ঝুম্পা থাবা দিয়ে বলল, “অবশ্যই বলে দিব।”
বগা বলল, “একটা সাংবাদিক সম্মেলন করতে হবে। সেখানে মিঠুন একটা লিখিত বক্তব্য দেবে। তারপর প্রশ্ন এবং উত্তর।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “সাংবাদিকেরা যদি না আসে?”
ঝুম্পা আরেকবার ফ্লাইং মেশিনের গায়ে থাবা দিয়ে বলল, “আসবে না মানে? একশবার আসবে। সাংবাদিকদের বাবারা আসবে। এই রকম ফ্লাইং মেশিন তারা বাপের জন্মে দেখেছে?”
আমি বললাম, “ইন্টেলিজেন্সের লোকজন আমাদের পিছনে লেগে গেছে, সাংবাদিকদের বলে সবাইকে জানিয়ে দিলে ওরা আর কিছু করতে পারবে না।”
মিঠুন মাথা চুলকে বলল, “কিন্তু সাংবাদিকদের কী বলব?”
বগা বলল, “কিছু বলতে হবে না, ফ্লাইং মেশিনটা চালিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসবি। সব সাংবাদিকেরা অধৈর্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা আকাশ থেকে নেমে আসলাম। চিন্তা করতে পারিস কী মজা হবে?”
ফারা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমরা? আমরা সবাই?”
মিঠুন বলল, “হ্যাঁ। আমি একা একা যাব নাকি? আমার কী মাথা খারাপ হয়েছে?”
ফারা জিজ্ঞেস করল, “আমরা গেলে আমাদেরকেও কী প্রশ্ন করবে?”
আমি বললাম, “করতেও পারে।”
ফারা বলল, “সর্বনাশ! আমি যে কিছুই জানি না।”
“না জানার কী আছে?” আমি বললাম, “বলবি পৃথিবীর মানুষ মাত্র শতকরা চার ভাগ পদার্থের কথা জানে। যে ছিয়ানব্বই ভাগের কথা জানে না–এটা হচ্ছে সেই ছিয়ানব্বই ভাগের ব্ল্যাকহোল।” আমি মিঠুনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ঠিক বলেছি না রে মিঠুন?”
মিঠুন বলল, “ঠিক বলেছিস।” ফারা বলল, “এইটুকু বললেই হবে?”
মিঠুন বলল, “আরেকটু বলতে পারিস। বলবি এই ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাকে ইলেকট্রিক ফিল্ডের মাঝে রাখলে তার ভরটা শক্তিতে পাল্টে যায়।”
আমি বললাম, “আইনস্টাইনের ই ইকুয়েলস টু এম সি স্কয়ার হিসাবে, তাই না মিঠুন?”
মিঠুন বলল, “ঠিক বলেছিস। এটাই হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার আসল গুরুত্ব। পৃথিবীর এনার্জি ক্রাইসিস মিটিয়ে দিতে পারবে।”
আমি বললাম, “এই তো হয়ে গেল। সাংবাদিক সম্মেলনে আর কিছু বলার দরকার নাই। তখন তাদেরকে খালি ফ্লাইং মেশিনটা দেখাতে হবেদেখলেই সবাই ট্যারা হয়ে যাবে।”
ঝুম্পা বলল, “ইবুর কথা ঠিক। সবাই ট্যারা হয়ে যাবে। ভুবন ট্যারা।”
মিঠুন বলল, “খালি একটা সমস্যা।”
বগা জিজ্ঞেস করল, “কী সমস্যা?”
“আমরা তো এইটাকে বলছি ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা। সেইটাতো বৈজ্ঞানিক নাম হল না। একটা বৈজ্ঞানিক নাম দিতে হবে। সেইটা কী হতে পারে?”.
আমি নামটা বলার চেষ্টা করার আগেই ঝুম্পা বলল, “কেন? এইটার নাম হবে মিঠুনিয়াম।”
মিঠুন চমকে উঠে বলল, “মিঠুনিয়াম?”
“হ্যাঁ। এটা তুই আবিষ্কার করেছিস তাই এটা হতে হবে তোর নামে মিনিয়াম।”
আমরা মাথা নাড়লাম, বললাম, “হ্যাঁ ঠিকই বলেছে। এটার নাম হবে মিনিয়াম।”
মিঠুন দুলে দুলে হাসল, বলল, “তোদের কারো মাথার ঠিক নাই।”
“কেন?”
“নিজের নাম ব্যবহার করে আবার নাম দেয়া যায় নাকী?”
বগা হাতে কিল দিয়ে বলল, “একশবার দেয়া যায়। আমাদের স্কুলের নাম কী মহব্বত জানের নামে হয় নাই?”
আমরা বললাম, “হয়েছে হয়েছে।“
মিঠুন শুনতেই রাজী হল না, বলল, “হলে হয়েছে, আমার বেলা হবে না। আমি কিছুতেই এটার নাম মিঠুনিয়াম দিব না।”
ফারা বলল, “তোরা শুধু শুধু তর্ক করছিস। আমার কী মনে হয় জানিস?”
“কী?”
“ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা খুব সুন্দর একটা নাম। এটার নাম থাকুক ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা।”
মিঠুন প্রতিবাদ করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ করে সে থেমে গিয়ে বলল, “সর্বনাশ!
“কী হয়েছে?”
“ঐ দেখ।”
মিঠুন হাত দিয়ে দূরে দেখাল, আমরা সবাই দেখলাম, অনেক দূরে একটা হেলিকপ্টার, সেটা আমাদের দিকে আসছে।
বগা বলল, “আমাদের ধরতে আসছে।”
ফারা জিজ্ঞেস করল, “আমাদেরকে কেন ধরতে আসবে? আমরা কী করেছি?”
আমি বললাম, “আমাদেরকে ধরতে আসছে না, এটা আসছে আমদের ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা কেড়ে নিতে।”
ফারা বলল, “সর্বনাশ!”
বগা বলল, “এখন কী করব?”
আমি বললাম, “পালা।” মিঠুন জিজ্ঞেস করল, “কোথায় পালাব?”
ঝুম্পা এদিক সেদিক তাকাল তারপর দূরে সাদা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল, “চল ঐ মেঘের ভিতরে লুকিয়ে যাই।”
“মেঘের ভিতরে?”
“হ্যাঁ।”
মিঠুনের মনে হল আইডিয়াটা পছন্দ হল। সে একটা হ্যান্ডেল টেনে ধরতেই ফ্লাইং মেশিন থরথর করে কেঁপে উঠে তারপর কাত হয়ে ঘুরে সেটা মেঘের দিকে ছুটে যেতে থাকে। আমরা পিছন ফিরে দেখলাম হেলিকপ্টারটা খুব জোরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আমরা এখন হেলিকপ্টারের ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে পেতে শুরু করেছি। মনে হচ্ছে এটা সোজাসুজি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
মিঠুন ফ্লাইং মেশিনটার বেগ বাড়াতে থাকে, আমাদের মুখে বাতাসের তীব্র ঝাপটা এসে লাগল, আমরা প্রচণ্ড বেগে মেঘের দিকে ছুটে যেতে লাগলাম। কিন্তু হেলিকপ্টারটা আমাদেরকে প্রায় ধরে ফেলছে। আমরা হেলিকপ্টারের পাইলট, তার পাশে বসে থাকা একজন মিলিটারী ধরণের মানুষকে দেখতে পেলাম। পেছনে আরো কিছু মানুষ আছে, সবাই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিঠুন হ্যান্ডেলটা টেনে রাখল আর হেলিকপ্টারটা যখন আমাদের খুব কাছে চলে এল তখন আমরা মেঘের ভেতর ঢুকে গেলাম। মেঘটা কী রকম হয় সেটা নিয়ে সব সময় আমার একটা কৌতূহল ছিল, মেঘের ভিতর ঢুকে পড়ার পর বুঝতে পারলাম এটা আসলে খুব ঘন কুয়াশার মত। আমরা ঘন কুয়াশার মত মেঘের ভিতরে সত্যি সত্যি লুকিয়ে যেতে পারলাম আর হেলিকপ্টারটা তখন থেমে গেল। এটা মেঘের বাইরে দাঁড়িয়ে রইল উপরে উঠল নিচে নামল আমাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করল কিন্তু আমাদের খুঁজে পেল না, আমরা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রইলাম।