ভালো। খুব ভালো। কাল পর্যন্ত তেতাল্লিশটা খোঁজ এসেছে।
কারা কারা সমস্যার সমাধান চাইছে?
সব রকম আছে। দুজন মন্ত্রী, তিনটা কর্পোরেশনের সি. ই. ও. থেকে শুরু করে স্মাগলিং সিন্ডিকেটের মাস্তান এবং ব্যর্থ প্রেমিকও আছে!
কী মনে হয় তোমার! পারব তো করতে?
কেন পারব না? নজীব সোজা হয়ে বসে বলল, আমরা কয়টা টেস্ট কেস করলাম? কমপক্ষে দুই ডজন, সবগুলো ঠিক হয়েছে।
শরীফের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল, বলল, ঠিকই বলেছ। কয়েকটা কেস দেখে ভয় লেগে যায়। বিশেষ করে সেই যে আত্মহত্যার কেসটা মনে আছে?
হ্যাঁ। দিন তারিখ সময় থেকে শুরু করে কীভাবে আত্মহত্যা করবে সেটাও বলে দিল।
চিন্তা করলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই দেখ। শরীফ তার হাতটা এগিয়ে দেয়। সত্যিই তার গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে।
নজীব আঙুল দিয়ে টেবিলে টোকা দিয়ে বলল, আমাদের সবচেয়ে বড় কাস্টমার হবে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। চিন্তা কতে পার আমাদের এই নিউরাল কম্পিউটার কীভাবে ক্রাইম সলভ করবে?
হ্যাঁ। শরীফের চোখ চকচক করে ওঠে, ঠিকই বলেছ।
তবে আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে। বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা আর পুলিশে ছুঁলে বত্রিশ ঘা!
হঠাৎ করে শরীফ সোজা হয়ে বসে বলল, আচ্ছা নজীব—
কী হল?
আমাদের এই প্রজেক্ট কাজ করবে কিনা সেটা আমাদের নিউরাল কম্পিউটারকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
নজীব চিন্তিত মুখে শরীফের দিকে তাকাল, বলল, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি। কিন্তু
এর মাঝে আবার কিন্তু কী? এত টাকাপয়সা খরচ করে এত হইচই করে একটা প্রজেক্ট ক্ষ করছি, সেটা যদি কাজ না করে আমোক তার পিছনে সময় দেব কেন?
ঠিকই বলেছে। নজীব চিন্তিত মুখে বলল, কিন্তু
কিন্তু কী?
আমাদের এই নিউরাল কম্পিউটার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে, কখনো কখনো কী হবে তার ভবিষ্যদ্বাণীও করে দিতে পারে কিন্তু সেগুলোর সাথে তার নিজের ভবিষ্যৎ জড়িত থাকে না। কিন্তু এটার সাথে নিউরাল কম্পিউটারের নিজের ভবিষ্যৎ জড়িত।
তাতে কী হয়েছে?
এটা একটা প্রকৃতির সূত্র, কেউ যদি নিজে একটা সিস্টেমের ভেতরে থাকে তাহলে তারা সেই সিস্টেমকে বিশ্লেষণ করতে পারে না। অনেকটা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্রের মতো।
রাখ তোমার বড় বড় কথা। চল গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি।
সত্যি জিজ্ঞেস করতে চাও? আমার মন বলছে কাজটা ঠিক হবে না।
কেন ঠিক হবে না? চল যাই। ওঠ।
এখনই?
অসুবিধে কী? জিজ্ঞেসই যদি করতে হয় পুরোপুরি শুরু করার আগেই জিজ্ঞেস করা যাক।
ঠিক আছে। নজীবউল্লাহ খানিকটা অনিচ্ছা নিয়ে উঠে দাঁড়াল। টেবিলে রাখা পানীয়টা এক ঢোকে শেষ করে দিয়ে হাতের পেছন দিয়ে মুখ মুছে বলল, চল।
দুজনে বিল্ডিংয়ের সংরক্ষিত লিফটে করে সাততলায় উঠে যায়। লিফটের দরজা খোলার আগে দুজনকেই রেটিনা স্ক্যান করিয়ে নিশ্চিত হতে হল যে তারা সত্যিই ক্ৰন কম্পিউটিংয়ের মালিক শরীফ আকন্দ এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নজীবউল্লাহ। ধাতব দরজাটি খোলার সাথে সাথে সার্ভেলেন্স ক্যামেরাগুলো তাদের দুজনের উপরে স্থির হল। শরীফ আকন্দ মাইক্রোফোনে মুখ লাগিয়ে বলল, সিকিউরিটি, দরজা খোল।
কিছু মনে করবেন না স্যার। পাসওয়ার্ডটি বলতে হবে।
বাড়াবাড়ি সিকিউরিটি দেখে শরীফ আকন্দ বিরক্ত না হয়ে বরং একটু খুশি হয়ে উঠল, হা হা করে হেসে উঠে বলল, এই কোম্পানিটি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি।
হতে পারে স্যার। কিন্তু আমরা প্রফেশনাল।
আজকের পাসওয়ার্ড হচ্ছে ব্ল্যাক হোল। কালো গহ্বর।
খুট করে একটা শব্দ হতেই ঘরঘর শব্দ করে দরজা খুলে গেল, দেখা গেল অন্যপাশে অনেকগুলো মনিটরের সামনে দুজন সিকিউরিটির মানুষ বসে আছে। একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ওয়েলকাম স্যার আমাদের এই নির্জন কারাবাসে আমন্ত্রণ।
নির্জন বলছ কেন? শরীফ আকন্দ হেসে বলল, তোমার এই ফ্লোরে সবচেয়ে বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে চৌদ্দজন।
সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মানুষটি বলল, আপনি যদি ব্যাপারটা এভাবে দেখেন তাহলে অবিশ্যি আমার কিছু বলার নেই।
খুব উঁচুদরের একটা রসিকতা করা হয়েছে এরকম ভঙ্গি করে শরীফ আকন্দ এগিয়ে গেল। জীবউল্লাহ পকেট থেকে ছোট একটা কার্ড বের করে দরজায় প্রবেশ করাতেই একটা ছোট শব্দ করে দরজা খুলে গেল। লম্বা করিডর ধরে তারা একেবারে শেষপ্রান্তে গিয়ে থেমে গেল। জায়গাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তবুও শরীফ আকন্দের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যায়। একটা বড় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, নজীব দরজাটা খোল।
নজীবের মুখে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, সে চোখ মটকে বলল, তোমার কাছেও চাবি আছে।
শরীফ মাথা নাড়ল, কিন্তু আমার খুব নার্ভাস লাগে–এখনো আমি অভ্যস্ত হতে পারি নি। প্রত্যেকবার বুকের ভিতরে কেমন যেন ধক করে ধাক্কা লাগে। তুমি বিশ্বাস করবে না আমি এখনো মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখি।
কী দুঃস্বপ্ন দেখ?
দুঃস্বপ্ন দেখি যে আমি একটা ছোট বাথটাবে শুয়ে আছি আর আমার চারপাশ বারোটা
বারোটা কী?
তুমি জান কী! দরজা খোল নজীব।
নজীব পকেট থেকে ম্যাগনেটিক কার্ড বের করে দরজায় প্রবেশ করিয়ে কার্ডটা আবার বের করে নেয়। তারপর দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে উঁকি দিল। দৃশ্যটি অনেকবার দেখেছে তার পরেও সে নিজের অজান্তে একবার শিউরে উঠল।