ঘটেছে না। বল ঘটছে। শ্রাবণী বলল, আমি বাজি ধরে বলতে পারি এই বদমাইশগুলি আর দশ মিনিটের মাঝে ফেরত আসছে।
নিয়াজ কাচভাঙা জানালাগুলোর দিকে তাকাল, বলল, আবার যখন আসবে তখন কী করব?
জয়ন্ত দাঁড়িয়ে বলল, জানালাগুলো কাঠের তক্তা দিয়ে লোহা মেরে বন্ধ করে দিতে হবে।
তক্তা কোথায় পাবি?
জয়ন্ত ল্যাবরেটরির চেয়ার টেবিল দেখিয়ে বলল, এগুলো ভেঙে বের করতে হবে।
নিয়াজ প্রথমে ভাবল জয়ন্ত ঠাট্টা করছে, কিন্তু তার মুখে কৌতুকের কোনো চিহ্ন নেই। নিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, চল তাহলে দেরি করে লাভ নেই।
শ্রাবণী ঘরের মৃত এবং অর্ধমৃত বেজিগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, এগুলো কী করব?
দরজা খুলে বাইরে ফেলে দে। বদমাইশগুলোকে দেখলেই গা ঘিনঘিন করছে।
কিছুক্ষণের মাঝে দেখা গেল সবাই মিলে ঘরটাকে আবার সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে। পরের আক্রমণটা কখন হবে কেমন হবে সেটা এখনো কেউ জানে না।
.
দেয়ালে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে তিনজন বসে আছে। শরীরের নানা জায়গায় রক্ত শুকিয়ে আছে। কোথাও পানি নেই। তিনজন তিনটি বিকারে খানিকটা এলকোহল নিয়ে একটুকরো কাপড়ে ভিজিয়ে রক্ত মোছার চেষ্টা করছে।
শ্রাবণী বলল, শুধু শুধু চেষ্টা করছি। বেজির দল আবার এল বুঝি।
প্রথম ধাক্কাটা তো সামলে নিয়েছি।
শ্রাবণী জয়ন্তের দিকে তাকিয়ে বলল, পরের ধাক্কাটা হবে আরো শক্ত।
নিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমরা কি একটার পর একটা ধাক্কা সহ্য করতে থাকব? আমাদের কি এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে না?
হ্যাঁ। যেতে হবে।
সেটা কীভাবে করব? এই ল্যাবরেটরিতে অল্প কয়টা বেজি আমাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিয়েছে–বাইরে আমরা কেমন করে যাব? আমাদের ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে। ফেলবে না?
জয়ন্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শ্রাবণী চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে অন্য দুজন তাকিয়ে দেখে একটা সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। জয়ন্ত ফিসফিস করে বলল, ভয় পাবি না, কেউ ভয় পাবি না। আমার কাছে বন্দুক আছে, আরেকটু কাছে এলেই গুলি করে দেব।
জয়ন্ত কথা শেষ করার আগেই দ্বিতীয় সাপটিকে দেখা গেল এবং সেটি পুরোপুরি ঘরের ভেতরে আসার আগেই দরজার নিচে দিয়ে তৃতীয় সাপটির মাথা প্রবেশ করল।
শ্রাবণী পেছনে সরে গিয়ে একটা টেবিলের ওপরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, কী হচ্ছে এখানে? কী হচ্ছে? এত সাপ কোথা থেকে আসছে? কোথা থেকে আসছে?
শ্রাবণীর কথা শেষ হবার আগেই আরো দুটি সাপের মাথা উঁকি দিল। জয়ন্ত আতঙ্কিত হয়ে দেখল, দরজার নিচে দিয়ে আরো সাপের মাথা কিলবিল করছে। জয়ন্ত হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, হঠাৎ করে সে এত সাপ কোথা থেকে আসছে খানিকটা অনুমান করতে পারে। কিন্তু এখন সেটা নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। সে বন্দুকটা তুলে চিৎকার করে বলল, সরে যা সবাই, পেছনে সরে যা।
জয়ন্ত বন্দুকটা তুলে বড় কয়েকটা সাপ লক্ষ করে নিশানা করে ট্রিগার টেনে ধরল। গুলি হবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না, কিন্তু গুলি হল। বন্ধ ঘরে সেই বিকট শব্দে সবার কানে তালা লেগে যায়। ধোঁয়া সরে গেলে দেখতে পেল সাপগুলো গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কয়েকটা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা অনেকগুলো বেজির চিৎকার শুনতে পেল–সেগুলো দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে।
নিয়াজ হাতের লাঠি দিয়ে সাপগুলোকে মারার চেষ্টা করে। কয়েকটার শিরদাঁড়া ভেঙে দিল। কয়েকটা ল্যাবরেটরির কোনায় লুকিয়ে গেল। প্রাথমিক উত্তেজনাটুকু কেটে যাবার পর শ্রাবণী কাঁদো–কাদো গলায় বলল, দেখলি? দেখলি বেজিগুলো কী করছে?
সাপ ধরে ধরে এনে ছেড়ে দিচ্ছে।
কত বড় বদমাইশ দেখেছিস?
নিয়াজ হাতের লাঠিটা হাতে নিয়ে সতর্ক–চোখে ঘরের চারপাশে তাকাতে তাকাতে বলল, তুই এমনভাবে কথা বলছিস যেন ওগুলো বেজি না–মানুষ।
হ্যাঁ। শ্রাবণী মাথা নেড়ে বলল, ফিচলে বুদ্ধি দেখেছিস?
জয়ন্ত বলল, পড়িস নি–-অহি-নকুল সম্পর্ক। এই হচ্ছে সেই অহি-নকুল। নকুল অহিকে ধরে ধরে এনে এখানে ছেড়ে দিচ্ছে।
এরপরে কী করবে?
ভাগ্যিস এখনো আগুন জ্বালানো শিখে নি–যদি জানত তাহলে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর বাসায় আগুন লাগিয়ে দিত।
নিয়াজ একটা নিশ্বাস যেলে বলল, আঁতেলদের মতো শুধু কথা বলিস না–কী করা যায় ভেবে ঠিক কর।
জয়ন্ত রেগে গিয়ে বলল, আমি আঁতেলদের মতো শুধু কথা বলছি?
বলছিসই তো। সেই তখন থেকে ভ্যাদর ভ্যাদর করছিস।
শ্রাবণী বিরক্ত হয়ে বলল, এটা ঝগড়া করার সময়? চুপ করবি তোরা?
দুজনে চুপ করে কঠিন মুখে শ্রাবণীর দিকে তাকাল। শ্রাবণী বলল, আগে এই ঘরটা মোটামুটি সিকিওর ছিল, এখন এর ভেতরে সাপ ছেড়ে দিয়েছে। ভেতরে কয়টা সাপ লুকিয়ে আছে কে জানে। এখানে থাকা যাবে না।
এখন পর্যন্ত দেখা গেছে বেজিগুলো আগুনকে ভয় পায়। আগুনটাই আমাদের ভরসা।
জয়ন্ত নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, কী করবি আগুন দিয়ে?
ধর, অনেকগুলি মশাল তৈরি করে সেগুলো হাতে নিয়ে যদি হেঁটে যাই? বিচে গিয়ে জব্বার মিয়ার ট্রলারের জন্যে অপেক্ষা করি?
জয়ন্ত খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণচোখে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ইট মে ওয়ার্ক। ঠিকই বলেছিস। তবে একটা ডেঞ্জার আছে।