বিজ্ঞানের কথা বলতে না দেওয়ার জন্যে মিঠুনের মুখটা একটু ভোঁতা হল কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার শুরু করল।)
আমার মনে যে সব প্রশ্ন তৈরি হয় আমি সেটা কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারি না। প্রথম প্রথম কেউ কেউ উত্তর দিতে পারত, আস্তে আস্তে আর কেউ পারে না। তখন আমি বই পড়া শুরু করলাম, বেশীর ভাগ ইংরেজী বই সেগুলো পড়ে পড়ে আমার ইংরেজীটা ভালো হয়ে গেল। পরীক্ষায় ইংরেজীতে ভালো মার্কস পেতে শুরু করলাম। ইন্টারনেটে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতো, বেশীর ভাগ ভুলভাল। তবে দেশে বিদেশে অনেক ইউনিভার্সিটির টিচার আছে ই-মেইলে তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিতো। সেইভাবে আমি অনেক কিছু শিখে গেলাম।
একসময় আবিষ্কার করলাম আমাদের ইউনিভার্সের মাত্র চার ভাগ সম্পর্কে আমরা জানি, বাকী ছিয়ানব্বই ভাগ সম্পর্ক আমরা কিছুই জানি না।
(এই কথাটা বলে সে চোখ বড় বড় করে থেমে গেল, সে আশা করছিল এখন তার কথা শুনে আমরাও চোখ কপালে তুলে বলব, “বলিস কী?” “অসম্ভব?” “হতেই পারে না।” কী আশ্চর্য!” কিন্তু আমরা তার কিছুই করলাম না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শতকরা চার ভাগ সম্পর্কে জানলেই কী আর চল্লিশ ভাগ সম্পর্কে জানলেই বা কী? আমাদের কী আসে যায়?
আমাদের দিক থেকে কোনো উৎসাহ না পেয়ে মিঠুন একটু মনমরা হয়ে গেল। মনমরা হয়েই সে আবার বলতে শুরু করে!)
এই ইউনিভার্সের মাত্র চারভাগ পদার্থের কথা আমরা জানি, বাকী ছিয়ানব্বই ভাগ পদার্থ আছে কিন্তু আমরা সেটা কখনো চোখে দেখি নাই। বৈজ্ঞানিকদের ধারণা সেটা আমাদের চারপাশেই আছে, কিংবা কে জানে আমরা হয়তো সেই পদার্থের ভিতরেই ডুবে আছি কিন্তু সেটা দেখতে পাচ্ছি না।
(মিঠুন আবার একটু থামল, আমরা অবাক হয়ে কিছু একটা বলি কী না–দেখার জন্যে। আমরা কিছু বললাম না, অবাক হওয়ায় জন্যে বিষয়টা বুঝতে হয়। আমরা বুঝি নাই তাই অবাক হই নাই।)
তখন আমার মাথার মাঝে একটা আইডিয়া এল। আমাদের চারপাশে যে অদৃশ্য পদার্থ আছে সেটা কী অন্য কোনোভাবে দেখা সম্ভব? তোরা সবাই জানিস সাধারণ যে পদার্থ আছে সেগুলো যদি অনেক বেশী হয়ে যায় তাহলে তার নিজের আকর্ষণে সবকিছু ভেঙে চুরে কোনো একসময়ে সেটা ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়।
(আমরা কখনো ব্ল্যাক হোল কিংবা হোয়াইট হোল কিংবা ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট হোলের কথা শুনি নাই। কিন্তু এখন সেটা প্রকাশ করলাম না। মিঠুনকে খুশী করার জন্যে মাথা নাড়লাম। মাথা নাড়াটা মনে হয় একটু বেশী হয়ে গেল তাই মিঠুন কেমন সন্দেহ করল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ ইবু কেমন করে ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় বল দেখি?”
আমি পড়লাম বিপদে। মাথা চুলকে বললাম, “অ্যাঁ অ্যাঁ ইয়ে, মানে–
ঝুম্পা আমাকে রক্ষা করল। মিঠুনকে ধমক দিয়ে বলল, “তোর বৈজ্ঞানিক ভ্যাদর ভ্যাদর শুনেই কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আর এখন তুই পরীক্ষা নেওয়া শুরু করবি? তুই প্রশ্ন করবি আর আমাদের উত্তর দিতে হবে? পাশ ফেল হবে? পেয়েছিসটা কী তুই?”
মিঠুন তখন আরও মনমরা হয়ে গেল। মনমরা হয়ে বলতে শুরু করল।)
আমাদের পরিচিত পদার্থ দিয়ে ব্ল্যাক হোল তৈরী করা এতো সোজা না। চাপ দিয়ে যদি পৃথিবীটাকে ব্ল্যাক হোল বানাতে চাই তাহলে পৃথিবীটার সাইজ হবে পিপড়ার মতো। কী দিয়ে চাপ দিব? কেমন করে চাপ দিব? কিন্তু বাকী যে ছিয়ানব্বই ভাগ পদার্থ সেটা সম্পর্কে আমরা জানি না। তার সস্তুর ভাগ হয়তো ডার্ক এনার্জী কিন্তু চল্লিশ ভাগ তো অন্যরকম পদার্থ। সেই অন্যরকম পদার্থ দিয়ে একটা নতুন রকম ব্ল্যাক হোল বানানো সম্ভব? হয়তো তার শোয়ার্ডস চাইল্ড ব্যাসার্ধ হবে অন্য রকম।
(মিঠুন আবার চোখ বড় বড় করে আমাদের দিকে তাকাল, আশা করল আমরা অবাক হয়ে যাব। হতবাক হয়ে যাব। আমরা কিছু বুঝি নাই তাই হতবাক হই নাই। শুধু তাই না বগা তার মাড়ি এবং দাঁত বের করে বিকট ভাবে হাই তুলল। মিঠুন মনমরা ভাবে আবার শুরু করল।)
যেহেতু পৃথিবীর কেউই জানে না এটা কীভাবে করা যায় কেমন করে করা যায় তাই আমি ভাবলাম এইটা পরীক্ষা করে দেখা যাক। প্রথমে হাতুরী দিয়ে এই অদৃশ্য পদার্থকে বাড়ি দিয়ে দেখলাম কিছু করা যায় কী না। কোনো লাভ হল না তখন আমি ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। ইন্টারনেটে অনেক গোপন সাইট আছে, বড় বড় সন্ত্রাসী আর জঙ্গীদের সাইট, আমি হ্যাক করে সেগুলোতে ঢুকে কেমন করে বোমা বানানো যায় সেটা শিখে ফেললাম।
(গল্পের এই জায়গায় আমরা সবাই নড়ে চড়ে বসলাম, বগা পর্যন্ত তার বিশাল একটা হাই গিলে ফেলে চোখ বড় বড় করে তাকাল। আমরা এক সাথে বললাম, “বোমা?” মিঠুন মাথা নেড়ে কথা বলতে শুরু করে।)
বোমা বানানো পানির মত সোজা কিন্তু বোমা বানানোর জন্যে যে মাল মশলা লাগে সেগুলো জোগাড় করা এতো সোজা না। আল্লুর ব্যাংক থেকে সিগনেচার জাল করে টাকা চুরি করা যায় কিন্তু আগে হোক পরে হোক ধরা।
পড়ে যাব। তখন আমার অক্সব্রীজ স্কুলের কথা মনে পড়ল।
অক্সব্রীজ স্কুল হচ্ছে পুরোপুরি ভূয়া স্কুল। শুধু বড়লোকের ছেলে মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে আর তাদের কাছে এতো টাকা বেতন নেয় সেটা শুনলে তোর অবাক হয়ে যাবি?
(অন্য কেউ লক্ষ করল কী না জানি না আমি লক্ষ করলাম, মিঠুনকে আমরা তুই তুই করে বলছি কিন্তু সে আমাদের তুমি তুমি করে বলছিল। এই প্রথম সেও আমাদের তুই করে বলল।)