তুমি ঠিকই বলেছ।
এ ব্যাপারে তুমি অঙ্গীকারাবদ্ধ?
আমি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
যদি তুমি তোমার অঙ্গীকার ভঙ্গ কর?
সিস্টেম এডিফাস যান্ত্রিক এক ধরনের হাসির মতো শব্দ করে বলল, আমার গঠন সম্পর্কে ধারণা নেই বলে তুমি এই কথা বলছ। আমার অঙ্গীকার প্রকৃতপক্ষে হার্ডওয়ারনির্ভর, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা আক্ষরিক অর্থে কয়েক হাজার প্রসেসরকে ধ্বংস করার সমান। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং আত্মহত্যা আমার জন্যে সমান।
শুনে নিশ্চিন্ত হলাম। তোমাকে ধন্যবাদ সিস্টেম এডিফাস।
ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। মানব সমাজের সেবা করাই আমার উদ্দেশ্য।
আমি বদ্ধঘরটিতে কয়েকবার পায়চারি করে মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে বললাম, সিস্টেম এডিফাস।
বল।
তুমি আমাকে হত্যা করার জন্যে সাত দিন সময় নিয়েছ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সময়টি ছয় দিন, তাই না?
ছয় দিন? কেন?
কারণ প্রথম ছয় দিন তুমি যদি আমাকে হত্যা না কর তাহলে আমি বুঝে যাব সপ্তম দিনেই তুমি আমাকে হত্যা করবে। কিন্তু আমি যদি দিনটি জেনে যাই তাহলে তো তুমি আমাকে আর সেইদিন হত্যা করতে পারবে না। কাজেই আমাকে যদি সত্যি হত্যা করতে চাও তাহলে আমাকে প্রথম ছয় দিনের মাঝেই হত্যা করতে হবে। ঠিক কি না?
সিস্টেম এডিফাস কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। তোমাকে হত্যা করার জন্যে আমি সাত দিন অপেক্ষা করতে পারব না প্রথম ছয় দিনেই করতে হবে।
তাহলে কি আমরা ধরে নেব আগামী ছয় দিনের মাঝেই আমাকে হত্যা করা হবে?
হ্যাঁ ধরে নিতে পার।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, যদিও আমার সময় ছিল সাত দিন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা হয়ে গেল ছয় দিন। আমার জীবনের শেষ কয়টা দিন থেকে আরো একটা দিন হারিয়ে গেল।
তুমি যেভাবে চেয়েছ তাতে আর কিছু করার নেই।
আমি খানিকক্ষণ ঘরে পায়চারি করে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, সিস্টেম এডিফাস।
বল। তুমি তো আসলে ষষ্ঠ দিনেও হত্যা করতে পারবে না।
কেন?
আমি জানি ছয় দিনের মাঝে তুমি আমাকে হত্যা করবে। কাজেই পাঁচ দিন পার হওয়ার পরই আমি বুঝতে পারব পরের দিন আমাকে হত্যা করবে। তাই না?
সিস্টেম এডিফাস এবার বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, ব্যাপারটা তো তাই দাঁড়াল। আমি সপ্তম দিনে যেরকম তোমাকে হত্যা করতে পারব না, ষষ্ঠ দিনেও পারব না।
না পারবে না। আমি গভীর একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, ষষ্ঠ দিনেও যেহেতু পারবে না কাজেই আমাকে পাঁচ দিনের মাঝে মারতে হবে। আমার আয়ু মাত্র পাঁচ দিন।
সিস্টেম এডিফাস বিচিত্র এক ধরনের গলায় বলল, পরবর্তী পাঁচ দিনের মাঝে আমার তোমাকে হত্যা করতে হবে। সময়
আমি বাধা দিয়ে বললাম, কিন্তু
কিন্তু কী?
চার দিন পার হবার পর আমি কি জেনে যাব না যে পঞ্চম দিন এসে গেছে? আমার শেষ দিন এসে গেছে! আমি যদি জেনে যাই তাহলে তুমি আমাকে কীভাবে হত্যা করবে? তুমি অন্তত সেদিন হত্যা করতে পারবে না।
সিস্টেম এডিফাস এবারে কোনো কথা বলল না। আমি তাকে ডাকলাম, সিস্টেম এডিফাস।
বল।
তুমি কথা বলছ না কেন? পঞ্চম দিনেও তো তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না। তুমি অঙ্গীকার করেছ আমি যদি বুঝে যাই তুমি আমাকে হত্যা করবে না।
হ্যাঁ। কিন্তু
আমি বাধা দিয়ে বললাম, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল চার দিনে।
কিন্তু
কিন্তু কী?
চার দিনের বেলাতেও তো এই যুক্তি দেয়া যায়।
আমি মাথা নাড়লাম, ঠিকই বলেছ। তুমি চতুর্থ দিনেও আমাকে হত্যা করতে পারবে
সিষ্টেম এডিফাস ধীরে ধীরে বলল, চতুর্থ দিনেও তোমাকে হত্যা করতে পারব না। তাহলে প্রথম তিন দিনে
আমি গলায় উত্তেজনা ঢেলে বললাম, আসলে একই কারণে তিন দিনেও পারবে না, দ্বিতীয় দিনেও পারবে না। ভেবে দেখ তুমি প্রথম দিনেও পারবে না।
পারব না?
না। তার মানে তোমার আমাকে এখনই হত্যা করতে হবে।
এখনই?
হ্যাঁ। সিস্টেম এডিফাস। কিন্তু আমি জেনে গিয়েছি তুমি এখন আমাকে হত্যা করবে।
জেনে গিয়েছ?
হ্যাঁ। আমি জেনে গেলে তুমি আমাকে আর হত্যা করতে পারবে না!
আমি তোমাকে হত্যা করতে পারব না?
না, সিস্টেম এডিফাস। আমাকে যেতে দাও।
যেতে দেব?
আমি গলায় অনাবশ্যক জোর দিয়ে বললাম,হ্যাঁ। দরজাটা খুলে দাও সিস্টেম এডিফাস।
কয়েক সেকেন্ড পর সত্যি সত্যি ঘরঘর শব্দ করে দরজা খুলে গেল। আমি স্টেনলেস স্টিলের নিচ্ছিদ্র এই ঘর থেকে বের হয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললাম, সিস্টেম এডিফাস, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?
হ্যাঁ, পাচ্ছি।
তুমি কি জান যে তুমি একটা বিশাল গর্দভ? অকাট মূর্খ? জঞ্জালের ডিপো–নোংরা আবর্জনা? জান?
না, জানতাম না।
জেনে রাখ।
***
কয়েকদিন পর সংবাদ বুলেটিনে একটা ছোট তথ্য প্রকাশিত হল যেটি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। সেই বুলেটিনে লেখা ছিল–অপরাধী নির্ণয়, বিচার করা এবং শাস্তি প্রদানের জন্যে প্রস্তুত করা সিস্টেম এডিফাস প্রজেক্টটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করতে সমস্যা হওয়ার কারণে পুরো প্রজেক্টটাই বাতিল করে দেয়া হয়েছে।