অক্সব্রীজ স্কুলের একটা ছেলের এক মাসের বেতন দিয়ে এই দেশের একটা ফেমিলির এক মাসের খরচ চলে যায়। আমি তাই হিসাব করে বের করলাম অক্সব্রীজ স্কুল এখন পর্যন্ত কতো টাকা বানিয়েছে। আমি ঠিক করলাম সেই টাকা থেকে কিছু টাকা আমার এই বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যে খরচ করব।
(আমরা মিঠুনের কথা শুনে খুবই অবাক হলাম। একটা স্কুল কেন তার একজন ছাত্রকে বোমা বানানোর জন্যে টাকা দিবে? মিঠুনকে জিজ্ঞেস করতে হল না, সে নিজেই বলতে শুরু করল।)
অক্সব্রীজ স্কুল তো আমার গবেষণার জন্যে যে বোমা দরকার সেই বোমা বানানোর টাকা দিবে না। টাকাটা আনতে হবে খুবই কায়দা করে। সেটা করার জন্যে আমি প্রথমে সায়েন্স টিচারের সাথে খাতির করলাম। মানুষটা সাদাসিধে হাবাগোবা। বিজ্ঞানের ব’ও জানে না। ক্লাশে ভুলভাল যাই পড়ায় আমি জোরে জোরে মাথা নাড়ি। মাঝে মাঝে সোজা সোজা বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলি। আস্তে আস্তে তাকে একটু একটু বিজ্ঞান শিখাই, কঠিন অঙ্কগুলো করে দেই। কোন একটা কনফারেন্সে সে একটা পেপার জমা দিল, সেই পেপারে অনেক ভুলভাল ছিল আমি ঠিক করে দিলাম। কনফারেন্সে সেই পেপার পড়ে তার অনেক নাম হল। তখন তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমি স্কুলের ল্যাবরেটরির একটা চাবি নিয়ে নিলাম। তারপর খোঁজ নিয়ে জানলাম স্কুলে কম্পিউটারের ল্যাব তৈরির করার জন্যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কম্পিউটার, সার্ভার, রাউটার, সুইচ, নেটওয়ার্কিং এসবের যন্ত্রপাতি কিনবে। আমি কম্পিউটার হ্যাক করে পুরা অর্ডারটা পাল্টে দিলাম। অক্সব্রীজ স্কুল জানতেও পারল না কম্পিউটার আর যন্ত্রপাতির অর্ডারের বদলে আমার বোমা বানানোর ক্যামিকেল অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।
(এরকম জায়গায় আমরা সবাই প্রথমবার চোখ বড় বড় করে মিঠুনের দিকে তাকালাম। চশমা পরা শান্তশিষ্ট চেহারার একটা ছেলের মাথায় এরকম ফিচলে বুদ্ধি?)
আমি বুঝতে পারলাম আমার হাতে সময় খুব কম। বিকেলে বোমা বানানোর জন্যে ফার্টিলাইজার আর ক্যামিকেল ডেলিভারী দিয়েছে। আমি জানি সেই রাতেই যদি এক্সপেরিমেন্ট না করি তাহলে দেরী হয়ে যাবেআমি ধরা পড়ে যেতে পারি। কাজেই রাতের মাঝে সব ঠিক করে ফেললাম। দুই পাশে বিশাল বিস্ফোরকের স্তুপ। একসাথে ডোটানেট করলে তখন মাঝখানে প্রচণ্ড চাপ তৈরী হবে। চাপটাকে এক বিন্দুতে আনার জন্যে আমি দুইটা ডায়মন্ড ব্যবহার করলাম ডায়মন্ড সবচেয়ে শক্ত তাই ডায়মন্ড চাপ দেয়ার জন্যে সবচেয়ে ভালো।
(এরকম সময় ফারা মিঠুনকে থামাল, জিজ্ঞেস করল, “ডায়মন্ড মানে কী হীরা?” মিঠুন মাথা নাড়ল, তখন ফারা জানতে চাইল, “হীরা কোথায় পেলি?” মিঠুন মুখ সুঁচালো করে বলল যদি তার মাকে কোনোদিন বলে না দেয় তাহলে সে বলতে পারে। আমরা সবাই মাথা নেড়ে বললাম তার মাকে কখনো বলে দিব না।’ তখন মিঠুন আমাদেরকে তার ডায়মন্ডের গল্প শোনালো।)
আমার আম্মুর এক জোড়া ডায়মন্ডের কানের দুল আছে। আন্তু সেটা আম্মুকে কিনে দিয়েছে। ডায়মন্ড আর কাচ দেখতে একই রকম। তাই আমি নকল জুয়েলারীর দোকান থেকে এক জোড়া কানের দুল কিনে আনলাম। সেখানে আম্মুর ডায়মন্ডের মতো দেখতে কাচের টুকরো লাগানো। একদিন যখন বাসায় কেউ নাই আমি ভ্রু ড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে ডায়মন্ড দুইটা খুলে সেখানে কাচের টুকরো দুইটা লাগিয়ে দিলাম। আম্মু কোনোদিন বুঝতে পারেনি–আম্মু ও খুশী আমিও খুশী।
সেই দুইটা ডায়মন্ড দিয়ে আমি একটা পাঞ্জার বানালাম। ডায়মন্ড গুলো লাগানো হলো একটা স্টেনলেস পিস্টনের মাথায় পিস্টনটা লাগালাম দুইটা বড় মেটাল প্লেটে। প্লেটের পিছনে এক্সপ্লোসিভ। দুইটা এক্সপ্লোসিভ একসাথে ডোটানেক্ট করতে হবে সে জন্যে ছোট একটা সার্কিট আগে থেকে তৈরী …
(মিঠুন তার পুরো যন্ত্রটা বর্ণনা করে গেল। আমরা কিছুই বুঝলাম কিন্তু সে এতো উৎসাহ নিয়ে হাত পা নেড়ে নেড়ে বলল যে আমরা ধৈর্য্য ধরে শুনে গেলাম। যন্ত্রটার বর্ণনা শেষ করে সে আবার বলতে শুরু করল।)
কতো বড় বিস্ফোরণ হবে আমি জানি না, বিস্ফোরণের পর সবকিছু ওলট পালট হয়ে যাবে, তাই আমি একটা ছোট শিশি রাখলাম ঠিক ডায়মন্ড দুটোর নিচে। যখন ডায়মন্ড দুটো মাখখানের জায়গাটাকে প্রচণ্ড চাপ দিবে তখন যদি একটা ব্ল্যাকহোল বা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা তৈরী হয় সেটা এই শিশির মাঝে টুপ করে পড়বে। বিস্ফোরণের পর শিশিটা যেন খুঁজে পাওয়া যায় সেইজন্যে এটার সাথে একটা ছোট ব্যাটারী দিয়ে একটা এল.ই.ডি লাগিয়ে রাখলাম।
তারপর আমি লম্বা তার দিয়ে চলে গেলাম পাশের বিল্ডিংয়ে। ঘড়িতে ঠিক যখন রাত আটটা বাজে তখন সুইচ টিপে দিলাম। সাথে সাথে—
(মিঠুন তখন থেমে গেল, তার মুখে একটা আজব ধরণের হাসি ফুটে উঠল, তারপর দুই হাতে উপরে তুলে চিৎকার করে বলল, বু-ম।)
সেই শব্দটার মত সুন্দর কোনো শব্দ আমি জীবনেও শুনি নাই। একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যখন ঠিক করে কাজ করে তখন তার থেকে আনন্দ আর কিছুতে হয় না।
বিস্ফোরণের পর মিনিটখানেক ধরে ইট পাথর ধূলা বালি পড়তে লাগল। তারপর সবকিছু থেমে গেল। আমি তখন ল্যাবরেটরি ঘরে গেলাম। দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে ছাদ উড়ে গেছে। ভিতরে ধোয়া ধূলা বালি। কারেন্ট চলে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি তার মাঝে দেখলাম একটা এল.ই.ডি, জ্বলছে। আমার শিশিটা তখনো খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হামাগুড়ি দিয়ে কাছে গেলাম, সাবধানে শিশিটা তুলে তার মুখে ছিপিটা লাগালাম তারপর হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে দে দৌড়।