জামশেদ মনে হল তার বড় অফিসারকে খুব ভয় পায়। প্রত্যেকটি বাক্যের আগে এবং পরে স্যার বলছে। তার বড় অফিসার মনে হয় ফ্লাইং মেশিন নিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করল, কারণ জামশেদ মুখ শক্ত কর বলল, “নো স্যার। আকাশে ওড়ার ভেহিকেলটা ইজ নট সায়েন্টিফিক স্যার। এই বদ ছেলেমেয়ে গুলোর মাথায় অনেক বদবুদ্ধি স্যার। একটা ঝুড়ির সাথে। হান্ড্রেডস এন্ড হান্ড্রেডস অফ বেলুন লাগিয়েছে স্যার। গ্যাস বেলুন। এতো বেলুন কোথা থেকে ম্যানেজ করেছে গড় অনলি নোজ স্যার। আমাদের রাডারে বেলুন ধরা পড়েনি, শুধু ঝুড়ি আর ঝুড়ির মাঝে ছেলে মেয়েগুলো ধরা পড়েছে। সেই জন্যে মনে হয়েছে কোনো ধরণের ফ্লাইং মেশিন স্যার। আসলে খুব জোরাস একটা সিচুয়েশন স্যার। স্যার, চরম পাবলিক নুইসেন্স স্যার। যে কোনো রকম একসিডেন্ট হয়ে যেতে পারত স্যার। বদ ছেলেমেয়ে গুলো মারা যেতে পারত স্যার। তাদের খুব কপাল ভাল আমরা তাদের রক্ষা করেছি স্যার।”
আমাদের মনে হল জামশেদের বড় অফিসার এবারে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা নিয়ে কোনো একটা প্রশ্ন করল, জামশেদ তখন হা হা করে হাসার মত একটা শব্দ করল, বলল, “স্যার এটা একটা জোক স্যার। মাইক্রো রাকহোল, মাস এনার্জী কনভারসান এগুলো একেবারেই বাজে কথা স্যার। এই ছেলেমেয়েগুলো এই কথাগুলোর মানে জানা দূরে থাকুক শব্দগুলো। বানানই করতে পারবে না স্যার। নিজেদের ভিতরে এগুলো নিয়ে কথা বলতো, ভাব দেখাতো স্যার। ফাজিল ছেলেমেয়ে তো, কী বলে কী না বলে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই স্যার।”
বড় অফিসার মনে হল জামশেদের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করল না। জামশেদকে অনেকভাবে বোঝাতে হল যে আমরা খুবই ফালতু টাইপের ছেলে মেয়ে একটা ঝুড়ির মাঝে অনেকগুলো গ্যাস বেলুন বেঁধে আকাশে উড়ে গেছি। শেষ পর্যন্ত মনে হয় অফিসারটা জামশেদের কথা বিশ্বাস করল। জামশেদ তখন বলল, “এই ছেলেমেয়েগুলোকে আজ রাত আটকে রেখে কাল ছেড়ে দিব স্যার। স্কুলে বাসায় সব জায়গায় ওয়ার্নিং দিয়ে দেব স্যার। স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করব স্যার। এই ছেলে মেয়েগুলো খুবই ফালতু এদেরকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া ঠিক হবে না স্যার।”
জামশেদ ঠিক যখন টেলিফোনটা রেখে দেবে তখন ঝুম্পা চিৎকার করে উঠল, “মিথ্যা কথা! সব মিথ্যা কথা।”
জামশেদ সাথে সাথে টেলিফোনে মাইক্রোফোনটা হাত দিয়ে চেপে ধরে যেন ঝুম্পার কথাটা অন্যদিকে শুনতে না পায়। বড় অফিসার শুনতে পেলো কী না বোঝা গেল না জামশেদ টেলিফোনটা কানে লাগিয়ে কিছু একটা শুনল, তারপর টেলিফোনটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর টেলিফোনটা পকেটে রেখে ঝুম্পার দিকে তাকিয়ে হিংস্র গলায় বলল, “তোর এতো বড় সাহস?”
ঝুম্পা বলল, “আমি জানি। এইটা আমার বড় সমস্যা।”
“তোর কল্লা আমি ছিড়ে ফেলব।”
“সমস্যা নাই। আমার কল্লা আমার কোনো কাজে লাগে না।”
জামশেদ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, ঝুম্পার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল, তারপর তার সোনার দাঁত কিড়মিড় কিড়মিড় করতে করতে ঝুম্পার দিকে এগিয়ে এল। কাছাকাছি এসে খপ করে ঝুম্পার চুল ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু হঠাৎ কী ঘটে গেল বুঝতে পারলাম না, দেখলাম “বাবাগো” বলে জামশেদ তার দুই পায়ের মাঝখানে ধরে মাটিতে পড়ে গেছে। ঝুম্পা প্রচণ্ড একটা লাথি মেরেছে, এমন বেকায়দা জায়গায় মেরেছে যে জামশেদের মতন মানুষ পর্যন্ত কাবু হয়ে গেছে।
জামশেদ চোখ বন্ধ করে কয়েকটা নিশ্বাস নিল, তারপর ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে একটা রিভলবার বের করে আনে। রিভলবারটা সরাসরি ঝুম্পার দিকে তাক করে ঝুম্পাকে অসম্ভব খারাপ একটা গালি দিল, তারপর বলল, “বেজন্ম কোথাকার। তুই জানিস না তুই কী করেছিস? আমাকে তুই চিনিস না?”
জামশেদ কী করত আমরা জানি না। মনে হয় আসলেই গুলী করে দিত, কিন্তু ঠিক তখন জামশেদের পকেটে টেলিফোনটা বেজে উঠে। জামশেদ এক হাতে রিভলবারটা ঝুম্পার দিকে তাক করে অন্য হাতে টেলিফোনটা বের করে নম্বরটা দেখল সাথে সাথে তার মুখের চেহারা পাল্টে গেল। যে টেলিফোনটা নিজের কানে লাগিয়ে চাপা গলায় বলল, “ইয়েস।”
জামশেদ টেলিফোনটা হাত দিয়ে আড়াল করে রেখে চাপা গলায় কথা বলতে থাকে। কথা বলে ইংরেজীতে ইংরেজী আমি ভালো বুঝি না। কী বলছে আমরা ভালো করে শুনতেও পাচ্ছি না, সে কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের এক কোনায় সরে গেল। কথা শুনতে না পারলেও আঁমাদের বুঝতে সমস্যা হল না যে কোনো কিছু নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে, “মিলিওন ডলার” কথাটা মনে হয় কয়েকবার বলা হল। আরেকটা শব্দ শুনতে পেলাম সেটা হচ্ছে “নিউক্লিয়ার বম্ব”।
জামশেদ কথা শেষ করে আমাদের দিকে তাকাল, তার মুখ দেখে মনে হল সে আপাতত ঝুম্পাকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছে। তার চোখে মুখে এক ধরনের অস্থিরতা। রিভলবারটা মিঠুনের দিকে তাক করে বলল, “সাইনটিস্ট! তোকে দশ মিনিট সময় দিচ্ছি। এর মাঝে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা বের করে আমার হাতে দিতে হবে। আয় আমার সাথে।”
জামশেদ একটু আগে আমাদের সাথে তুমি তুমি করে বলছিল, বেকায়দা জায়গায় ঝুম্পার লাথি খেয়ে এখন তুই তুই করে বলছে। জামশেদ রিভলবারটা দিয়ে মিঠুনকে আবার ইঙ্গিত করল, “আয় তাড়াতাড়ি।”
মিঠুন মাথা নাড়ল, বলল, “সম্ভব না।”