ঝুম্পা হাতে কিল দিয়ে বলল, “চল তাহলে এখনই উড়ি।”
বগা বলল, “আমিও উড়ব।” ফারাহ বলল, “আমি কী দোষ করলাম?”
“একসাথে তো সবাইকে নেয়া যাবে না। এখন একসাথে মাত্র দুইজন উঠতে পারবে।”
আমি বললাম, “এটাকে আরো একটু বড় করে ফেল, সবাই যেন একসাথে উঠতে পারে।”
ঝুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ, সবাই একসাথে উঠতে পারলে বেশি মজা হবে।”
মিঠুন বলল, “আমি একটু সময় পেলে আরেকটু বড় করতে পারি। সবার বসার জন্যে চেয়ার লাগিয়ে দিলেই হয়। ইঞ্জিনটা আরেকটু পাওয়ার ফুল করতে হবে, ভোল্টেজ কন্ট্রোলটার সার্কিটটা একটু বদলে দিতে হবে। আর ওয়েট ব্যালেন্সটা দেখতে হবে। স্ট্যাবিলিটির জন্যে একটা ফিন দেয়া যেতে পারে—” মিঠুন বিড় বিড় করে অনেকটা নিজের সাথে কথা বলতে থাকে— তার কিছুই আমরা বুঝতে পারলাম না।
যাই হোক মিঠুন তখন তখনই তার ফ্লাইং মেশিনে আরো তিন চারজন বসার মতো জায়গা করার কাজে লেগে গেল।
আমাদের মহাব্বতজান স্কুলে কে ক্লাশে আছে কে নেই সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ক্লাশে এলেও আমরা কিছু শিখি না, না এলেও আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই যখন ক্লাশ হচ্ছে তখন মিঠুন ল্যাবরেটরিতে কাজ করতে লাগল, তার সাথে আমরা দুই একজন থাকতে লাগলাম তাকে সাহায্য করার জন্য।
বিকেল বেলা স্কুল ছুটির পর আমরা বাসায় যাচ্ছি তখন হঠাৎ একটা গাড়ী আমাদের পাশে থেমে গেল, গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে একজন মানুষ একটা দামী ক্যামেরা দিয়ে ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আবার গাড়ী চালিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি অবাক হয়ে মিঠুনের দিতে তাকিয়ে বললাম, “কী হল? আমাদের ছবি তুলল কেন?”
মিঠুন মাথা চুলকে বলল, “বুঝতে পারছি না। মনে হয় ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার কথা জানাজানি হয়ে গেছে।”
আমি বললাম, “জানাজানি হলে ক্ষতি কী? এখন সবাইকে বলে দিলেই হয়।”
মিঠুন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “বলে দিব?”
“দিবি না কেন?”
“কিন্তু কী বলব? নিজেই তো জানি না জিনিষটা কী। এটাকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা বলছি কিন্তু এটা কী বৈজ্ঞানিক নাম হতে পারে? বৈজ্ঞানিক নাম হতে হলে এটাকে বলা দরকার ব্ল্যাকিওন না হলে সুপার মাসিভ বোজন না হলে এনার্জী রিলিজিং পার্টিকেল–সংক্ষেপে ইআরপি—”
প্রত্যেকটা নামই আমার পছন্দ হল। আমি বললাম, “তুই ইচ্ছা করলে এর যে কোনো একটা নাম দিতে পারিস কিংবা তিনটা মিলিয়েই একটা নাম তৈরী করে ফেল।”
“তিনটা মিলিয়ে? ই আরপি সুপার মাসিভ বোজনিক ব্ল্যাকিওন?”
“হ্যাঁ, ফাটাফাটি শোনাচ্ছে নামটা।”
মিঠুনকে কেমন যেন চিন্তিত মনে হল। দুইজনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছি হঠাৎ করে বড় বড় সাইজের দুজন মানুষ আমাদের থামাল। সুন্দর চেহারা কিন্তু চুলগুলো ছোট করে ছাটা সে জন্যে কেমন জানি হাবা হাবা দেখতে। হা হাবা চেহারার একজন বলল, “এই ছেলে দাঁড়াও।”
আমাকে বলেছে না মিঠুনকে বলেছে বুঝতে পারলাম না তাই দুজনেই দাঁড়ালাম। হাবা চেহারার একজন মিঠুনকে ধরে ফেলে তার সার্ট প্যান্টে হাত বুলাতে লাগল। মিঠুন অবাক হয়ে বলল, “কী করছেন?”
“সার্চ করছি।”
“কেন সার্চ করছেন?”
“দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আমরা যে কোনো মানুষকে সার্চ করতে পারি।”
“আমি কী আইন শৃঙ্খলা নষ্ট করেছি?”
“করতেও তো পার।” মিঠুন বলল, “আপনি এটা করতে পারেন না। আমাকে যেতে দিন।”
“বেশী কথা বলবে না। তাহলে এক কিল দিয়ে তোমার মাথাটা শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে দিব।”
মানুষটার যা সাইজ আসলেই এক কিল দিয়ে মাথাটা শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে পারে। তাই মিঠুন আর কথা বলল না। মানুষটা মিঠুনের জামা কাপড় পরীক্ষা করল, তার ব্যাগ খুলে ভিতরে দেখল, হাত ঢুকিয়ে নাড়া চাড়া করল। মিঠুনের ব্যাগে অনেক রকম ছোট বড় শিশি বোতল কৌটা থাকে সেগুলি খুলে খুলে দেখতে লাগল।
মিঠুন বলল, “এগুলি খুলবেন না।”
“কেন খুলব না?”
“ভিতরে আমার দরকারী জিনিষ আছে।”
“কী তোমার দরকারী জিনিষ?” বলে হাবা চেহারার মানুষটা ছোট একটা কৌটা খুলতেই ভেতর থেকে ক্রুদ্ধ শব্দ করে কিছু বোলতা বের হয়ে মানুষটাকে আক্রমণ করল। মানুষটা চিৎকার করে ঝাড়া দিয়ে হাতে এবং ঘাড়ের দুইটা বোলতা সরাতে পারলেও নাকেরটা ঝাড়তে পারল না, সেটা একটা কামড় দিয়ে দিল। হাবা চেহারার মানুষটা গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে লাফাতে থাকে এবং দেখতে দেখতে তার নাকটা টমেটোর মতো ফুলে উঠে। একটু আগে তাকে হাবার মত লাগছিল এখন কেমন জানি কাটুনের মত দেখাতে থাকে।
মানুষটা নাক চেপে ধরে চিৎকার করে বলল, “কীঁ রেঁখেছ ব্যাঁগের ভিঁতর? মাঁথা খাঁরাপ নাঁকী?”
মিঠুন বলল, “আমি আগেই না করেছি। আমার কথা শুনেন নাই।”
অন্য মানুষটা তখন মিঠুনের ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে আমার ব্যাগটা সার্চ করতে থাকে। ব্যাগে কী খুঁজল কে বলতে পারে–এর ভিতরে কী আছে কে জানে, আমি নিজেও জানি না! ব্যাগ দেখা শেষ করে আমার জামা কাপড় দেখতে থাকে। শহরের রাস্তায় প্রকাশ্য দিনের বেলায় পাহাড়ের মতন দুইজন মানুষ আমাদের মত দুইটি বাচ্চাকে এভাবে সার্চ করছে দেখে এতোক্ষণে আশেপাশে ভীড় জমে গেছে। কলেজ ইউনির্ভার্সিটি ছাত্রের মত দেখতে একজন আমাদের জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
আমি বললাম, “বুঝতে পারছি না। মনে হয় ছেলে ধরা।”
আর যায় কোথায়। সাথে সাথে আমাদের ঘিরে থাকা মানুষগুলো হই হই করে উঠল, শুনতে পেলাম, কয়েকজন চিৎকার করে বলল, “ধর শালাদের।”