কাল রাতে নানা কথা ভাবতে গিয়ে ঘুমাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল হ্যালের। আজ ঘুম ভেঙে দেখে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। পেটি পা আড়াআড়ি ভাবে মুড়ে আপেল খাচ্ছে আর টিভিতে গেম শো দেখছে।
বিছানা থেকে নামল হ্যাল। মাথাটা দপদপ করছে।
তোর মা কোথায়, পেটি? জিজ্ঞেস করল সে।
পেটি ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, ভাইয়াকে নিয়ে শপিং-এ গেছে। আমাকেও যেতে বলেছিল। আমি রাজি হইনি। আচ্ছা, বাবা, তুমি কি ঘুষের মধ্যে সব সময় কথা বলো?
কৌতুকের দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকাল হ্যাল। নাতো। কেন রে?
তুমি আজ ঘুমের মধ্যে সারাক্ষণ কি যেন বিড় বিড় করছিলে। আমার ভয় লাগছিল।
আর ভয় পেতে হবে না। আমি এখন ঠিক আছি। হাসল হ্যাল। জবাবে পেটিও হাসল। ছেলেটার জন্যে মায়া লাগল হ্যালের। পেটিকে ও ডেনিশের চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসে এতে কোনই সন্দেহ নেই। ডেনিশটা এরকম বেয়াদব ছিল না। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসার পরে ছেলেটা কেমন বদলে গেল।
হঠাৎ স্থির হয়ে গেল হ্যাল। বানরটা। বসে আছে জানালার গরাদে। হ্যালের মনে হলো ওর হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেছে, তারপর যেন ঘোড়ার মত লাফাতে শুরু করল। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এল হ্যালের, হঠাৎ বেড়ে গেল মাথা ব্যথাটা।
সুটকেস থেকে ওটা বেরিয়ে এসেছে, বসেছে জানালার ধারে। মিটিমিটি হাসছে। ওর দিকে চেয়ে। যেন বলছে ভেবেছ আমার কবল থেকে মুক্তি পাবে? আগেও এরকম ভেবেছিলে, তাই না? হ্যাঁ, মনে মনে বলে হ্যাল, তাই ভেবেছিলাম।
পেটি, বানরটিকে কি তুই সুটকেস খুলে বের করেছিস? জিজ্ঞেস করল হ্যাল। জবাবটা কি হবে জানাই ছিল তার। কারণ সুটকেসের তালা নিজের হাতে বন্ধ করে। চাবি ওভারকোটের পকেটে রেখেছিল হ্যাল।
পেটি বানরটার দিকে তাকাল, অস্বস্তি ফুটল চেহারায়। না, বলল ও। মা ওখানে রেখেছে।
মা রেখেছে?
হ্যাঁ। তোমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। মা তখন হাসছিল।
আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে? বলছিস কি তুই?
তুমি বানরটাকে সাথে নিয়ে ঘুমিয়েছিলে। আমি দাঁত মাজছিলাম। ভাইয়া ওটাকে দেখে ফেলে। সে-ও হাসছিল। বলছিল তোমাকে নাকি টেডিবিয়ার শিশুর মত লাগছে।
বানরটার দিকে তাকাল হ্যাল। ওর গলা এমন শুকিয়ে গেছে, ঢোক গিলতেও পারছে না। বানরটাকে নিয়ে সে বিছানায় গেছে? ওটা তার সঙ্গে ছিল? ওই নোংরা জিনিসটা। ওহ ঈশ্বর!
ঘুরল হ্যাল, দ্রুত পা বাড়াল ক্লজিটের দিকে। সুটকেস যথাস্থানে আছে। এবং তালা মারা।
টিভি বন্ধ করে পেটি এসে দাঁড়াল বাপের পেছনে। খুব আস্তে বলল, বাবা, বানরটাকে আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না।
আমারও, সায় দিল হ্যাল।
পেটি বাবার চোখে চোখ রাখল। বোঝার চেষ্টা করল বাবা ঠাট্টা করছে কিনা। নাহ্, সে সিরিয়াস। বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পেটি। হ্যাল টের পেল তার ছেলে কাঁপছে থরথর করে।
পেটি বাবার কানে কানে কথা বলতে শুরু করল। যেন ভয় পাচ্ছে বানরটা শুনে ফেলবে তার কথা। গলার স্বর নীচু! তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে, বানরটাকে মনে হচ্ছিল সব সময় চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানেই যাও, অনুসরণ করে চলেছে। পাশের ঘরে গেলে মনে হবে ওটাও দেয়াল ফুড়ে ঢুকছে। ওটার উপস্থিতি যেন টের পাচ্ছিলাম আমি..মনে হচ্ছিল ওটা আমাকে কোন কিছুর জন্য চাইছে।
শিউরে উঠল পেটি। হ্যাল শক্ত করে ধরে রইল ওকে।
পেটি বলে চলল, বানরটাকে নষ্ট খেলনা বলে আমার মনে হয় না। মনে হচ্ছিল ওটা আমাকে বলছে, আমাকে জাগিয়ে তোলো, পেটি। আমরা এক সাথে খেলব। তোমার বাবা আমাকে কোনদিন জাগিয়ে তুলবে না। তুমি আমাকে জাগিয়ে তোলো, জাগিয়ে তোলো… বলতে বলতে কেঁদে ফেলল পেটি। পুতুলটা ভাল নয়। আমি ঠিক বুঝতে পারছি, বাবা। ওটাকে ফেলে দেয়া যায় না? বাবা, প্লীজ?
বানরটা মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়েই রয়েছে হ্যালের দিকে। ওটার পেতলের ঢোলে সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে ঝকমক করছে! তোর মা এবং ভাইয়া কখন ফিরবে, পেটি? জিজ্ঞেস করল হ্যাল।
বলেছে একটার মধ্যে, লাল চোখ জামার হাতায় মুছল পেটি। কেঁদে ফেলে তি। তবে বানরটার দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না।
আমি ভয়ের চোটে টিভি অন করি, বলল পেটি। জোরে সাউন্ড দিই।
ঠিক আছে, পেটি।
আমার মনে হচ্ছিল বানরটাকে জাগিয়ে তুললে তুমি ঘুমের মধ্যে মরে যাবে, বলল পেটি। খুব অদ্ভুত চিন্তা, না, বাবা? গলার স্বর আবার কাঁপছে ওর।
কিভাবে মৃত্যু ঘটবে আমার? ভাবছে হ্যাল। হার্ট-অ্যাটাক? নাকি আমার মার মত মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে? বানরটাকে দূর করে দিতেই হবে। ভাবল হ্যাল। কিন্তু ওটার হাত থেকে কি আদৌ রক্ষা মিলবে?
বানরটা জ্জিপের ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে হ্যালের দিকে। যে রাতে ইডা চাচী মারা গেলেন সে রাতে কি বানরটা জেগে উঠেছিল? ভাবছে হ্যাল। তিনি কি মৃত্যুর আগে ঢোলের শব্দ শুনে গেছেন?
তোর চিন্তাটা অদ্ভুত না রে, বাবা, ছেলেকে আস্তে আস্তে বলল হ্যাল। নে। ফ্লাইট ব্যাগটা গুছিয়ে রেডি হ।
পেটি উদ্বিগ্ন চোখে তাকাল বাবার দিকে। কোথায় যাবে?
চল, একটু ঘুরে আসি। বলল হ্যাল। তবে আগে ব্যাগে পার্ক থেকে বড় বড় কয়েক টুকরো পাথর নিয়ে নিবি। কেন, বুঝতে পেরেছিস?
জ্বলজ্বল করে উঠল পেটির চৈহারা। বুঝতে পেরেছি, বাবা।
ঘড়ি দেখল হ্যাল। সোয়া বারোটা। তাড়াতাড়ি কর। তোর মা আসার আগে চলে আসতে হবে।