জামশেদ মুখ খিচিয়ে বলল, “আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আয়।”
মিঠুন বলল, “ফ্লাইং মেশিন বানাতে কয়েক সপ্তাহ লেগেছে আমি দশ মিনিটে সেটা কেমন করে খুলে ফেলব?”
“পুরোটা খুলতে কে বলেছে? শুধু ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা খুলে আমাকে দিবি। আয় আমার সাথে।
মিঠুন নড়ল না। জামশেদ তখন রিভলবারটা ঝুম্পার দিকে তাক করল, বলল, “আমি দশ পর্যন্ত গুনব। এর মাঝে যদি না আসিস এই বেজন্মাকে গুলি করে দিব।”
ঝুম্পা বলল, “এর কথা বিশ্বাস করিস না মিঠুন। গুলি করা এতো সোজা না?”
আমরা ঝুম্পার সাহস দেখে অবাক হলাম। ঝুম্পা ঠিকই বলে, এই সাহসটাই তার বড় সমস্যা। জামশেদ গুনতে শুরু করল আর পাঁচ পর্যন্ত যেতেই মিঠুন বলল, “ঠিক আছে আমি চেষ্টা করতে পারি।”
জামশেদ বলল, “আয় তাহলে। অন্য সবাই এই ঘরের মাঝে থাক।”
মিঠুন বলল, “একা আমার পক্ষে সম্ভব না। সবাইকে লাগবে।”
জামশেদ ধমক দিয়ে বলল, “সবাইকে পাবি না। খালি একজনকে নিতে পারবি। কাকে নিবি?”
মিঠুন বলল, “আমার সবাইকে লাগবে। অনেক কিছু খুলতে হবে।”
জামশেদ তখন হাল ছেড়ে দিল, বলল, “ঠিক আছে, সবাই আয় তাহলে। সাবধান কেউ কোনো তেড়িবেড়ি করিব না। খুন করে ফেলব।”
আমরা একে একে ঘর থেকে বের হলাম। জামশেদ কেমন জানি ছটফট করছে, মনে হতে থাকে হঠাৎ করে তার ভেতরে কোনো একটা তাড়া চলে এসেছে। আমাদের মাথার পিছনে রিভলবারটা ধরে আমাদেরকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনে। তারপর বারান্দা দিয়ে আমাদের হটিয়ে নিয়ে গেল। ঘরের শেষ মাথায় হলঘরের মত একটা ঘরের সামনে গিয়ে সে চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকল। সুইচ টিপে আলো জ্বালাতেই আমরা দেখতে পেলাম ঘরের মাঝখানে আমাদের ফ্লাইং মেশিন। জামশেদ কাছাকাছি রাখা ছোট একটা টেবিলের ওপর থেকে একটা টুল বক্স নিয়ে মিঠুনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “নে, খোল।”
মিঠুন টুল বক্সটা মেঝেতে উপুর করে ঢেলে দিল, চারিদিকে স্কু ড্রাইভার, প্লয়ার্স, ফাইল, হ্যাকস, সল্ডারিং আয়রণ এইসব ছাড়িয়ে পড়ল। মিঠুন মুগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ এগুলো দেখল তারপর একটা ডায়াগনাল কাটার নিয়ে কাজ শুরু করে দিল। জামশেদ পা দাপিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি।”
মিঠুন ফ্লাইং মেশিনের তলায় ঢুকে কিছু জিনিষ কেটে ফেলল। স্কু ড্রাইভার দিয়ে বেশ কয়েকটা স্কু নিচের অংশটা নামিয়ে আনে। আমরা মিঠুনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলাম, তার কাজে তাকে সাহায্য করতে লাগলাম। ফ্লাইং মেশিন ওড়ার সময় যে টিউবগুলো দিয়ে আগুনের মত গরম বাতাস বের হয় সেটা খোলার পর মূল ইঞ্জিনটা চোখে পড়ল। স্টেনলেস স্টিলের একটা সিলিন্ডার সেখান থেকে অনেকগুলো তার বের হয়ে এসেছে। মিঠুন সাবধানে সিলিন্ডার আর তার বের করে আনে, তারের এক মাথায় কয়েকটা নয় ভোল্টের ব্যাটারী ঝুলছে।
মিঠুন সব কিছু মেঝেতে রেখে জামশেদকে বলল, “এই যে এখানে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা।”
জামশেদ অধৈর্য হয়ে বলল, “এতো বড় সিলিন্ডার কেমন করে নিব। খুলে বের করে দে যেন পকেটে নেয়া যায়। আমি জানি তুই এটা পকেটে নিয়ে ঘুরিস। তোদের সব কথা আমার রেকর্ড করা আছে।”
কাজেই মিঠুন সিলিন্ডারটা খুলতে শুরু করে, ভেতরে ছোট একটা শিশি যার দুই পাশে এলুমিনিয়ামের ফয়েল লাগানো সেখান থেকে দুটো তার বের হয়ে এসেছে, সেগুলো ব্যাটারীর সাথে লাগানো। তার দুটো একসাথে করলেই বোতল থেকে আগুনের হলকার মত প্লাজমা বের হয়ে আসবে। যদি কোনোভাবে শিশিটা জামশেদের দিকে মুখ করে তার দুটি ছুইয়ে দেয়া যায় তাহলেই জামশেদ পুড়ে কাবাব হয়ে যাবে। কিন্তু একটা মানুষকে পুড়িয়ে মারা মিঠুনের পক্ষে কিংবা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমাদের হাতে এতো বড় একটা অস্ত্র তারপরেও আমরা কিছু করতে পারছি না, জামশেদ আমাদের মাথার পিছনে রিভলবার ধরে রেখেছে, ব্যাপারটা সেও জানে।
মিঠুন বলল, “এই শিশির ভেতরে, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা আছে।”
“প্রমাণ করে দেখা।”
“খুব ডেঞ্জারাস। একসিডেন্ট হতে পারে।”
“আই ডোন্ট কেয়ার। কানেকশান দিয়ে দেখা ভেতর থেকে এনার্জী বের হয় তা না হলে খুন করে ফেলব।”
আমি বললাম “মিঠুন, আমাকে শিশিটা দে আমি ধরে রাখি। তুই কানেকশান দে।”
“ছেড়ে দিস না যেন। অনেক জোরে ধাক্কা দিবে।”
“ছাড়ব না।”
মিঠুন তখন আমার হাতে শিশিটা দিয়ে তার দুটো এক মুহূর্তের জন্য স্পর্শ করল। আমার মনে হল হঠাৎ করে শিশিটা ধাক্কা দিয়ে পিছনে যেতে চাইছে, আমি শক্ত করে ধরে রাখলাম আর তখন ভেতর থেকে নীল রংয়ের আলোর একটা ঝলকানী বের হয়ে সাপের মত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ছাদকে আঘাত করল। ছাদ থেকে কিছু প্যালেস্তারা ঝুরঝুরি করে নিচে খসে পড়ল।
জামশেদের মুখে বিচিত্র একটা হাসি ফুটে উঠল, জিব দিয়ে সুড়ৎ করে ঝােল টেনে নেয়ার মত শব্দ করে বলল, “চমৎকার। এখন ব্যাটারীর কানেকশন খুলে দে।”
মিঠুন শিশির সাথে লাগানো ব্যাটারী তার এলুমিনিয়াম ফয়েল সবকিছু দেখে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “সময় লাগবে। শিশিটা ভেঙ্গে যেতে পারে এটা এইভাবে খোলা যাবে না।”
“কেন খোলা যাবে না?”
“এটা পুরোপুরি একটা সার্কিট। একটিভ সার্কিট। হঠাৎ করে টেনে খুলে দিলে যদি একটা ভোল্টেজ সার্জ যায় আমরা সবাই উড়ে যাব। ছোটখাট একটা নিউক্লিয়ার বোমা হয়ে যাবে। এটা এভাবেই নিতে হবে, শুধু লক্ষ রাখতে হবে যেন তার দুটো ছুঁয়ে না যায়, কিংবা সার্কিটে হাত না লাগে।”