হয়তো, বললাম আমি। আপনার কাছে ভ্যাম্পায়ারের গল্প শুনে প্রথমে বিশ্বাস করিনি আমি। পরে ভেবেছি সাবধানের মার নেই। তাই রিভলভারে সিলভার বুলেট ভরে রেখেছিলাম। এখানে আসার আগে ভ্যাম্পায়ারের ওপর প্রচুর পড়াশোনা করি আমি। দুটো ব্যাপারে নিশ্চিত হই-এক ভ্যাম্পায়ার বলে যদি সত্যি কিছু থাকে হলে ওরা মানুষের রক্ত পান করে। দুই. ওদেরকে শুধু সিলভার বুলেট দিয়েই প্রস করা স্থল। তাই বিশেষ প্রক্রিয়ায় সিলভার বুলেট তৈরি করি নিজেই।
বাহ, দারুণ! আমার বুদ্ধিমত্তায় খুশি হন ওই। এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে এক চাকর এসে হাজির। জয়ে চোখ বিস্ফারিত। স্যার! উত্তেজিত গলায় বলল সে। জলদি চলেন। মেমসাব আপনেরে বোলায়। আপনের ভাই, বিজয় সাবের কোন সাড়া শব্দ নাই। হের কিছু একটা হইছে-মনে লয়।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলাম আমরা। বিজয়ের ঘরের সামনে ছোটখাট জটলা। বীনা দেবীর মুখ কালো, আমাদের দেখে বললেন, অনুরাধারও কোন সাড়া পাচ্ছি না, বিজয়ের পাশের ঘরে ইঙ্গিত করলেন তিনি। মি. গুহর ছোটবোন থাকে ও ঘরে।
দরজা ভাঙো, আদেশ দিলেন গুহ। চাকররা একযোগে কঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে ভেঙে ফেলল বিজয়ের ঘরের দরজা। হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকল সবাই। যা দেখল তাতে ভয়ে ছানাবড়া হয়ে উঠল চোখ।
ঘরে আলো জ্বলছে। বিজয় তার বিছানায়, রক্তের পুকুরের মধ্যে ভাসছে। দেখেই বুঝেছি আসতে দেরী করে ফেলেছি আমরা। ভ্যাম্পায়ার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে চলে গেছে। কণ্ঠনালী ছেড়া হতভাগ্য বিজয়ের!
এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান বীনা দেবী! মি, গুহর মনের জোর সাংঘাতিক। নিহত ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকিয়েই মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। বজ্র নির্ঘোষে বললেন, পাশের রুমে, জলদি।
অনুরাধার ঘরের দরজাও ভাঙা হলো। এখানেও সেই একই দৃশ্য। চতুর্দশী কিশোরীর ছিন্নভিন্ন শরীর দেখে আর সন্দেহের অবকাশ রইল না ভ্যাম্পায়ার কল্পনাশ্রয়ী কোন বস্তু নয়।
সে রাতটা যে কি বিভীষিকার মধ্যে কেটেছে! বীনা দেবী অজ্ঞান। গুহর মা প্যারালাইজড় রোগীর মত বসে আছেন। চোখে ফ্যালফেলে চাউনি। ডাক্তার এল, পুলিশে খবর দেয়া হলো, আমার সঙ্গে কথা বলল পুলিশ অফিসাররা। রিভলভার পরীক্ষা করল, লাইসেন্স খুঁটিয়ে দেখল। তারপর বলল আমি যেতে পারি।
নিজের ঘরে এসে পাথর হয়ে বসে রইলাম। চিন্তা-ভাবনাগুলো সব জট পাকিয়ে যাচ্ছিল। আশপাশে কি ঘটছে সে ব্যাপারে যেন সচেতন ছিলাম না ওই সময়।
তবে এই খুনের ঘটনা খবরের কাগজের কাছে সযত্নে গোপন রাখা হলো। ভ্যাম্পায়ার প্রতিহিংসার বশে খুন করেছে বিশ্বাস করবে কেউ? পুলিশী তদন্ত শুরু হলো বটে, তবে তারাও ব্যাপারটা যেন বিশ্বাস করতে চাইছিল না।
যা হোক, কয়েকদিন পরে অর্থাৎ আজ সকালে মি. গুহর বাড়ি থেকে ছাড়া পাই। আমি। আমাকে পইপই করে বলে দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে যেন মুখ না খুলি কারও কাছে। মি. গুহ তার মা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঢাকা চলে গেছেন। ও বাড়ির আর ছায়াও মাড়াবেন না বলেছেন। পুলিশের অনুমতি ছাড়া এ খুনের বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা তাদেরও নিষেধ। আমি শুধু ফোনে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি। তারপর ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে সোজা ট্রেনে। আপাতত রাজশাহীতে থাকব কয়েকদিন। তারপর ফিরব।
চৌধুরীর দীর্ঘ গল্পের মাঝে আমি কোন প্রশ্ন করিনি। শুধু হুঁ হ এবং কি অদ্ভুত ধরনের মন্তব্য করে গেছি। আর বেশ কয়েক কাপ চা গিলেছি।
শখের গোয়েন্দার কথা শেষ হলে বললাম, এমন অদ্ভুত গল্প জীবনেও শুনিনি। তবে আপনি ভাগ্যবান। আপনার আয় রেখা বেশ লম্বা মনে হচ্ছে।
সত্যিই তাই, ডান হাতের তাল দেখতে দেখতে বলল জীবন চৌধুরী। আপনার সঙ্গে আমি একমত। রিভলভারে আগেভাগে সিলভার বুলেট ভরে না রাখলে এ মুহূর্তে আমাকে এ জায়গায় দেখতে পেতেন না।
সাঁঝের আঁধার ঘনিয়ে এসেছে! কম্পার্টমেন্টে অন্ধকার নামছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
আলোটা জ্বেলে দিন না, বলল চৌধুরী।
জ্বালছি। এক মিনিট, বললাম বটে তবে আলো জ্বালানোর জন্য ব্যস্ত ইলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, একটা কথা খোলাসা করুন তো। আপনি বলেছেন ভ্যাম্পায়ারটার চেহারা সাধারণ মানুষের মত, পরেও সাধারণ পোশাক, তাহলে আপনি কি করে বুঝলেন সে ভ্যাম্পায়ার ছিল?
সেই ভয়ঙ্কর লাল চোখ দেখে, বলল চৌধুরী। কোন সাধারণ মানুষের চোখ অমন হতে পারে না।
এই প্রথম গাঢ় সানগ্লাসটা চোখ থেকে খুললাম আমি। সরাসরি তাকালাম লোকটার দিকে।
এরকম চোখ কি?
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ানক আঁতকে উঠল সে। মুখ হাঁ করল, চিৎকার দেবে। তার আগেই আমি ঝাপিয়ে পড়লাম তার ওপর। এক কামড়ে ছিঁড়ে ফেললাম কণ্ঠনালী।
[রাজেন্দ্র সিং ও রাজেশ্বরী সিং-এর দ্য ভ্যাম্পায়ার-এর ছায়া অবলম্বনে]
বানর
হ্যাল শেলবার্ন যখন দেখল, তার ছেলে ডেনিশ পুরানো একটা র্যালস্টন-পুরিনার কার্টন থেকে বের করে আনল ওটা, ভয়ের একটা শিহরণ আর তীব্র বিবমিষা ধাক্কা দিয়ে গেল ওকে। এক মুহূর্তের জন্য ইচ্ছে করল চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল হ্যাল মুখে হাত চাপা দিয়ে। কাশল খুকখুক করে। টেরি বা ডেনিশ কেউ খেয়াল করল না ব্যাপারটা। তবে পেটি কৌতূহলী হয়ে উঠল জিনিসটা দেখে। বড় ভাই ডেনিশকে জিজ্ঞেস করল, অ্যাই, ওটা কি?