল। তবে ওই রাত থেকে আবার সে বানরটাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এক সময় সন্দেহ হতে থাকে তার বাবার অদৃশ্য হয়ে যাবার পেছনে বানরটার হাত আছে।
হ্যালদের বাড়ির পেছনে বোট হাউস। বোট হাউসটা নড়বড়ে, অনেক দিন আগের। হ্যাল ব্যাগটা ডান হাতে ধরে রেখেছে। তার গলা শুকিয়ে কাঠ, কানে অস্বাভাবিক
একটা গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। ব্যাগটা খুব ভারী লাগছে হ্যালের।
এখানে কি হবে, বাবা? জিজ্ঞেস করল পেটি।