এলবার্ট কাঁপা হাতে কাগজগুলি নিয়ে খানিকক্ষণ দেখল, যখন মুখ তুলে তাকাল তখন তার মুখ রক্তহীন। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, অসম্ভব।
না। অসম্ভব না। তুমি সত্যিই এলবার্ট আইনস্টাইন।
না। এলবাৰ্ট চিৎকার করে বলল, আমি বিশ্বাস করি না।
তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে এলবার্ট। তুমি সত্যিই এলবার্ট আইনস্টাইন। আমি প্রায় বিলিয়ন ডলার দিয়ে তোমার অভিভাবকত্ব নিয়েছি এলবার্ট। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ? আমি বিনিয়োগ?
হ্যাঁ। আমাকে সেই বিনিয়োগের পুরোটুকু ফেরত আনতে হবে। আমাদের অনেক কাজ বাকি এলবার্ট।
এলবার্ট এক ধরনের আতংক নিয়ে ফ্রেডির দিকে তাকিয়ে রইল, কাঁপা গলায় বলল, আমাকে? আমাকে সেই ট্রিলিয়ন ডলার আনতে হবে?
ফ্রেডি হাত তুলে বললেন, না, তোমাকে আনতে হবে না, সেটা আনব আমি। তোমাকে শুধু একটা কাজ করতে হবে।
কী কাজ?
নূতন কিছুই না। তুমি যা তোমাকে তাই হতে হবে। তুমি এলবার্ট আইনস্টাইন তোমাকে এলবার্ট আইনস্টাইন–ই হতে হবে। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে হবে, গণিত নিয়ে ভাবতে হবে–গবেষণা করতে হবে, চিন্তা করতে হবে।
কিন্তু কিন্তু– এলবার্ট কাতর গলায় বলল তুমি বুঝতে পারছ না। আমি এলবার্ট আইনস্টাইনের জীবনী পড়েছি। তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান। তিনি ছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ–আমি সেরকম কিছু নই। আমি সাধারণ, খুব সাধারণ–।
না, তুমি সাধারণ নও। তোমার মস্তিষ্ক হচ্ছে এলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক। এতদিন তুমি জানতে না, তাই ভাবতে তুমি সাধারণ। এখন তুমি জান। এখন তুমি হয়ে উঠবে সত্যিকারের আইনস্টাইন। যে সমীকরণ আইনস্টাইন শেষ করতে পারেন নি তুমি সেটা শেষ করবে।
না।
ফ্রেডি অবাক হয়ে বলল, না!
না। আমার গণিত ভালো লাগে না। পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না।
ফ্রেডি প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন, পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না? তুমি আইনস্টাইন, তোমার পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে না?
না। আমি সেই আইনস্টাইন নই। আমি সেই সময়ে বড় হই নি। তখন পদার্থবিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার হয়েছে, আইনস্টাইন উৎসাহ পেয়েছেন। এখন পদার্থবিজ্ঞানে কোনো বড় আবিষ্কার হচ্ছে না, পুরো ব্যাপারটা একটা বদ্ধঘরের মতো।
কী বলছ তুমি?
আমি ঠিকই বলছি। আমি গণিতেও কোনো মজা পাই না। যখন গণিতের কোনো সমস্যা দেয়া হয় আমি সেটা কম্পিউটারে করে ফেলি। তুমি জান, গণিতের সমস্যা সমাধানের জন্যে কত মজার মজার সফটওয়ার প্যাকেজ আছে? এলজেবরা করতে পারে, ক্যালকুলাস করতে পারে, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশান সমাধান করতে পারে। অঙ্ক করার জন্যে আজকাল কিছু করতে হয় না। চিন্তা করতে হয় না, ভাবতে হয় না!
চিন্তা করতে হয় না? ভাবতে হয় না?
না। সত্যিকারের আইনস্টাইনের তো কম্পিউটার ছিল না, তার সবকিছু ভাবতে হত। ভেবে ভেবে অঙ্ক করতে করতে তার গণিতে উৎসাহ হয়েছিল, তাই তিনি গণিতে এত আনন্দ পেতেন, পদার্থবিজ্ঞানে আনন্দ পেতেন। আমি তো পাই না।
কী বলছ তুমি?
আমি ঠিকই বলছি। আইনস্টাইনের ক্লোন হলেই আইনস্টাইন হওয়া যায় না। আইনস্টাইনের মতো ভাবতে হয়!
ফ্রেডি প্রায় ভাঙা গলায় বলল, তুমি আইনস্টাইনের মতো ভাবতে পার না?
না। আমার ভালো লাগে না। আমি ওসব ভেবে আনন্দ পাই না।
তুমি কিসে আনন্দ পাও?
এলবার্টের চোখেমুখে এক ধরনের উজ্জ্বলতা এসে ভর করে। সে চোখ বড় বড় করে বলল, সঙ্গীতে।
সঙ্গীতে?
হ্যাঁ। হাইস্কুলে আমি সঙ্গীতের ওপর মেজর করেছি। আমি সঙ্গীতের ওপর পড়াশোনা করতে চাই।
সঙ্গীতের ওপর? ফ্রেডি মুখ হাঁ করে বলল, সঙ্গীতে?
হ্যাঁ। এলবার্ট হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি এত অবাক হচ্ছ কেন? তুমি জান না আসল আইনস্টাইনও খুব বেহালা বাজাতে পছন্দ করতেন? বেলজিয়ামের রানীর সাথে তিনি সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করেছেন।
কিন্তু–
আজকাল কী চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে, ডিজিটাল সাউন্ড, কী চমৎকার তার সুর! আমি নিশ্চিত, আইনস্টাইনের যদি ওরকম একটা সাউন্ড সিস্টেম থাকত তাহলে তিনি দিনরাত সেটা কানে লাগিয়ে বসে থাকতেন! গণিত আর পদার্থবিজ্ঞান থেকে সঙ্গীত অনেক বেশি আনন্দের।
কিন্তু পৃথিবীর মানুষ তো সঙ্গীতজ্ঞ আইনস্টাইন চায় না। তারা চায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে।
পৃথিবীর মানুষ চাইলে তো হবে না। আমাকেও চাইতে হবে। আইনস্টাইনের জন্ম হয়েছিল, তার কাজ করে গেছেন, এখন দ্বিতীয়বার আর তার জন্ম হবে না। আমি আইনস্টাইনের ক্লোন হতে পারি কিন্তু আমি আইনস্টাইন না। আমি বড় হয়েছি অন্যভাবে, আমার শখ ভিন্ন, আমার স্বপ্ন ভিন্ন। আমি কেন আইনস্টাইন হওয়ার এত বড় দায়িত্ব নিতে যাব? আমি সাধারণ মানুষের মতো থাকতে চাই!
ফ্রেডি উঠে দাঁড়িয়ে এলবার্টের কাছে গিয়ে বললেন, কিন্তু তুমি তো সাধারণ মানুষ নও। তুমি সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে খ্যাতিমান মানুষ। মানুষ খ্যাতির পিছনে ছোটে কিন্তু খ্যাতি খুঁজে পায় না। অর্থ হয় বিত্ত হয় ক্ষমতা হয় প্রতিপত্তি হয়–কিন্তু খ্যাতি এত সহজে কাউকে ধরা দেয় না। তুমি সেই খ্যাতি নিয়ে জন্মেছ। মানুষ যখন জানবে তুমি আসলে আইনস্টাইন_
না! এলবার্ট চিৎকার করে বলল, মানুষ জানবে না!
ফ্রেডি অবাক হয়ে বলল, কেন জানবে না? আমি বিলিয়ন ডলার খরচ করে তোমাকে এনেছি, তোমাকে মানুষের সামনে–