কাজেই পরের দিন আমরা আগের প্রজেক্টগুলো পাল্টে ফেললাম। সবগুলো ফাটাফাটি প্রজেক্ট—প্রথম দিকে গাইগুই করলেও শেষে মিঠুন আমাদের একটু সাহায্য করল বলে এগুলো শুধু ইয়ারকী মার্কা থাকল না। এর মাঝে বেশ ভালো মতন সায়েন্স পর্যন্ত ঢুকে গেল।
যেমন ধরা যাক অদৃশ্য কালির প্রজেক্ট। সিরিঞ্জের ভিতর টকটকে লাল রং কেউ এলেই তার গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়। যার গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় সে প্রথমে খুব রেগে ওঠে, রাগটা বাড়াবাড়ি হতেই হঠাৎ করে রংটা অদৃশ্য হয়ে যায়। এটা মিঠুন তৈরী করে দিয়েছে-সে বলেছে এটা নাকী ছেলেমানুষী প্রজেক্ট কিন্তু দেখা গেল মোটেও ছেলেমানুষী না, এটা পাবলিক খুব পছন্দ করছে।
এই প্রজেক্টটা আমরা একশগুণ মজাদার করে ফেললাম। দোকান থেকে সত্যিকারের লাল কালি এনে অন্য আরেকটা সিরিঞ্জে ভর্তি করে এনে রেখে দিয়েছি। যখন অক্সব্রীজ স্কুলের কোনো ছেলেমেয়ে আমাদের প্রজেক্ট দেখতে আসে আমরা অদৃশ্য কালির সিরিঞ্জটা সরিয়ে আসল লাল কালির সিরিঞ্জটা রেখে দিই। তারা নিজেদের ধবধবে সাদা শার্টে সেই রং লাগায় সেই রং আর উঠে না। পাকা রং ছয় মাসেও উঠবে না। সেটা নিয়ে আমাদের সাথে ঝগড়া করে তারা সুবিধা করতে পারে না কারণ ঝগড়াঝাটি মারপিটে আমাদের সাথে কেউ কোনোদিন পারবে না।
আমাদের দুই নম্বর প্রজেক্টটাও খুবই মজার। একটা বিশাল গামলার মাঝে গ্লিসারিন মেশানো সাবানগোলা পানি, তার মাঝে একটা বড় রিং। গামলাতে দাঁড়িয়ে রিংটা ওপরে তুলেই আস্ত মানুষটা একটা বিশাল সাবানের বুদবুদের ঢুকে যায়। মিঠুন আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কতোখানি সাবান গোলা পানিতে কতোখানি গ্লিসারিন মিশাতে হবে আমরা সেটা তৈরি করে যাচ্ছি আর ছেলে মেয়েরা নিজের শরীরের সমান সাবানের বুদবুদ তৈরি করে যাচ্ছে।
এটাও আরো বেশী মজার এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলেছি। অক্সব্রীজ স্কুলের কোনো ছেলেমেয়ে এলেই আমরা সাবানগোলা পানি গামলার ঢালার ভান করে তাদের শরীরে ঢেলে দিই।
তবে সবচেয়ে ফাটাফাটি হয়েছে যে প্রজেক্ট তার নাম ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টেমুলেটর। নামটা খুবই কঠিন আমরা কেউ সেটা উচ্চারণ করতে পারি না, তাই বড় কাগজে সেটা লিখে টানিয়ে রেখেছি। এই প্রজেক্টটা করতে আমাদের গুলুকে আনতে হয়েছে। সে প্রথমে আসতে রাজী হয়নি। শেষে দিনে একশ টাকা আর প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেতে দিব বলে তাকে শেষ পর্যন্ত আনা গেছে।
প্রজেক্টটার বর্ণনা দেবার জন্যে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি, একটা চেয়ারে গুলু বসে থাকে। তার মাথায় আমরা কয়েকটা তার লাগিয়ে রেখেছি। সেই তারগুলো এসেছে একটা বাক্সে। বাক্সটার ওপরে কয়েকটা সুইচ কয়েকটা নব আর কয়েকটা বাতি জ্বলতে নিভতে থাকে। সামনে যখন বেশ কয়জন দর্শক হাজির হয় তখন আমরা বক্তৃতার ভঙ্গীতে বলি, “এই যন্ত্রটা সরাসরি এই ছেলেটার মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আমরা এই সুইচগুলো দিয়ে আর এই নবগুলো দিয়ে এই ছেলেটার মনের ভাব কন্ট্রোল করতে পারি।”
আমরা তখন সুইচটা অন অফ করে বলি, “এখন তার মস্তিষ্কে হাসির অনুভূতি দিয়েছি।”
গুললু তখন হা হা করে হাসে। তার সেই বিকট হাসি শুনে মানুষ থতমত খেয়ে যায়। তখন আমরা আবার সুইচ অন অফ করে বলি, “এখন আমরা এই ছেলেটার ভিতরে দুঃখের অনুভূতি দিচ্ছি।”
গুললু তখন বুক চাপড়ে হাউ মাউ করে কান্নার ভঙ্গী করে, সেটা দেখে তাকে ঘিরে থাকা পাবলিক আনন্দে হাততালি দেয়। তখন আমরা সবচেয়ে মজার অংশটা করি, আমরা বাক্সটায় সুইচগুলি আরো কয়েকবার অন অফ করে নবগুলো ঘুরাই তারপর বলি, “এখন সবাই সাবধান, কারণ এখন আমরা ছেলেটার ভিতরে রাগের অনুভূতি দিচ্ছি।”
তখন গুললু হঠাৎ চিৎকার করে উঠে, টান দিয়ে সার্ট ছিড়ে ফেলে, টেবিলে থাবা দেয়, লাফিয়ে কুঁদিয়ে জিনিষপত্র ভেঙ্গে একটা তুলকালাম কাণ্ড করে ফেলে। গুললুর সারা শরীর স্টীলের তৈরি, সে থাবা দিয়ে ইটের টুকরা গুড়া করে ফেলতে পারে। কাজেই তার রাগের অভিনয়টা এতো ভয়ংকর হয় যে সব মানুষজন হতবাক হয়ে যায়। হলের যত দর্শক তারা সবকিছু ছেড়ে গুললুর লাফঝাপ দেখতে চলে আসে।
লাফঝাপ দেওয়ার সময় যদি অক্সত্রীজ স্কুলের ছেলেমেয়ে চলে আসে তাহলে তার কপালে অনেক দুঃখ থাকে। গুললু তাকে ধাওয়া করে, হুংকার দিয়ে তার পিলে চমকিয়ে দেয়।
আমাদের এই নূতন সায়েন্স প্রজেক্ট গুলো দেখার জন্যে সবাই আমাদের কাছে চলে আসতে শুরু করল। অক্সব্রীজ স্কুলের ছেলেমেয়েরা শুকনো মুখে বসে থাকে। রবোট বেচারাকেও আজকে আর কেউ দেখতে চায় না। সে তার মাথাটা খুলে হাতে মনমরা হয়ে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে থাকে, কেউ তার দিকে ঘুরেও তাকায় না।
বিজ্ঞান মেলা পুরোপুরি দখল করেই আমরা শান্ত হলাম না। অক্সব্রীজ স্কুলকেও একটা শিক্ষা দিয়ে দেয়া হল। ব্যাপারটা ঘটল এভাবে, ঝুম্পা প্রথমে গেল অক্সব্রীজ স্কুলের প্রজেক্ট দেখতে। ছেলেমেয়েগুলো যখনই কথা বলতে শুরু করেছে তখন কথার মাঝখানে হঠাৎ করে ঝুম্পা জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের স্কুলের নাম হচ্ছে অক্সব্রীজ। অক্স মানে ষাঁড়। তোমরা ষাঁড়ের নাম দিয়ে স্কুলের নাম রেখেছ কেন?”
ছেলেমেয়েগুলো থতমত খেয়ে কিছু একটা বলতে শুরু করতেই ঝুম্পা তাদের থামিয়ে বলে, “তার মানে তোমরা সঁড়ের স্কুল? তোমাদের ছাত্রছাত্রী ইচ্ছে ষাড় আর গরু?”