টেরির কথার কোন জবাব দিল না হ্যাল। চুপচাপ শুয়ে পড়ল বিছানায়। তবে সারারাত ঘুম এল না। সারাক্ষণ চিন্তা করল কিভাবে বানরটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বানরটাকে দ্বিতীয়বার খুঁজে পেয়েছিল বিল।
সেটা ছিল বিউলাহ ম্যাককাফেরির মৃত্যুর দেড় বছর পরের ঘটনা। গ্রীষ্মকাল। হ্যাল মাত্র কেজি শেষ করেছে।
স্টিভি আর্লিংজেনের সাথে খেলেটেলে ঘরে ঢুকেছে হ্যাল, মা বললেন, হাত মুখ ধুয়ে আয়, হ্যাল। তোকে ভাগাড়ের শুয়োরের মত লাগছে। মা বারান্দায়, চা খেতে খেতে বই পড়ছিলেন। তখন মার ছুটি চলছে। দুই হপ্তা।
হাত-মুখ ধুয়ে এল হ্যাল, শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, বিল কোথায়?
দোতলায়। ওর ঘরটা পরিষ্কার কুরতে বলবি। যা দশা করে রেখেছে ঘরের।
হ্যাল লাফাতে লাফাতে ছুটল বড় ভাইয়ের ঘরে। বিলকে দেখল বসে আছে। মেঝেতে। ব্যাক ক্লজিটের দরজা ভেজানো। বিলের হাতে বানরটা। ওটা নষ্ট, সাথে সাথে বলল হাল। কাজ করে না।
কথাটা মিথ্যা বলেনি হ্যাল। বানরটা বিকলই ছিল। তবে বিউলাহর মৃত্যুর দিনে কিভাবে যে ওটা জ্যান্ত হয়ে উঠেছিল বোধগম্য হয়নি হ্যালের। অবশ্য গোটা ব্যাপারটাই তার কাছে দুঃস্বপ্নের মত মনে হয়েছে। বানরটাকে নিয়ে, বিউলাহর মৃত্যুর পারে ভয়ানক সব স্বপ্নও দেখেছে হ্যাল। এক রাতে সে জেগে দেখে ওটা তার বুকে চেপে বসেছে, হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিল হ্যাল। মা সাথে সাথে চলে আসেন পাশের ঘর থেকে। ছেলেকে পানি পান করান। ভেবেছিলেন বিউলাহর আকস্মিক মৃত্যু গভীর রেখাপাত করেছে হ্যালের কচি মনে। সাঙ্গুন দিয়েছেন ছেলেকে। ন্তুি হালের আসল ভয়ের কারণ জানতে পারেননি।
এ সব ঘটনা অস্পষ্ট মনে পড়ে হ্যালের। তবে বানরটা এখনও তাকে ভীত করে তোলে। বিশেষ করে ওটার হাতের ঢোল আর বড় বড় দাঁতগুলো। জানি, হ্যালের কথা শুনে বলল বিল, ছুঁড়ে ফেলল বানরটাকে এক পাশে। এটা একটা বোকা বানর।
বানরটা গিয়ে পড়ল বিলের বিছানায়, ছাদের দিকে মুখ, উঁচু হয়ে থাকল ঢোল। ওটাকে দেখে খুশি হতে পারল না হ্যাল। বলল, মা তোমাকে বলেছে ঘর পরিষ্কার করতে।
সে পরে পরিষ্কার করলেও চলবে, বলল বিল। পপসি কিনতে টেডির দোকানে যাবি?
এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল হ্যাল বিষণ্ণ মুখে! নাহ। পয়সা নেই।
তোকে আমি ধার দেব, বলল বিল! চল্।
তাহলে যেতে পারি, কৃতজ্ঞ গলায় বলল হ্যাল। বানরটাকে ক্লজিটে ভরে রেখে যাই?
দরকার নেই, উঠে দাঁড়াল বিল, পরে রাখা যাবে। এখন চল্।
গেল হ্যাল। কারণ বিলের মেজাজ মর্জির ওপর ভরসা নেই। সে বানরটাকে ক্লজিটে রাখতে গিয়ে পপসি কেনার সুযোগ হারাতে চায় না। ওরা টেডির দোকানে গেল, তারপর গেল রেক-এ। ওখানে কয়েকটা ছেলে বেসবল খেলছিল। তবে হ্যাল খুব ছোট বলে ওকে কেউ খেলায় নেয় না। সে পপসিকল খেতে খেতে। খেলা দেখল। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা।
তারপর হাত মুখ ধুয়ে, সাপার খেয়ে টিভি দেখতে দেখতে বানরটার কথা। ভুলেই গেল হ্যাল। অবশ্য মা বিলাকে পিট্টি দিলেন সে ঘর পরিষ্কার করেনি বলে। হ্যাল বানরটাকে দেখল বিলের শেলফের ওপর, অটোগ্রাফ খাতার পাশে দাড়িয়ে আছে। ওখানে বানরটা কিভাবে গেল বুঝতে পারল না হ্যাল। হয়তো মা রেখেছে।
হ্যালের এখন সাত বছর। বেবী সিটার রাখা বেহুদা খরচ। মিসেস শেলবার্ন প্রতিদিন সকালে অফিসে যাবার সময় বলে যান, বিল, তোর ভাইকে দেখিস।
সেদিন বিলকে স্কুলে থাকতে হলো সেফটি প্যাট্রলবয় মিটিং-এর জন্য। তাই একা বাড়ি ফিরল হ্যাল। বাসায় ঢুকেই ফ্রিজ খুলল দুধ খাওয়ার জন্য। কিন্তু দুধের বোতল হাত ফস্কে পড়ে গেল মেঝেতে। ভেঙে চৌচির। মেঝে বোঝাই ভাঙা কাচ। বানরটা হঠাৎ ডিম ডিমা ডিম ডিম ঢোল বাজাতে শুরু করেছে।
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল হ্যাল, তাকিয়ে আছে ভাঙা কাচ আর দুধের স্রোতের দিকে। প্রচণ্ড একটা ভয় গ্রাস করল ওকে।
খানিকপর ঘুরে দাঁড়াল হ্যাল, দ্রুত চলে এল ওদের ঘরে! বানরটা দাড়িয়ে আছে বিলের শেলফের ওপর, কটমট করে তাকাচ্ছে হ্যালের দিকে। বানরটা বিলের অটোগ্রাফ খাতা ফেলে দিয়েছে বিছানায়, মুচকি মুচকি হাসছে। শরীর দুলছে বাজনার তালে! ধীর পায়ে ওটার দিকে এগোল হ্যাল। বানরের বাজনার গতি দ্রুততর হয়ে উঠল। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠল হ্যাল, পরক্ষণে এক থাবড়ায় বানরটাকে ফেলে দিল শেলফ থেকে। উড়ে গিয়ে ওটা পড়ল বিলের বালিশে, ওখান থেকে ডিগবাজি খেয়ে মেঝেতে। তখনও ঢোল বাজিয়ে চলেছে ডিম ডিম ডিম ডিম।
ঠিক তখন বিউলাহর কথা মনে পড়ে গেল হ্যালের। বিউলাহ্ যেদিন মারা যায়, সে রাতে ঠিক এভাবে ঢোল বাজিয়েছিল বানরটা।
বানরটাকে লাথি মারল হ্যাল সর্বশক্তি দিয়ে। এবার ভয় নয়, রাগে চিৎকার করে উঠল। মেঝে থেকে ছিটকে গিয়ে দেয়ালে বাড়ি খেল বানর। তারপর আর নড়ল না। হ্যাল দাড়িয়ে রইল। হাত মুঠো করা। পাজরের গায়ে বাড়ি খাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। আশ্চর্য, ওটা এখনও মুচকি হাসছে ওর দিকে চেয়ে। চকচকে চোখ মেলে যেন বলছে-যত ইচ্ছে লাথি মারো। কিন্তু আমি তো পুতুল বৈ কিছু নই। আচ্ছা, বলো তো তোমার মা এখন কোথায়? ব্রুক স্ট্রীট কর্নারে। একটা গাড়ি ছুটে আসছে তার দিকে। আর গাড়ির ড্রাইভারটা মাতাল। তুমি কি শুনতে পাচ্ছ বিলের খুলি ভাঙার মটমট শব্দ? দেখতে পাও ওর মগজ গলে গলে পড়ছে কান বেয়ে? হ্যাঁ নাকি না? তবে আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না। আমি জানি না। আমি শুধু জানি কিভাবে আমার ঢোলটা ডিম ডিম ডিম ডিম করে বাজে। আর তুমি জানো আমার ঢোল বাজার সময় কেউ না কেউ মারা যায়। এবার কার পালা, হ্যাল? তোমার? নাকি তোমার ভাইর?