আমরা ল্যাবরেটরি ঘরের একটা টেবিল ঘিরে বসলাম। মিঠুন পকেট থেকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা ভরা শিশিটা টেবিলের উপর রেখে ফোঁস করে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, “আমি যখন প্রথম ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা তৈরী করেছিলাম তখন বুঝি নাই এটা নিয়ে এতো হই চই হবে। আরেকটু হলে আমাদের কোনো একজন মরে যেতাম।”
ঝুম্পা বলল, “মরি নাই। মরে যাওয়া এতো সোজা না।”
মিঠুন বলল, “অনেক সোজা। জামশেদ কতোগুলো গুলি করেছিল মনে আছে? যদি আমাদের কারো গায়ে লাগত?”
বগা বলল, “লাগে নাই তো।”
মিঠুন বলল, “জামশেদ কেন ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল বুঝেছিস?”
বগা বলল, “বুঝেছি। এটা মিলওন ডলার দামী।”
মিঠুন বলল, “মিলিওন ডলার না। মিলিওন মিলিওন ডলার। সেটা কতো টাকা জানিস?”
ফারা মাথা নাড়ল, “জানি না। আমার বড় বড় গুণ করতে খুব বিরক্তি লাগে।”
মিঠুন বলল, “তোর বড় বড় গুণ করতে হবে না, শুধু জেনে রাখ এটা অনেক টাকা। কিন্তু বল দেখি কেন এতো টাকা?”
বগা বলল, “এটা আবার কোনো প্রশ্ন হল নাকি? এটা দিয়ে আকাশে উড়া যায়।”
মিঠুন বলল, “উহু আকাশে উড়ার জন্য না। এটা দিয়ে অস্ত্র বানানো যাবে–আর আলতু ফালতু অস্ত্র না। একেবারে খাটি—”
আমি বললাম, “নিউক্লিয়ার বোমা?”
“হ্যাঁ। আসলে তোরা বিশ্বাস করবি, আমি-” মিঠুন বুকে থাবা দিয়ে বলল, “আমি ইচ্ছা করলে এই ল্যাবরেটরি ঘরে একটা সত্যিকারের নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে ফেলতে পারব?”
ঝুম্পা বলল, “তুই?”
“হ্যাঁ। কারণটা খুবই সোজা–”
ফারা কানে হাত দিয়ে বলল, “থাক থাক এখন বৈজ্ঞানিক কচকচানি শুরু করিস না। মাথা ধরে যাবে।”
মিঠুন মুখ শক্ত করে বলল, “মোটেও বৈজ্ঞানিক কচকচানি না। খুবই সোজা জিনিষ। ইবু প্রথম তার বাসার ছাদে দেখেছিল। ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাকে ঘিরে ইলেকট্রিক ফিল্ড দিলে ভেতর থেকে এনার্জী বের হয়। এনার্জিটা আসে ভয় থেকে, ই ইকুয়েলস টু এম সি স্কয়ার হিসেবে। যেটা দিয়ে নিউক্লিয়ার এনার্জী হয়, নিউক্লিয়ার বোমা বানায়।।
ফারা হাল ছেড়ে দেয়ায় ভঙ্গী করে মাথা নাড়ল, আর মিঠুন একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, “ভরকে এতো সহজে শক্তিতে রূপান্তর করা যায় এটা কী কেউ কোনোদিন চিন্তা করতে পেরেছে? শুধু ইলেকট্রিক ফিল্ড দিলেই হয়, যত বেশি ফিল্ড তত শক্তি। শুধু কী করতে হবে জানিস?”
কিছু একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করলে মিঠুন হতাশ হবে, তাই কিছু বুঝব জানার পরেও জিজ্ঞেস করলাম, “কী করতে হবে?”
“খুব কম সময়ের জন্যে অনেক বড় একটা ইলেকট্রিক ফিল্ড দিতে হবে। মাইক্রোসেকেন্ড একটা পালস দিলে কাজ হয়ে যাবে। তার মানে বুঝেছিস?”
আমরা বিশেষ কিছু বুঝি নাই কিন্তু তারপরেও জোরে জোরে মাথা নাড়লাম যেন মিঠুন আবার এটাও বোঝাতে শুরু না করে, কিন্তু লাভ হল না সে বোঝাতে শুরু করল, “তার মানে আমি ছোট একটা সার্কিট দিয়ে কয়েক ঘণ্টায় মাঝে ডেটোনেটর বানাতে পারব।”।
মিঠুন হাত দিয়ে বাচ্চা ব্ল্যাকহোলের ভরা শিশিটা নিয়ে একটু নেড়ে বলল, “এখানে যে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা আছে সেটার ওজন দশ গ্রামের মত। তার মানে হচ্ছে এটা দিয়ে আমি যদি একটা নিউক্লিয়ার বোমা বানাই তাহলে সেটা কতো শক্তিশালী বোমা হবে জানিস?”
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কতো শক্তিশালী”?
“হিরোশিমায় যে বোমাটা ফেলেছিল তার থেকে দশগুণ বেশী শক্তিশালী?”।
হিরোশিমায় যে বোমাটা ফেলেছিল সেটা নিশ্চয়ই অনেক শক্তিশালী, তার থেকে দশগুণ বেশী শক্তিশালী বোমা নিশ্চয়ই সোজা কথা না তাই আমরা সবাই অবাক হবার ভঙ্গী করলাম, (শুধু ফারা হালকাভাবে হাই তুলল)।
মিঠুন গম্ভীর গলায় বলল, “এই জন্যে পৃথিবীর যত টেররিস্ট, যত জঙ্গী আছে তারা যদি কোনোভাবে এই ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার খবর পায় তাহলে এটা নোর জন্যে পাগল হয়ে যাবে। এইজন্যে এটা মিলিওন মিলিওন ডলার দামী।”
বগা গলা খ্যাকারী দিয়ে বলল, “আমরা এখন এইটা বিক্রি করব?”
ঝুম্পা বলল, “কেমন করে বিক্রি করবি। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বলবি, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা মাত্র মিলিওন ডলার। ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা মাত্র মিলিওন ডলার আগে আসলে আগে পাবেন।
ঝুম্পার কথা শুনে আমরা সবাই হি হি করে হাসলাম। আমি বললাম, “সেভাবে বিক্রি করতে হবে না। কিন্তু কর্নেল কায়েস চাইলে কী গভমেন্টের কাছে বিক্রি করে ফেলতে পারবেন না? মিঠুন তাহলে বড়লোক হয়ে যাবেআমরা মিঠুনের সাথে থাকব।”
মিঠুন চশমার ভিতর দিয়ে আমার দিকে তাকাল, বলল, “তারপর যদি এইটা দিয়ে কেউ কোনোদিন একটা বোমা বানায় আর সেই বোমার কারণে কোনো মানুষ মারা যায়?”
“তাহলে কী?”
“তাহলে সেই মানুষটাকে মারার জন্যে আমি দায়ী হব।” মিঠুন মুখ শক্ত করে বলল, “আমি মানুষ মারার জন্য দায়ী হতে চাই না।”
ফারা এতক্ষণ পর সোজা হয়ে বসল, জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কী করবি?”
“আমি ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা কাউকে দিব না, এটাকে ধ্বংস করে ফেলব।”
ফারা কিছুক্ষণ মিঠুনের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মিঠুনের পিঠে জোরে একটা থাবা দিয়ে বলল, “সাবাশ! এই তো চাই!”
মিঠুন থাবা খেয়ে সোজা হয়ে বসল, “কী চাস?”
“তুই যেটা বলছিস! কোনো দিন কোনো মানুষ মারার যন্ত্র বানাব না”
আমি দুর্বল ভাবে বললাম, “তাহলে কাউকে বলবিও না?”
“না। কীভাবে বানিয়েছি সেটাও কাউকে বলব না। কেউ যেন জানতে না পারে।”