মিঠুনের ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা আমরা যে বাক্সটার মাঝে রেখেছিলাম সেখান থেকে নীল রংয়ের একটা আলো বের হচ্ছে, শুধু তাই না সেখানে থেকে শুড়ের মতো আলোর ঝলকানি বের হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, জীবন্ত প্রাণীর মত সেটা নড়ছে। শুধু তাই না মনে হচ্ছে বাক্সটা জীবন্ত, ভোঁতা একটা শব্দ করে সেটা নড়ছে, কাপছে, লাফাচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যাচ্ছে। স্পষ্ট মনে হতে থাকে এই বাক্সটার ভিতরে আমরা জীন ভূত কিছু একটা ঢুকিয়ে রেখেছি, সেটা এখন বের হতে চেষ্টা করছে।
ভয় পেয়ে আমি একটা চিৎকার করে দৌড় দিলাম কিন্তু ঠিক তখন খুব কাছাকাছি কোথাও একটা বাজ পড়ল, আর সাথে সাথে বাক্সটা থেমে গেল, আলো নিভে গেল, বাক্স থেকে বের হয়ে আসা আলোর শুড়গুলো অদৃশ্য হয়ে গেল। দেখে কে বুঝবে একটু আগে এই বাক্স থেকে এরকম বিচিত্র একটা জিনিষ বের হচ্ছিল।
আমি ঘরের লাইট জ্বালিয়ে বাক্সটার কাছে গেলাম, ঘরে একটা পোড়া গন্ধ। বাক্সটা গরম এবং দেখে মনে হল এটা রীতিমত ঝলসে গেছে। বাকুটার ভেতর যে শিশিটাতে ব্লাকহোলের বাচ্চাকে রাখা হয়েছিল সেই শিশিটার মুখটা খোলা। আমি খুব সাবধানে শিশিটা হাতে নিলাম, শিশিটা বেশ ভারী। নাড়তেই মনে হল ভিতরে কিছু একটা নড়ল। আমি শিশির ছিপিটা খুঁজে বের করে শিশিটার ছিপি আটকে দিলাম। বাক্সের ভেতর শিশিটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিয়েছিলাম দেখলাম কাপড়টা জায়গায়
জায়গায় পুড়ে গিয়েছে।
আমি কী করব বুঝতে না পেরে যেভাবে শিশিটা আগে রেখেছিলাম ঠিক সেভাবে রেখে দিলাম। আবার সেটা নড়তে শুরু করে কী না, আলো বের হতে থাকে কী না দেখার জন্যে আমি বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু কিছু হল না।
ঠিক তখন বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে, আমি তখন দরজা বন্ধ করে বের হয়ে ছাদে হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করলাম। চিলেকোঠায় ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা যে সব কাণ্ড কারখানা করেছে আমি তার মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। মিঠুন কী বুঝবে?”
পরদিন ক্লাশে মিঠুনকে যখন এটা বললাম সে জিজ্ঞেস করল,“যখন বাজ পড়েছে তখন ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার কাজকর্ম থেমে গেল?”
“হ্যা”।
“বাজ পড়ার আগে পর্যন্ত সেটা নড়াচড়া করছিল? আলো বের হচ্ছিল?”
“হ্যাঁ।”
“ঠিক তো?”
“ঠিক।
মিঠুন তখন বুঝে ফেলার মত ভাব করে মাথা নাড়ল, আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছে?”
“যেটা ভাবছিলাম তাই।”
“কী ভাবছিলি?”
“আমি তো ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা এখনো টেস্ট করি নাই। আমার একটা টেস্ট করার কথা ছিল ইলেকট্রিক ফিল্ড আর ম্যাগনেটিক ফিল্ড দিয়ে। সেটা আর করা লাগবে না। টেস্ট হয়ে গেছে।”
“মানে?”
“কাছাকাছি যখন বাজ পড়ে তার আগে আগে সেই জায়গায় এক ধরণের ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হয়। তোর বাসায় সেই ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরী হয়েছিল, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাট; সেই ইলেকট্রিক ফিল্ডের মাঝে যখন ঢুকেছে তখন নিশ্চয়ই এনার্জি রিলিজ করতে শুরু করেছে।”
আমি মিঠুনের কোনো কথাই বুঝতে পারলাম না, তাই বোকার মতন মাথা নাড়লাম। মিঠুন জোরে জোরে চিন্তা করতে লাগল, “কিন্তু এনার্জিটা আসে কোথা থেকে?”
আমিও ভান করলাম এনার্জিটা কোথা থেকে আসে সেটা নিয়ে আমারও খুব চিন্তা হচ্ছে। মিঠুন বিড় বিড় করতে করতে বলল, “এক হতে পারে ই ইকুয়েলস টু এমসি স্কয়ার। তুই তাহলে এর অর্থ চিন্তা করতে পারিস?”
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না তারপরও জিনিষটা নিয়ে ভাবছি এরকম ভাণ করে মাথা নাড়লাম।
মিঠুন বলল, “তার অর্থ এমন একটা জিনিস পেয়েছি সেটা দিয়ে সাংঘাতিক সব কাজ করে ফেলা যাবে। পৃথিবীর মানুষ চিন্তাও করতে পারবে আমাদের কাছে কী আছে।”
আমি বললাম, “তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে এর কথা এখন কাউকে বলা যাবে না।”
“হ্যাঁ। এখন আমাদের কয়েকজন ছাড়া আর কাউকে এর কথা বলা যাবে না। তার আগে পুরোটা আমাদের এক্সপেরিমেন্টটা করে দেখতে হবে।”
জিজ্ঞেস করলাম, “কখন করবি?”
“আজকেই।”
আমি মাথা নাড়লাম, “মিঠুন বলল, দেরী করতে পারব না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।”
সত্যিকারের স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা যখন ইচ্ছে বের হতে পারে না কিন্তু আমাদের মহব্বতজান স্কুলে এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি আর মিঠুন স্কুল ছুটির দুই পিরিওড আগে ফুড়ত করে বের হয়ে গেলাম কেউ লক্ষও করল না।
আমাদের বাসায় যাবার আগে মিঠুন আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোর বাসায় ব্যাটারী আছে?”
আমি মাথা চুলকালাম, বললাম “থাকলেও এখন তো খুঁজে পাব না।”
“টেলিভিশনের রিমোট আছে?”
“আছে।”
“তাহলেই ব্যাটারী পেয়ে যাব। এখন দরকার দুই টুকরা তার।”
“পুরানো একটা টেবিল ল্যাম্প আছে।”
মিঠুন হাতে কিল দিয়ে বলল, “গুড়! এখন দরকার এলুমিনিয়াম ফয়েল। পান বিড়ি সিগারেটের দোকানে পেয়ে যাব।”
রাস্তার পাশে ছোট একটা পান, বিড়ি সিগারটের দোকান থেকে একটা খালি সিগারেটের প্যাকেট চেয়ে নিলাম তার ভেতরে খানিকটা রাংতা পাওয়া গেল। মিঠুন খুশি হয়ে মাথা নাড়ল, এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য তার যা কিছু দরকার তার সবকিছু হয়ে গেছে।
হেঁটে হেঁটে বাসায় এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মিঠুনের এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে রিমোটের ব্যাটারি দুটো খুলে নিলাম। ভালই হয়েছে আন্তু এখন বাসায় নেই, যতক্ষণ বাসায় থাকেন সোফায় আশায়া হয়ে টিভি দেখেন তখন রিমোট খুলে ব্যাটারি নেয়া এতো সোজা হত না। পড়ার ঘর থেকে আমার পুরানো টেবিলে ল্যাম্পটা নিয়ে নিলাম তারপর মিঠুনকে নিয়ে ছাদে আমার চিলেকোঠায় হাজির হলাম।