“কী কথা?”
“আমি যদি আপনাকে দেখাই ভারী আর হালকা জিনিষ এক সাথে পড়ে তাহলে কী—”
“আমাকে দেখাবি?”
“জী স্যার।”
“দেখা।”
মিঠুন মাথা চুলকাল, বলল, “একটু সময় লাগবে স্যার।”
কালাপাহাড় স্যার ভুরু কুঁচকে বললেন, “সময় লাগবে?”
“জী স্যার।”
“কতোক্ষণ?”
“কয়েকদিন
কয়েকদিন শুনে স্যার আবার বেত তুললেন, বাতাস শপাং করে মেরে আরেকবার প্র্যাকটিস করলেন তারপর এগিয়ে এলেন। মিঠুন বলল, “স্যার, স্যার, স্যার”
“কী হল?”
“কয়েকদিন সময় আর স্কুলের ল্যাবরেটরি রুমটা লাগবে তাহলে আপনাকে পরীক্ষা করে দেখাতে পারব স্যার।”
আমরা মিঠুনের সাহস দেখে অবাক হলাম, কালাপাহাড় স্যার মনে হয় আরো বেশী অবাক হলেন। মিঠুনের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হঠাৎ করে তার মনে হতে লাগল যে তাকে আগে কোনোদিন দেখেননি। জিজ্ঞেস করলেন, “তুই কে? কোথেকে এসেছিস?”
“আমার নাম মিঠুন স্যার, আমি স্যার নূতন এসেছি।”
“আগে কোন স্কুলে ছিলি?”
“অক্সব্রীজ।” কালাপাহাড় স্যার এবারে চমকে উঠেলেন, “অক্সব্রীজ?”
“জী স্যার।”
স্যার কিছুক্ষণ মিঠুনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “অক্সব্রীজ ছেড়ে এই স্কুলে কেন?”
মিঠুন চুপ করে রইল।
কালাপাহাড় স্যার আবার হুংকার দিলেন, “কেন?”
“আমাকে বের করে দিয়েছে।”
“কেন?”
“ল্যাবরেটরি ক্লাশে একটা গোলমাল হয়েছিল।”
“সেইজন্যে বের করে দিল? কী রকম স্কুল এইটা? মিঠুন বলল, “খুবই ফালতু স্কুল স্যার।”
কালাপাহাড় স্যারের মনে হল এই উত্তরটা খুবই পছন্দ হল, স্যার দুলে দুলে হে হে করে হাসলেন। বললেন, “ফালতু স্কুল?”
“জী স্যার।”
“কেন?”
আমরা দেখলাম মিঠুন তার মাথা চুলকাচ্ছে, মনে হয় ভালো একটা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “চিন্তার স্বাধীনতা নাই।”
“চিন্তার স্বাধীনতা? সেইটা আবার কী জিনিষ?”
“যেমন মনে করেন স্যার বইয়ে লেখা আছে ভারী আর হালকা জিনিষ এক সাথে পড়ে। কিন্তু আমরা স্যার এই ক্লাশে আলোচনা করছি যে ভারী আর হালকা জিনিষ একসাথে পড়ে না। ভারী জিনিষটা আগে পড়ে। এইযে সার এইটা হচ্ছে চিন্তার স্বাধীনতা। যেটা সত্যি না সেইটাও আলোচনা করা যায়।”
কালাপাহাড় স্যার আবার গরম হয়ে উঠলেন, বললেন, “কে বলেছে। এটা সত্যি না?”
মিঠুনটা কতো বড় গাধা, চুপচাপ থাকলেই বেঁচে যায়, কিন্তু চুপচাপ থাকল না, বলল, “স্যার আমি বলেছি।“
কালাপাহাড় স্যার চোখ লাল করে তাকালেন, কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, মিঠুন তার আগেই বলল, “স্যার আপনি বলেছেন এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাতে।”
“আমি বলেছি?”
“জী স্যার। আমি দেখাব।”
“আর যদি দেখাতে না পারিস?”
“পারব স্যার।” মিঠুন আমতা আমতা করে বলল, “শুধু-”
“শুধু কী?”
“শুধু ল্যাবরেটরি ক্লাশটা যদি আমাদের ব্যবহার করতে দেন।”
“ল্যাবরেটরি ক্লাশ?”
মিঠুন মাথা নাড়ল, বলল, “জী স্যার। সব সময় তালা মারা থাকে। আমি খোজ নিয়েছিলাম অফিস থেকে বলেছে চাবি নাকী হারিয়ে গেছে।”
কালাপাহাড় স্যার মুখ শক্ত করে বললেন, “মোটেও চাবি হারায় নাই। আমার কাছে আছে।”
“তাহলে স্যার আমাদেরকে যদি দেন তাহলে আমরা ল্যাবরেটরিটা পরিষ্কার করে ফেলব। জানালা দিয়ে দেখেছি স্যার ভিতরে অনেক ময়লা। মাকড়শার জাল। কবুতরের বাসা। পরিষ্কার করে স্যার আপনাকে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাব যে ভারী আর হালকা জিনিষ এক সাথে পড়ে।”
আমরা ভেবেছিলাম কালাপাহাড় স্যার প্রচণ্ড রেগে মিঠুনকে পেটাতে শুরু করবেন, কিন্তু স্যার কিছুই করলেন না, খানিকক্ষণ মিঠুনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “তুই বলছিস অক্সব্রীজ খুবই ফালতু স্কুল?”
“জী স্যার। আমি ঐ স্কুলে ছিলাম স্যার। আমি জানি।”
“আমরা আরো ভাবতাম খুব বুঝি ভালো স্কুল।”।
আমরা দেখলাম মিঠুন মিচকে শয়তানের মত বলল, “না স্যার খুবই ফালতু স্কুল।“
মহব্বত জান স্কুলের ছাত্ররা আমরা যেরকম অক্সব্রীজ স্কুলকে হিংসা করি, আমাদের স্যারেরাও হিংসা করেন। তাই দেখলাম কালাপাহাড় স্যার দুলে দুলে হাসলেন, বললেন,“ফালতু স্কুল। হে হে হে!”
মিঠুন বলল, “তাহলে স্যার ল্যাবরেটরি রুমের চাবিটা?”
আমরা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না যখন শুনলাম কালাপাহাড় স্যার বললেন, “ঠিক আছে ঠিক আছে নিস। কিছু ভাংবি না তো?”
মিঠুন জোরে জোরে মাথা নাড়ল, “না স্যার ভাংব না।”
“চুরি করবি না তো?”
“না স্যার চুরি করব না।”
০৫. স্কুলে ল্যাবরেটরি ক্লাশ
আমাদের স্কুলে যে একটা ল্যাবরেটরি ক্লাশ আছে আমরা সেটা জানতাম না, মিঠুন ঠিকই এটা আবিষ্কার করেছে। তবে এর তালা কোনোদিন খোলা হয়নি। কালাপাহাড় স্যারের কাছ থেকে চাবি নিয়েও কোনো লাভ হল না, তালাটা ভেতরে এমনভাবে জং ধরেছে যে চাবিটা ঘোরানোই গেল না। আমরা হাল ছেড়েই দিচ্ছিলাম, কিন্তু মিঠুন হাল ছাড়ল না। বোতলে করে কেরোসিন তেল নিয়ে এসে তালাটাকে চুবিয়ে রাখল। তারপর চাবিটা নড়াচাড়া করতে লাগল এবং শেষ পর্যন্ত তালাটা আমরা খুলতে পারলাম।
দরজাটা ধাক্কা দেবার পর সেটা কঁাচ ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল, আমরা আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলাম। ভেতরে আবছা অন্ধকার তার মাঝে কয়েকটা পাখী কিংবা বাদুর ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে লাগল। মাঝখানে কয়েকটা টেবিল, সেই টেবিলের ওপর ধূলার স্তর। দেয়ালের সাথে লাগানো কয়েকটা আলমারী; তার উপরে এতো পুরু হয়ে ধূলা জমেছে যে ভিতরে কি আছে দেখাই যাচ্ছে না।