রবোট্রনেরা হাত তোলে এবং গুনে দেখা যায় তাদের সংখ্যা বারজন।
লুকাস একটু চিন্তিতভাবে বলে, একটু কম হয়ে গেল, কিন্তু কিছু করার নেই। আজ সারাদিনে আমরা যাদের হারিয়েছি তারা থাকলে কোনো কথা ছিল না। যাই হোক, আরো তিনজন রবোট্রন দুরকার, বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গণিতবিদ হলে ভালো হয়। কারা যেতে চাও হাত তোল।
প্রায় গোটা সাতেক হাত ওঠেলুকাস তাদের মাঝে থেকে সুসহ আরো দু’ জনকে বেছে নেয়।
সু জিজ্ঞেস করে, আমাদের কী করতে হবে?
যুদ্ধ।
কিন্তু কীভাবে?
সেটা আমি বলে দেব। মোটামুটি জেনে রাখ, ক্রুগোর একটা ভবন আছে শহরের দক্ষিণ দিকে, সেখানে সরাসরি আক্রমণ করে ঢুকে যেতে হবে। ভবনের ভেতরে ক্রুগোর মূল ইলেকট্রনিক্স রয়েছে। সেটা অত্যন্ত সুরক্ষিত, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ছাড়া ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তার দরজা খোলার জন্যে আমাদের ক্রুগোর গোপন সংকেতের প্রয়োজন ছিল।
যাই হোক, আমরা যখন ভবনের মূল অংশের দরজা পর্যন্ত যাব, তখন যেন দরজা খোলা থাকে। সেই দায়িত্ব নিতে হবে দ্বিতীয় দলটির। এর নেতৃত্ব দেবে ইলেন।
ইলেন আপত্তি করে বলল, আমার দুটি হাতই উড়ে গেছে, এখনো সারানোর সময় পাই নি। আমাকে ঠিক নেতৃত্বে না রেখে সাহায্যকারী হিসেবে রাখ।
লুকাস মাথা নাড়ে, না। আমি এমন একজনকে দায়িত্ব দিতে চাই, যার অভিজ্ঞতা সব থেকে বেশি। আর তোমার হাত ব্যবহার করতে হবে না, কপোট্রনের সাথে সরাসরি টার্মিনালের যোগাযোগ করে দেয়া হবে।
বেশ, তাই যদি তোমার ইচ্ছে।
তোমার দলের দায়িত্ব সময়মতো ক্রুগো কম্পিউটারকে বাধ্য করা যেন সে দরজা খুলে দেয়। কতজন রবোট্রন দরকার?
যত বেশি হয় তত ভালো।
কিন্তু কিছু রবোট্রনকে পাহারায় রাখতে হবে। যখন তুমি তোমার দলকে নিয়ে ক্রুগো কম্পিউটারকে বাধ্য করার চেষ্টা করতে থাকবে, তখন ক্রুগো কম্পিউটার সেনাবাহিনী, পুলিস আর নিরাপত্তাবাহিনীর লোকজন পাঠাবে এখানে, তাদের আটকে রাখতে হবে কিছুক্ষণ।
তা ঠিক।
খানিকক্ষণ আলোচনা করে লুকাস দায়িত্ব ভাগ করে দেয়। বাকি এগারজন রোট্রনের ভেতর চারজন পাহারা দেবে, আর সাতজন ক্রুগো কম্পিউটারের মূল প্রোগ্রামকে পরিবর্তন করে তাকে বাধ্য করবে ঠিক সময়ে দরজা খোলার জন্যে।
আলোচনার শেষের দিকে নীয়া হাত তুলে কথা বলার অনুমতি চায়। আমি যেজিনিসটা জানতে চাইছিলাম, নীষা ঠিক সেটাই জিজ্ঞেস করে, এ ব্যাপারে, আমাদের, মানুষদের কিছু করার আছে?
লুকাস হেসে বলল, না, নেই। তোমাদের যুদ্ধে পাঠানো যাবে না, কারণ কোনোভাবে একটা বুলেট এসে লাগলেই তোমরা শেষ। তোমাদের মস্তিষ্কে কোনো কপোট্রন নেই, তোমরা ডিজিটাল কম্পিউটারের মতো কাজ কর না, কাজেই তোমাদেরকে ক্রুগো কম্পিউটারের প্রোগ্রাম পরিবর্তনেও ব্যবহার করা যাবে না!
নীষা হাত নেড়ে বলল, তার মানে আমরা চুপচাপ বসে থাকব? আমাদের কোনো কাজ নেই?
আপাতত নেই। আমাদের কাজ শেষ হবার পর তোমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। যেমন, মানুষের উদ্দেশে প্রথম ভাষণটা তোমাদের দিতে হবে। পৃথিবীর মানুষ এত বড় একটা ঘটনার বর্ণনা আরেকজন মানুষের কাছ থেকে না শুনলে ভরসা পাবে না।
আমি বললাম, ক্রুগো কম্পিউটারের মূল ইলেকট্রনিক্স ভবনে ঢোকার পর তোমরা নিশ্চয়ই তার গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রো প্রসেসর এবং মেক্রো প্রসেসরগুলো তুলে ফেলার পরিকল্পনা করছ?
হ্যাঁ।
সেটা কি তোমরাই করবে? সেখানে একজন মানুষ পাঠানো কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
লুকাস মাথা নেড়ে বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা ইলেকট্রনিক সিগনাল দিয়ে চলাফেরা করি, বাইরে থেকে ইলেকট্রনিক সিগনাল দিয়ে ক্রুগো কম্পিউটার ইচ্ছা করলেই আমাদের সার্কিট জ্যাম করে দিতে পারে।
তাহলে?
আমরা যখন মূল ভবনে ঢুকব তখন আমাদের খুব ভালো করে শিল্ডিং করে নিতে হবে। আমরা সে জন্যে খুব ভাল শিল্ডিং জোগাড় করেছি। তার একটিমাত্র সমস্যা, সেটি অত্যন্ত ভারি একটা ফ্যারাডে কেজ, কাজেই সেটা পরে চলাফেরা করা কঠিন। আমাদের কাজের ক্ষমতা অনেক কমে যাবে তখন।
তাহলে একজন মানুষকে পাঠাচ্ছ না কেন?
কারণ দু’টি। প্রথমত, আমাদের সেরকম কোনো মানুষ নেই। দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ করে ক্রুগোর ভবনে ঢুকতে হবে, কোনো মানুষ সেই যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না।
মানুষের যুদ্ধে অংশ নেবার প্রয়োজন নেই। যুদ্ধ শেষ হলে সে যাবে।
যুদ্ধ পুরোপুরি কখনোই শেষ হবে না, গোলাগুলি শেষ পর্যন্ত চলবে। মানুষকে তার ভেতর দিয়ে নেয়া প্রচণ্ড বিপদের কাজ। কোনো মানুষের জীবন নিয়ে আমরা এত বড় ঝুঁকি নিতে পারি না।
কেউ যদি স্বেচ্ছায় যেতে চায়?
লুকাস একটু হেসে বলে, কে যাবে?
আমি।
সে কয়েক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে, না কিম জুরান। আপনার জীবনের উপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে, এখন আপনি একটু বিশ্রাম নিন।
তোমরা রাজি না হলে আমি যেতে পারব না, কিন্তু লুকাস, আমি সত্যিই যেতে চাই। তোমরা যদি চেষ্টা কর, আমি মনে করি আমার বেঁচে থাকার চমঙ্কার সম্ভাবনা আছে।
কে-একজন বলল, শতকরা চল্লিশ দশমিক তিন দুই!
আমি তার কথা লুফে নিয়ে বললাম, এর থেকে কম সম্ভাবনায় থেকেও আমি অনেকবার বেঁচে এসেছি। ভেবে দেখ লুকাস।
লুকাস কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, বেশ কিম জুরান। আমি রাজি।
রবোট্রনের ক্ষুদ্র দলটি একটা হর্যোধ্বনি করে ওঠে। সবাই শান্ত হয়ে যাবার পর নীষা লুকাসকে লক্ষ্য করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, লুকাস তার আগেই তাকে বাধা দিয়ে বলল, না নীষা, তা সম্ভব নয়।