আরো ভালো করে দেখ। প্রত্যেকটা শব্দের পেছনে সময়টা জানতে হবে।
টার্মিনালটি পুরান, এর থেকে ভালো করে সম্ভব না। দাঁড়ান ব্যবস্থা করছি।
সে মুহূর্তে টার্মিনালটি খুলে, ভেতর থেকে কয়েকটা তার বের করে এনে হাত দিয়ে ধরে রেখে বলল, আবার চেষ্টা করুন।
আমি আবার লিখলাম, ক্রুগো কম্পিউটার, তোমার গোপন সংকেতের প্রথম সংখাঁটি হচ্ছে শূন্য।
ক্রুগো কম্পিউটার উত্তর দিল, আমার গোপন সংকেত জানার অধিকার আপনার নেই।
আমি লুকাসের দিকে তাকালাম, কতক্ষণ লাগল?
লুকাস ভুরু কুঁচকে বলল, আট দশমিক নয় সাত পিকো সেকেণ্ড। শব্দগুলোর মাঝে সময় লেগেছে দুই থেকে তিন পিকো সেকেণ্ডের ভেতরে। আমি দশমিকের পর আট ঘর পর্যন্ত মাপতে পেরেছি। শুনতে চান?
না। তুমি মনে রেখো। আমি এখন একটি-একটি করে সংখ্যা লিখব। ঠিক যখন সত্যিকার সংখ্যাটি লিখব ক্রুগো কম্পিউটার তার নিরাপত্তার প্রোগ্রামটি একবার দেখে নেবে, কাজেই সময়ের খানিকটা তারতম্য হবে। তুমি দেখ কখন তারতম্যটি হয়।
লুকাস হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, এত সহজ?
হ্যাঁ। আমি একবার বের করে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলাম, কাজেই আমি জানি এটা কাজ করে।
আমরা এদিকে সবচেয়ে জটিল কম্পিউটারে সবচেয়ে জটিল প্রোগ্রাম বসিয়ে দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি—
নীষা বাধা দিয়ে বলল, লুকাস, সময় বেশি নেই। আমাদের এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে কিছুক্ষণের মাঝে।
হা, ঠিক বলেছ। কিম জুরান, শুরু করুন।
আমি আবার লিখলাম, ক্রুগো কম্পিউটার, তোমার গোপন সংকেতের প্রথম সংখ্যাটি হচ্ছে এক।
ক্রুগো কম্পিউটার আবার উত্তর দিল, আমার গোপন সংকেত জানার অধিকার আপনার নেই।
লুকাস মাথা নেড়ে বলল, না, এটা ঠিক আগের মতো। এটা নয়।
আমি দুই, তিন, চার চেষ্টা করে যখন পাঁচ লিখলাম, লুকাসের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বলল, হ্যাঁ, উত্তর দিতে পিকো সেকেণ্ডের লক্ষ ভাগের তিন ভাগ দেরি হল। শব্দগুলো এসেছে একটু অন্যরকমভাবে। তার মানে প্রথম সংখ্যাটি হচ্ছে পাঁচ। চমৎকার।
আমি বললাম, আমি মানুষ, কাজেই আমার লিখতে অনেক দেরি হয়, তোমরা কেউ কর, অনেক তাড়াতাড়ি হবে। বুঝতে পারছ, জিনিসটা খুব সহজ।
এই সময়ে সু এসে ঢুকে বলল, পুলিস আর মিলিটারি আমাদের ঘিরে ফেলতে আসছে। আমাদের এখনি পালাতে হবে।
লুকাসকে বেশি বিচলিত দেখা গেল না। শান্ত গলায় বলল, আমাকে মিনিটখানেক সময় দাও। গোপন সংকেতটা বের করে নিই। আর সবাই বাইরে গিয়ে গাড়িতে অপেক্ষা কর।
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি লুকাসের আঙুল বিদ্যুৎগতিতে টার্মিনালের উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে, যে-জিনিসটা বের করতে আমার প্রায় এক সপ্তাহের মতো সময় লেগেছিল, লুকাস সেটা শেষ করল ছেচল্লিশ সেকেণ্ডের মাথায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চলুন এবারে পালাই।
আমরা ছুটে বের হয়ে আসি। দুটি গাড়িতে সবাই গাদাগাদি করে বসেছে। লুকাস হালকা স্বরে বলল, মনে রেখো আমাদের সাথে দু’ জন মানুষ রয়েছে, কিম জুরান আর নীষা। তাদেরকে সাবধানে রেখো। জানই তো তাদের শরীরের ডিজাইন বেশি সুবিধের নয়, একটা বুলেট বেকায়দা লাগলেই তারা শেষ হয়ে যায়।
হাসতে হাসতে কয়েকটা রবোট্রন সরে গিয়ে আমাকে জায়গা করে দেয়। আমি নীষার পাশে গিয়ে বসি, সাথে সাথে গাড়ি দু’টি একপাক ঘুরে গুলির মতো বেরিয়ে যায়।
আমি অনুভব করলাম, নীষা আমার হাতে হাত রেখে আস্তে একটা চাপ দিল।
রক্তমাংসের মানুষ। আমি এখন নিশ্চিতভাবে জানি।
ছোট একটা ঘরে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জন মানুষ এবং রবোট বসে আছে, মানুষ বলতে অবশ্যি দু’ জন, আমি আর নীষা। ঘরটিতে আবছা অন্ধকার, সামনে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে লুকাস। আপাতত লুকাস কথা বলছে, অন্যেরা শ্রোতা। সে টেবিলে আঙুল দিয়ে টোকা দিতে দিতে বলল, তোমরা সবাই জান অনেকগুলো কারণে আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনেক এগিয়ে এনেছি। ক্ৰগো কম্পিউটারের উপর আরো মাসখানেক পরে যে-আঘাত হানার কথা ছিল, সেটা হানা হবে আজ রাতে। তার গোপন সংকেত বের করে আনা হয়েছে। বের করতে সময় লেগেছে ছেচল্লিশ সেকেণ্ড।
বিস্ময়ের একটা মৃদু গুঞ্জন উঠে থেমে যায়। এক জন হাত তুলে জিজ্ঞেস করে, কী করে বের করলে এত তাড়াতাড়ি?
কিম জুরানের একটা সহজ উপায় আছে, এটা বের করে তিনি একবার মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন। যারা এখনো কিম জুরানকে চেন না, তাদের জন্যে বলছি, নীষার পাশে ধূসর কাপড় পরে যে মধ্যবয়স্ক লোকটি বসে আছেন, তিনি কিম জুরান।
সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকাল এবং অস্বস্তিতে আমার কান লাল হয়ে উঠল।
সৌভাগ্যক্রমে লুকাস আবার কথা শুরু করে, কিম জুরানের পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ, কিন্তু আমি এখন সেটা ব্যাখ্যা করছি না, কারণ আমাদের হাতে সময় খুব কম। আমাদের আজ রাতের পরিকল্পনা খুব সহজ। পরিকল্পনাটাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, হার্ডওয়ার আক্রমণ এবং সফটওয়ার আক্রমণ। অন্যভাবে বলা যায়, সরাসরি ক্রুগো কম্পিউটারকে বাইরে থেকে আক্রমণ করা এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়ে ভেতর থেকে আক্রমণ করা। দু’টি আক্রমণই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি ছাড়া অন্যটি সফল হতে পারবে না।
সরাসরি আক্রমণটি আসলে একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়া আর কিছু নয়। আমি এটার নেতৃত্ব দেব। আমার দরকার প্রায় পনের জন দক্ষ রবোর্টুন, যারা সামরিক পি-৪৩ ট্রেনিং পেয়েছে। কতজন আছ তোমরা হাত তোল।