ক্রুগো! লুকাস দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, ভাওতাবাজির আর জায়গা পাও না। বিদ্যুৎগতিতে সে তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তুলে নিয়ে আলোগুলো লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। দেখতে দেখতে আবার আবছা অন্ধকার নেমে আসে। লুকাস ভাঙা গলায় চিৎকার করে বলল, ক্রুগো! তুমি আমাকে ধোঁকা দেবে?
তুমি কে?
লুকাস দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, তোমার বাবা।
একটা তীক্ষ্ণ হাসির শব্দ শোনা যায়! ও, তুমি সেই রবোট্রন দলপতি। দশ টেরা। চাঁইয়ের একটা রবোট হয়ে তুমি আমার সাথে যুদ্ধ করতে এসেছ? তোমার সাহসের প্রশংসা করতে হয়!
লুকাস ক্রুগোর কথায় ভূক্ষেপ না করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে এগিয়ে যায়। মূল ভবনের কাছাকাছি এসে সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। লুকাস চিৎকার করে বলল, যে-কোনো অবস্থাতে তোমরা সবাইকে আধঘন্টা আটকে রাখবে, এর ভেতরে দরজা খুলে যাবে।
দরজা খুলে যাবে? ক্রুগো ব্যঙ্গ করে বলে, তোমার হুকুমে? নাকি কোনো জাদুমন্ত্রে?
তোমার যেটা ইচ্ছা ভাবতে পার। তুমি জান এই দরজা খুলতে হলে কী করতে হয়? জানি। তোমার গোপন সংকেত জানতে হয়। তুমি সেটা জান? জানি।
ক্রুগো হঠাৎ অট্টহাস্য করে ওঠে। তুমি ভেবেছ যে-সংকেতটি তোমরা বের করেছ সেটা সত্যি? এত সহজে আমার সংকেত বের করা যায়?
কেন যাবে না, লুকাস হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি একটা নির্বোধ কম্পিউটার ছাড়া তো আর কিছু নও।
সত্যিই যদি তুমি আমার গোপন সংকেত জান তাহলে দরজা খুলছ না কেন?
যখন সময় হবে তখন ঠিকই খুলব।
আর ততক্ষণে হাজার হাজার ছত্রীসেনা এসে তোমাদের সবার কপোট্রন ধ্বংস করে দেবে। তুমি জান এই মুহূর্তে কয় হাজার ছত্রীসেনা পাশের প্রদেশ থেকে আনা হচ্ছে?
তুমি জান এই মুহূর্তে কতজন রবোট্রন তোমার মূল প্রোগ্রামকে পরিবর্তন করছে?
ক্রুগো আবার অট্টহাস্য করে ওঠে, সাথে সাথে কাছেই কোথায় প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। গুলির শব্দ একটু কমে আসতেই ক্রুগোর গলা শুনতে পেলাম, রবোট্রন, শুনতে পাচ্ছ তোমাদের ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনী চলে এসেছে। তোমার বন্ধুরা কতক্ষণ তাদের আটকে রাখবে?
লুকাস ক্রুগোর কথায় কান না দিয়ে ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি সাবধানে ঘড়ির দিকে তাকালাম, যে-সময় দরজা খোলার কথা সেটা পার হয়ে যাচ্ছে। একটু দেরি হতে পারে, কিন্তু যদি বেশি দেরি হয়, তাহলে? আসলেই যদি গো কম্পিউটারের কথা সত্যি হয় আর আমাদের বের করা গোপন সংকেতটি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে কী হবে? চিন্তা করেই আমার বুক কেঁপে ওঠে, আমাদের সবাইকে তাহলে ইঁদুরের মতো মারা হবে?
লুকাস দরজার কাছে গিয়ে সেটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, কী দেখে সে-ই জানে। ক্রুগোর গলার স্বর আবার শুনতে পেলাম, বলল, দেখ রবোট্রন, আমি তোমাদের শেষবারের মত ক্ষমা করতে রাজি আছি। তোমরা দু’হাত তুলে এখান থেকে বের হয়ে পড়, তোমাদের তাহলে হত্যা করা হবে না।
লুকাস কোনো কথা না বলে পিঠ থেকে ভারি হ্যাভারসেক নামিয়ে বিস্ফোরক বের করতে থাকে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী করছ লুকাস?
দরজা যদি না খোলে ভেঙে ফেলতে হবে।
পারবে ভাঙতে?
জানি না, চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। ডানদিকে মাঝামাঝি জায়গাটা দুর্বল, ঠিকভাবে বিস্ফোরকগুলো কাজে লাগালে একটা ছোট ফুটো হতে পারে। লুকাস খানিকক্ষণ কী-একটা ভাবে, তারপর জিজ্ঞেস করে, কী মনে হয় আপনার, ইলেনের দল কি খুলে দিতে পারবে দরজা?
আমার নিজের তখন সন্দেহ হতে শুরু করেছে, কিন্তু কেন জানি না দৃঢ়স্বরে বললাম, অবশ্যি পারবে। সময় হয়ে গেছে, যে-কোনো মুহূর্তে খুলে যাবে এখন।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ ম্যাজিকের মতো ছোট একটা দরজা উপর দিকে উঠে যেতে থাকে।
লুকাস আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, ছুটে যাচ্ছিল, আমি তাকে থামালাম, ভেতরে ঢোকার আগে তুমি তোমার শিল্ডিং পরে নাও।
তাই তো লুকাস থমকে দাঁড়িয়ে দরজাটার দিকে তাকায়, এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলে, কিন্তু দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায়, চলুন আগে ভেতরে ঢুকে পড়ি।
কিন্তু তোমার সার্কিট যদি জ্যাম করে দেয়?
আপনি তো আছেন, আপনি তো জানেন কী করতে হবে। চলুন আগে ঢুকে পড়ি।
আমি আর লুকাস ছোট দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম আর প্রায় সাথে সাথেই ছোট ভারি দরজাটা আবার নেমে আসে। দরজাটা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ভেতরে একেবারে নীরব হয়ে আসে, এতক্ষণ প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ করে এই নীরবতাটুকু খুব অস্বস্তিকর মনে হতে থাকে। আমি শুকনো গলায় বললাম, লুকাস, তোমার শিল্ডিংটা পরে নাও, সার্কিট জ্যাম করে দিলে মহা মুশকিল হয়ে যাবে।
ঠিকই বলেছেন। লুকাস তাড়াহুড়া করে পোশাকটা পরতে শুরু করে, অনেকটা মহাকাশযাত্রীদের মতো পোশাক, লুকাসের পরতে বেশ খানিকক্ষণ সময় নেয়।
ভেতরটা একটা গুহার মতো, কয়েক শ’ ফুট লম্বা। ভালো করে দেখা যায় না। এমনিতে কোনো আলো নেই, বিভিন্ন আই. সি. থেকে যে-আলো বের হচ্ছে তা দিয়েই কেমন একটা ভূতুড়ে ভাবের সৃষ্টি হয়েছে। আই. সি.গুলো প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি করে, সেগুলোকে ঠাণ্ডা করার জন্য ভেতরে বাতাস বইছে, সেই বাতাসও অনেক গরম। চারদিকে অসংখ্য আই. সি; আবছা আলোতে সেগুলো চকচক করছিল।
আমি লুকাসের পিছু পিছু হাঁটতে থাকি। সবকিছু ঠিকঠিক ঘটে থাকলে এই মুহূর্তে এখানকার কোনো কোনো আই. সি.র ভেতর দিয়ে ইলেনের দল তাদের তৈরি করা প্রোগ্রাম প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। আমার মনে পড়ল মহাকাশযানের কম্পিউটার আমাকে একবার ধোঁকা দিয়ে সেইসব আই. সি. তুলিয়ে এনেছিল।