বড় অফিসার লাফিয়ে পিছনে সরে এলেন, মিঠুন চিৎকার করে বলল, “সাবধান! সাবধান!”
তারপর সে খুব সাবধানে জামশেদের পকেট থেকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা বের করে আনল। জামশেদ কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নড়ল না, অবার হুশ করে প্লাজমা বের হয়ে তার চোখ মুখ ঝলসে দেবে সে তার ঝুঁকি নিল না।
এর মাঝে মিলিটারীর পোষাক পরা আরো কিছু মানুষ চলে এসেছে। তারা জামশেদকে ধরে নিয়ে গেল। মুখের একপাশে ঝলসে গিয়ে তাকে এখন কেমন জানি কার্টুনের মত দেখাতে থাকে। বড় অফিসারটা আরো কিছু ফোন করলেন এবং আমরা তখন বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকলাম। জরুরী কাজকর্ম শেষ করে বড় অফিসার আমাদের দিকে তাকালেন, বললেন, “আমি কর্নেল কায়েস। আমাকে বলবে কী হয়েছে?”
বগা বলল, “খিদে পেয়েছে স্যার।”
ঝুম্পা বলল, “আজকে যখন বাসায় যাব মামী আমাকে খুন করে ফেলবে।”
কর্নেল কায়েস ঝুম্পার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বললেন, “ইয়াং লেডি তোমাকে যেটুকু দেখেছি তাতে মনে হয় না তোমাকে কেউ কখনো খুন করতে পারবে না। তারপরও বলছি, তোমার মামী যেন তোমাকে খুন করতে না পারেন আমি সেটা দেখব। আমার উপর ছেড়ে দাও।”
ঝুম্পা বলল, “বাচা গেল।”
কর্নেল কায়েস তখন টেলিফোনে কোথায় জানি খাবারের অর্ডার দিলেন, বললেন, “কুইক। দশ মিনিটের মাঝে ডেলিভারী চাই।” তারপর আবার আমাদের দিকে তাকালেন, বললেন, “তোমদের ওপর আমার লোকজন যে অত্যাচার করছে আমি সেজন্যে ক্ষমা চাইছি। আই এম রিয়েলী সরি।”
একজন বড় মানুষ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এভাবে কথা বললে উত্তরে কী বলতে হয় আমরা জানি না, ফারা বলল, “না-না স্যার, আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন। আপনার কী দোষ?”
“আমার অফিসার যদি অন্যায় করে তার দায় দায়িত্ব আমার। জামশেদ কিন্তু খারাপ অফিসার ছিল না, কিন্তু তোমরা যেটাকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা বলছ সেটা নিশ্চই অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিষ এর ভেতরে নিশ্চয়ই মিলিওন মিলিওন ডলার আছে তাই লোভের কারণে এটা ঘটেছে। যখন আমরা টের পেয়েছি তোমরা আকাশে ওড়াওড়ি করছ তখন থেকে আমাদের ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তোমাদের কথাবার্তা রেকর্ড করেছি তোমাদের ব্যাগে মাইক্রোট্রান্সমিটার বসিয়েছি। আমি অনেক কথা শুনেছি এবং খুবই অবাক হয়েছি। তারপর তো দেখতেই পেলে কী হয়েছে। যাই হোক এখন বল দেখি কী হচ্ছে। তোমাদের মুখ থেকে শুনি?”
আমরা কর্নেল কায়েসকে সবকিছু বললাম, কোনো কিছু গোপন করলাম না। মিঠুন সবকিছুই একটু একটু করে বলে তখন আমাদের সেটা বেশী বেশী করে বলতে হয়। কর্নেল কায়েস সবকিছু শুনে অবিশ্বাসের ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বললেন, “ও মাই গুডনেস! কী আশ্চর্য!”
তারপর বেশ কিছুক্ষণ নিজের মনে কিছু একটা চিন্তা করলেন তারপর বললেন, “তোমরা যেটাকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা বলছ সেটা যেহেতু তোমরা আবিষ্কার করেছ কাজেই এটার মালিক তোমরা। কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। এটা থেকে যতখুশী সম্ভব এনার্জী পাওয়া যাবে সে জন্যে নয়, এটা দিয়ে অস্ত্র তৈরি করা যাবে সেজন্যে। এখন আমরা এটাকে তোমাদের কাছে রাখতে দেব কারণ এটাকে সেফলি কীভাবে রাখা যায় সেটা তোমরাই সবচেয়ে ভালো জান। তোমরা ছোট হলেও তোমাদের যথেষ্ট দায়িত্ববোধ আছে।”
আমাদেরকে নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশংসার কথা বলে না তাই কর্নেল কায়েসের কথাগুলো শুনে আমাদের খুব অস্বস্তি হতে থাকে। আমরা একটু নড়ে চড়ে বসলাম। কী বলব বুঝতে পারলাম না।
কর্নেল কায়েস বললেন, “আমরা পুরো বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করি তারপর তোমাদের ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা নিয়ে কী করা যায় সেটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। যতক্ষণ সিদ্ধান্ত নেয়া না হচ্ছে তোমাদের কাছে রেখো তোমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই আমি আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে তোমাদের প্রটেকশান দিব।”
বড় মানুষেরা যেভাবে গুরুগম্ভীর আলোচনার পর গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ে আমরা সেভাবে মাথা নাড়লাম। তারপর কর্নেল কায়েস তার গাড়ী করে আমাদের সবাইকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আমাদেরকে তার গাড়ীতে তুলে নিলেন।
১১. দৈনিক মহব্বত
পরদিন সকালে বগা এক কপি দৈনিক মহব্বত নিয়ে হাজির হল। প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লেখা “আকাশে রহস্যময় মহাকাশযান। দিনভর নিরাপত্তা বাহিনীর গোপনীয় কর্মকাণ্ড।” নিচে আমাদের ফ্লাইং মেশিনের ঝাপসা একটা ছবি, নিচ থেকে ক্যামেরা দিয়ে কেউ ছবি তুলেছে, ভালো করে কিছু বোঝা যায় না। খবরে অনেক কিছু আজগুবি কথা বার্তা লেখা। কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের একজন প্রফেসরের বিশাল সাক্ষাতকার। ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা নানারকম স্পেসসিপের ছবি। রহস্যময় মহাকাশযান নিয়ে অনেক রকম বানানো গল্প।।
আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে দৈনিক মহব্বতটা পড়লাম। মিঠুন সাবধানে তার বুক পকেটে রাখা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা রাখা শিশিটা ছুঁয়ে দেখে নিচু গলায় বলল, “জানাজানি হলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে।”
আমি বললাম, “ঝামেলার কী আছে? কর্নেল কায়েস আমাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। সমস্যাটা কী?”
মিঠুন বড় মানুষের মত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়।”
“কোন জায়গায়?”
ঠিক তখন আরো কয়েকজন চলে এল বলে মিঠুন আর কথাটা বলতে পারল না।
আমরা কথা বলতে বসলাম সেকেন্ড পিরিয়ডে। কোন ক্লাশে কে আছে কে নাই সেটা নিয়ে মহব্বতজান স্কুলে কেউ মাথা ঘামায় না তাই ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে ল্যাবরেটরিতে একত্র হতে আমাদের কোনো সমস্যাই হল না।