জয়ন্ত একটু ক্রুদ্ধচোখে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই ঠাট্টা করছিস? এটা ঠাট্টার সময়?
শ্রাবণী বলল, আই অ্যাম সরি। তুই ঠিকই বুলেছিস–এটা ঠাট্টার সময় নয়–কিন্তু তুই একটা লাঠি নিয়ে ইয়া-আলী বলে লাফঝাঁপ দিয়ে বেজি মারছিস, দৃশ্যটা কল্পনা করে কেমন জানি হাসি পেয়ে গেল।
জয়ন্ত কোনো কথা না বলে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি বিশ্বাস করতে পারি একজন মানুষ এরকম সময় ঠাট্টা করতে পারে।
নিয়াজ বলল, এটা দোষের ব্যাপার না, এরকম একটা সময়ে যে ঠাট্টা করতে পারে বুঝতে হবে তার মাথা ঠাণ্ডা–বিপদের সময় সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
জয়ন্ত কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তা ঠিক।
কাজেই এখন ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা ভেবে দেখা যাক। নিয়াজ শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই শুরু কর।
আমি? আমি কেন?
এক্ষুনি না প্রমাণ করে দিলাম যে তোর মাথা সবচেয়ে ঠাণ্ডা।
আমার মাথা ঠাণ্ডা না। কখনো ছিল না। তোর প্রমাণে গোলমাল আছে।
ঠিক আছে, জয়ন্ত তাহলে তুই বল।
জয়ন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, প্রথমে উপরতলাটা সিকিউর করতে হবে যেন। ঐ বদমাইশ বেজিগুলো উপরে আসতে না পারে।
সেটা কীভাবে করবি?
নিচের দরজা উপরের দরজা সবকিছু বন্ধ রেখে।
তারপর?
তারপর এই পুরো বাসাটি খুঁজে দেখতে হবে কী কী জিনিসপত্র আছে। সেই জিনিসপত্র দিয়ে একটা নতুন প্ল্যান করতে হবে।
ভেরি গুড।
বন্দুকটা খুঁজে পেলে খারাপ হয় না।
যদি না পাই?
তাহলে আপাতত আমাদের হাতে একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে এই ম্যাচটা। জয়ন্ত পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে বলল, যদি সিগারেট না খেতাম তাহলে এই ম্যাচটাও থাকত না।
তাহলে আপাতত পরিকল্পনা হচ্ছে এই বাসাটাকে দুর্গের মতো ব্যবহার করে থাকা?
জয়ন্ত শ্রাবণীর দিকে মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।
খাওয়াদাওয়া?
তুই যদি কিছু না এনে থাকিস তাহলে বন্ধ।
আমি কোত্থেকে আনব? ব্যাগ হাতড়ে কয়েক টুকরো চকলেট বের করে বলল, এই হচ্ছে একমাত্র ফুড সাপ্লাই।
নিয়াজ বলল, আমরা নিশ্চয়ই এখানে মাসখানেক থাকার পরিকল্পনা করছি না–বড় জোর আজকের দিনটা।
তা ঠিক। জয়ন্ত দুর্বলভাবে হেসে বলল, কিন্তু খাওয়ার কথা বলতেই কেমন জানি খিদে পেয়ে গেল!
নিয়াজ হাসার চেষ্টা করে বলল, শুধু শুধু খাওয়ার কথা চিন্তা না করে কাজে লেগে যাওয়া যাক।
হ্যাঁ। জয়ন্ত বলল, একজনকে সবসময় থাকতে হবে বারান্দার কাছাকাছি। বেজির গুষ্টি কোনো বদমাইশি করার চেষ্টা করলেই অন্যদের জানিয়ে দেবে।
শ্রাবণী বলল, আমি বসে বসে এই বেজির বাচ্চাগুলো দেখতে পারব না। তোরা কেউ দ্যাখ।
জয়ন্ত বলল, ঠিক আছে, আমি এখছি। তোরা এই ল্যাবরেটরি, স্টোর রুম, রেস্ট এরিয়া খুঁজে দেখ কী কী পাওয়া যায়
কোনো বিশেষ কিছু খুঁজব নাকি?
একটা মেশিনগান হলে মন্দ হয় না!
জয়ন্তের কথা শুনে দুজনেই শব্দ করে হাসল এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারল দীর্ঘ সময় পর এই প্রথমবার তারা হাসছে। আনন্দহীন হাসি–কিন্তু তবুও হাসি।
ল্যাবরেটরিতে বেশকিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া গেল–যেমন বেশ কিছু সলভেন্ট, এগুলো দিয়ে এই মুহূর্তে কোনোকিছু পরিষ্কার করার প্রয়োজন নেই কিন্তু বিশাল একটা আগুন জ্বালানোর জন্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় বড় কয়েকটা কাচের বোতলে কিছু এসিড এবং ক্ষার পাওয়া গেল। ড্রয়ারে প্রচুর সিরিঞ্জ রয়েছে। সিরিঞ্জের ভেতরে এই এসিড। কিংবা ক্ষার ভরে কিছু ভয়ানক অস্ত্র তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়াও ধারালো ব্লেড এবং চাকু রয়েছে। রবারের গ্লাভস রয়েছে প্রচুর। যদিও দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে খানিকটা আঠা আঠা হয়ে আছে। ওরা সবচেয়ে খুশি হল চোখের ওপর পরার জন্যে প্রাস্টিকের গগলস পেয়ে–পাজি বেজিগুলো যদি চোখের ওপর হামলা চালাতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তাহলে এগুলো কাজে লাগবে।
ল্যাবরেটরির ড্রয়ারে তারা একটা বাইনোকুলার পেয়েই সেটা সাথে সাথে জয়ন্তকে দিয়ে এল–বেজিগুলোর কাজকর্ম এখন খুব ভালোভাবে দেখা যাবে।
স্টোররুমে অনেক ধরনের ব্যবহারী জিনিস পাওয়া গেল। মোমবাতি দুটি শেষ হয়ে
আসছিল, সৌভাগ্যক্রমে সেখানে কয়েক বাক্স মোমবাতি পাওয়া গেল। নাইলনের দড়ি, স্কু ড্রাইভার, করাত–হাতুড়ি এ–ধরনের বেশকিছু প্রয়োজনীয় জিনিসও ছিল। বেশকিছু ব্যাটারি ছিল কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসবে না–নষ্ট হয়ে ভেতর থেকে আঠালো কেমিক্যাল বের হয়ে আসছে।
তবে সবচেয়ে দরকারি জিনিসটা তারা পেয়ে গেল বিশ্রাম নেবার ঘরে। সোফার কুশনের নিচে লুকিয়ে রাখা একটা দোনলা বন্দুক এবং ড্রয়ারের ভেতরে বন্দুকের গুলি। বন্দুকটা হাতে নিয়ে নিয়াজের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, যুদ্ধবাজ জেনারেলের মতো বন্দুকটা উপরে তুলে বলল, এবারে দেখে নেব বেজির বাচ্চা বেজিদের।
শ্রাবণী বলল, এভাবে কথা বলিস না–তোকে ঠিক সন্ত্রাসীর মতো দেখাচ্ছে।
নিয়াজ মাথা নেড়ে বলল, বন্দুক জিনিসটা নিশ্চয়ই খারাপ। হাতে নিলেই নিজের ভেতরে কেমন জানি মাস্তান–মাস্তান ভাব এসে যায়।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, হাতে নিয়ে দ্যাখ।
শ্রাবণী হাতে নিয়ে বলল, কোথায়? আমার তো হাতে নিয়ে নিজেকে কীরকম জানি বেকুব–বেকুব লাগছে!
নিয়াজ বলল, সেটাই ভালো। আসলে বেকুব–বেকুবই লাগার কথা।
আয় জয়ন্তকে সুসংবাদটা দিই–এখন আমদের একটা অস্ত্র আছে। মেশিনগান না হলেও বন্দুক তো বটেই!