জামশেদের কথাটা পছন্দ হল না, হুংকার দিয়ে বলল, “আমি এতো কথা বুঝি না। সবকিছু খুলে দিয়ে শুধু শিশিটা দে।”
“সম্ভব না। আপনি সাবধানে নিয়ে যান তাহলেই তো হল
ঠিক তখন বাইরে একটা গাড়ীর শব্দ হল আর সাথে সাথে জামশেদের মুখটা কেমন যেন ফ্যাকশে হয়ে গেল। জামশেদ বলল, “ওহ নো!”
আমাদেরকে কেউ বলে দেয়নি, কিন্তু আমরা হঠাৎ বুঝে গেলাম জামশেদের বড় অফিসার নিজের চোখে সবকিছু দেখার জন্যে চলে এসেছেন। জামশেদ হাত বাড়াল, “শিশিটা দে।”
শিশিটা আমার হাতে, আমি বললাম, “দেব না।”
সাথে সাথে জামশেদ রিভলবারটা মিঠুনের মাথায় ধরল, বলল “তোরা এখনো বুঝতে পারছিস না কার সাথে কী নিয়ে ইয়াকী করছিস। খেলতে খেলতে এই জিনিষ তোরা তৈরী করেছিস কিন্তু এখন এটা আর খেলনা না। এটার জন্য সারা পৃথিবীর সবাই ছুটে আসছে। সময় নষ্ট করবি না। দে।”
“দেব না।” মিঠুন বলল, “দিয়ে দে ইবু।”
“সত্যি দিয়ে দেব?”
“হ্যাঁ। দিয়ে দে।”
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা জামশেদের হাতে তুলে দিলাম। জামশেদ এটা সাবধানে নিল তারপর বুক পকেটে রাখল, তার দুটো সরিয়ে রাখল যেন একটা আরেকটার সাথে ভুলে লেগে না যায়। তারপর রিভলবারটা প্যান্টে গুজে নিয়ে ঘর থেকে বের হল।
আমরাও পিছন পিছন বের হলাম, দেখলাম বাসার সামনে একটা জীপ থেমেছে আর সেখান থেকে মাঝ বয়সী একজন মানুষ নেমে আসছে। মানুষটি জামশেদকে দেখে বলল, “এই যে জামশেদ। আমি তোমাকে খুঁজছি।”
“জী স্যার।” জামশেদ বলল, “জী স্যার ইয়ে মানে আমি স্যার”
“ছেলে-মেয়েগুলো কোথায়? তোমার সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন মনে হল পিছন থেকে একটা বাচ্চা–”
“জী স্যার। জী স্যার। বাচ্চা আছে স্যার। জামশেদ হাত দিয়ে সাবধানে বুক পকেটটা ধরে রেখে বলল, “আমি আসছি স্যার।”।
“তুমি আসছ মানে? কোথা থেকে আসছ? আমি ছেলেমেয়েগুলোকে দেখতে চাই।”
“অবশ্যই দেখবেন স্যার।” বলে জামশেদ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেতে থাকে। আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, সে এক্ষুণি এক দৌড় দিয়ে পকেটে করে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যাবে। আমি তখন চিৎকার করে বললাম, “ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ধর ধর।”
ধর ধর কথাটাতে একটা ম্যাজিক আছে। যখনই ধর ধর বলা হয় তখনই যাকে বলা হয় সে কেমন জানি ভয় পেয়ে জান নিয়ে পালাতে থাকে। এখানেও তাই হল, হঠাৎ করে জামশেদ চোরের মত পালাতে শুরু করল। আর আমরা ধর ধর বলে তাকে ধাওয়া করতে লাগলাম। সবার আগে ছুটে গেল ঝুম্পা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম সে যে কোনো মুহূর্তে জামশেদকে ল্যাঙ মেরে নিচে ফেলে দিয়ে ঝুম্পা বুকের উপর চেপে বসবে।
তখন যেটা ভয় পাচ্ছিলাম ঠিক সেটা ঘটল। জামশেদ হঠাৎ দাড়িয়ে বলল, “খামোশ।” তারপর প্যান্টে গুজে রাখা রিভলবারটা বের করে আমাদের দিকে তাক করে ধরে বলল, “এক পা এগোলেই শেষ করে দেব।” বলে সে যে ঠাট্টা করছে না সেটা বোঝানোর জন্যে রিভলবারটা দিয়ে উপরের দিকে গুলি করল। গুলির শব্দ শুনে আমরা সবাই কেমন যেন ভ্যাবেচেকা খেয়ে গেলাম।
জামশেদকে হঠাৎ কেমন যেন হিংস্র দেখায় সে রিভলবারটি এদিক সেদিক নাড়তে থাকে তারপর গাড়ীর ড্রাইভারের দিকে তাক করে বলল, “চাবি।“
ড্রাইভার বলল, “চাবি? কেন?”
জামশেদ হুংকার দিল, বলল, “কথা বলবে না, চাবি দাও।”
ড্রাইভার বড় অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার কী করব?”
“দিয়ে দাও। চাবিটা দিয়ে দাও।”
ড্রাইভার পকেট থেকে চাবিটা বের করে জামশেদের হাতে ধরিয়ে দিল।
জামশেদ গাড়ীটার দরজা খুলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করল, ঠিক তখন ঝুম্পা ছুটে গিয়ে চিৎকার করে পিছন থেকে জামশেদের গলা ধরে ঝুলে পড়ল।
সাথে সাথে একটা তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল, জামশেদ ঝুম্পাকে ঝেড়ে ফেলার জন্যে একটা ঝাঁকুনি দিল, কোনো লাভ হল না। ঝুম্পা ঝুলেই রইল। আমরাও ছুটে গেলাম জামশেদকে ধরার চেষ্টা করলাম, আর এই হুটোপুটির মাঝে গাড়ীর ড্রাইভার জামশেদের মুখে একটা ঘুষি মেরে দিল। বগা তার চিকন পা দিয়ে জামশদকে লাথি দিল, আর বারান্দা থেকে বড় অফিসার, “সাবধান! সাবধান! গুলি করে দেবে–গুলি করে দেবে—” বলে চিৎকার করতে করতে নিচে নেমে এলেন।
জামশেদ সত্যি সত্যি কয়েকটা গুলি করল, কিন্তু কপাল ভালো সেটা করো গায়ে লাগল না। ড্রাইভার জামশেদকে আরেকটা ঘুষি দিয়ে তাকে চেপে ধরল, বড় অফিসার এসে জামশেদের রিভলবার ধরে রাখা হাতটা মুচড়ে ধরলেন আর জামশেদ যন্ত্রণার শব্দ করে রিভলবারটা ছেড়ে দিল।
সারাক্ষণ মিঠুন চিৎকার করে যাচ্ছিল, জামশেদকে নিয়ে হুটোপুটির কারণে কেউ তার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিল না, জামশেদকে কাবু করার পর সবাই তার চিৎকার শুনতে পেল সে বলছে, “পকেটে ব্ল্যাক হোলের বাচ্চা পকেটে ব্ল্যাক হোলের বাচ্চা সাবধান!”
জামশেদকে ড্রাইভার এবং আমরা সবাই চেপে ধরে রেখেছি, বড় অফিসারের হাতে রিভলবার। রিভলবার হাতে ধরে রেখে বড় অফিসার জামশেলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন— তারপর বললেন, “তুমি? জামশেদ, তুমি? কী করছ তুমি? কী করছ?”।
জামশেদ মাথা নিচু করে ফেলল। বড় অফিসার গিয়ে তার বুকের কাপড়টা খপ করে ধরলেন, মিঠুন চিলের মত চিৎকার করে উঠল ঠিক তখন জামশেদের পকেটে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা থেকে হুশ করে ভয়ংকর প্লাজমা বের হয়ে সাপের মত এঁকেবেঁকে বের হয়ে এল, জামশেদ একটা গগন বিদারী চিৎকার করে তার মাথা সরিয়ে নিল কিন্তু ততক্ষণে তার একটা কান ঝলসে গেছে, ভুরু মাথার চুল পুড়ে মূহুর্তের মাঝে তাকে অদ্ভুত একটা কাক তাড়ুয়ার মত দেখাতে লাগল।