(এরকম সময়ে ফারা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “আর ডায়মন্ড দুইটা?” মিঠুন বলল, “ঠিক ওপরে ডায়মন্ড দুটি একটা আরেকটার সাথে লেগেছিল সেই দুটিও নিয়ে এসেছি।” ডায়মন্ড দুটি নিয়ে এসেছে শুনে ফারার বুকের মাঝে মনে হয় এক ধরণের শান্তি হল। মিঠুনকে বলল, “আবার যেদিন তোর বাসায় কেউ থাকবে না সেই দিন তোর আম্মুর কানের দুলে ডায়মন্ড দুটি লাগিয়ে দিস।” মিঠুন অবাক হয়ে বলল, “কেন?” ফারা আরো অবাক হয়ে বলল, “কেন না?” মিঠুন আরেকটা কিছু বলতে চাচ্ছিল, ঝুম্পা ধমক দিয়ে দুজনকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তারপর কী হল? মিঠুন তখন আবার বলতে শুরু করল।)
তারপর আমি বাসায় ফিরে এলাম, বাসায় ততক্ষণে জানাজানি হয়ে গেছে সে আমাদের স্কুল উড়ে গেছে। আমার আম্মু আব্দু আমকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন, আমি বললাম স্কুল উড়ে গেছে শুনে দেখতে গিয়েছিলাম সেজন্যে দেরী হয়েছে। আল্লু আম্মু আমার কথা বিশ্বাস করলেন তখন আর কোনো ঝামেলা হল না।।
আস্তে আস্তে খবর বের হয়ে গেল, সায়েন্স স্যার স্কুলের মালিকদের আমার কথা বলল, আমি যে কম্পিউটার হ্যাক করেছি সেটাও জানাজানি হল। আবু আম্মুকে স্কুলে ডেকে নিয়ে গেল, আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে ঠিক করল। কিন্তু আমার বয়স কম, আমার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না উল্টো স্কুলই ঝামেলায় পড়ে যাবে। তখন স্কুল আমাকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিল। টিসির মাঝে এতে খারাপ খারাপ কথা লিখল যে শহরের আর কোনো স্কুল আমাকে ভর্তি করতে রাজী হল না, তাই শেষ পর্যন্ত মহব্বতজান স্কুলে ভর্তি হয়েছি।
(ঝুম্পা তখন জানতে চাইল টিসিতে কী কী লিখেছিল। মিঠুন হাত নেড়ে প্রথমে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করল, চাপাচাপি করার পর বলল “সেখানে লিখেছে, আমি মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ, অপরাধ প্রবণ এবং বিপজ্জনক। আমি সমাজের জন্যে ঝুঁকি এবং আমাকে বাসা থেকে বের হতে দেওয়া ঠিক না।” বগা তখন জানতে চাইল কথাগুলো সঠিক কী না। মিঠুন বলল পুরোপুরি সঠিক না। মিঠুন তখন আবার তার কাহিনী শুরু করল।)
আমি কেন কীভাবে ঘটনাটা ঘটিয়েছি জানার জন্যে পুলিশ র্যাব আমার বাসায় গিয়ে আমার জিনিষপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেছে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ খুলে নিয়ে গেছে। আমার ভয় হচ্ছিল আমার শিশিটা না আবার নিয়ে যায়। সে জন্যে এটা আমি পকেটে রাখি।
(মিঠুন তখন খুব সাবধানে পকেট থেকে সেই বিখ্যাত শিশিটা বের করে আমাদের সামনে ধরে রাখল। আমরা আবার শিশির ভিতরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলাম। আমি ইতস্তত করে বললাম, “মিনি, মানলাম তোর এক্সপেরিমেন্ট ঠিক আছে। তুই আস্ত একটা স্কুল ধ্বসিয়ে দিয়েছিস? অক্সব্রীজ স্কুলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারছি না সত্যি সত্যি তুই ব্ল্যাকহোল কিংবা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা এই শিশির ভিতরে আটকাতে পেরেছিস কী না। আসলে হয়তো ভেতরে কিছুই নাই।” মিঠুন বলল, “আছে!” আমি তখন জানতে চাইলাম সে কীভাবে জানে ভিতরে কিছু আছে। মিঠুন তখন আমার হাতে শিশিটা দিয়ে বলল, “এই দ্যাখ। খুব সাবধান।” আমি হাতে নিলাম আর চমকে উঠলাম। ছোট একটা শিশি কিন্তু শিশিটা বেশ ভারী। শিশিটা নাড়লে ভেতরে কিছু একটা নড়ে। আমরা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু এর ভিতরে আসলেই কিছু একটা আছে। কী আশ্চর্য!)
এটা সত্যিকার ব্ল্যাকহোল না, তাহলে আশেপাশের সবকিছু শুষে নিত। এটা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা। আসল ব্ল্যাকহোল কী করে আমি মোটামুটি জানি। কিন্তু এই ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা কী করে আমি জানি না। শুধু আমি না, পৃথিবীর কেউ জানে না। কাজেই এখন আমার এটাকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে।।
(মিঠুন তখন অনেক লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ঝুম্পা তখন জানতে চাইল কী হয়েছে। মিঠুন বলল, তার বাসা থেকে তার গবেষণার সবকিছু পুলিশ নিয়ে গেছে। যেটুকু বাকী ছিল সেটুকু ফেলে দেয়া হয়েছে। কাজেই তার এখন গবেষণা করার কোনো জায়গা নাই। শুনে আমরা খুব দুশ্চিন্তিত ভঙ্গী করে মাথা নাড়লাম। মিঠুন খুবই মন খারাপ করে আবার শুরু করল।)
আমার কাহিনী এই খানেই শেষ। অনেক লম্বা স্টোরি ছোট করে বললাম। তোরা বিজ্ঞানের কিছু শুনতে চাস না তাই আসল জিনিষগুলি বলতেই পারলাম না। অক্সব্রীজ স্কুল থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে সে জন্যে আল্লু আম্মুর খুব মন খারাপ। আপু সকাল বিকাল আমাকে টিটকারী মারে। দেখা হলেই হাত পা নেড়ে বলে :
সোনার চান
মহব্বত জান
নাকে ধরে দাও টান
আমি কোনোমতে সহ্য করি। যদি কোনোভাবে আমার ল্যাবরেটরিটা পেতাম, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা নিয়ে গবেষণা করতে পারতাম তাহলেই আমার কোনো চিন্তা ছিল না।
(মিঠুন বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার কাহিনী শেষ করল।)
০৪. স্কুল থেকে বের হয়ে
স্কুল থেকে বের হয়েই মিঠুন অবাক হয়ে বলল, “আরে অক্সব্রীজ স্কুলের সায়েন্স স্যার।” আমরা দেখলাম উসখু খুশকু চুল খোঁচা খোঁচা দাড়ি একজন মানুষ আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। মিঠুন অবাক হয়ে বলল, “স্যার আপনি?”
মানুষটি বলল, “হ্যাঁ। আমি। তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
“আমার জন্যে? কেন?”
“তোমার সাথে একটু কথা ছিল।”
“বলেন স্যার।”
খোঁচা খোঁচা দাড়ি মানুষটা আমাদেরকে দেখিয়ে একটু ইঙ্গিত করে বললেন, “তোমার সাথে একটু নিরিবিলি কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”
ঝুম্পা মুখ শক্ত করে বলল, “বলিস না মিঠুন। খবরদার একা একা নিরিবিলি কথা বলবি না। সাক্ষী রেখে কথা বলবি।”