আবহাওয়াতে বৈচিত্র্য কম। মাধ্যাকর্ষণ একটু বেশি, বাতাসে অক্সিজেনও একটু কম। আমি পৃথিবীর প্রাণীগুলো পাঠিয়েছি তারা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। তোমরাও নিশ্চয়ই মানিয়ে নিতে পারবে।
টর বলল, আমি আর অপেক্ষার করতে পারছি না। আমি গ্রহটাতে নামতে চাই।
একটু প্রস্তুত হয়ে নাও, এই গ্রহটা হবে তোমাদের নতুন পৃথিবী। আমি সেটাকে তোমাদের জন্যে পাঁচশ বছর থেকে প্রস্তুত করেছি। দেখো তোমাদের পছন্দ হয় কি না।
স্কাউটশিপটা পুরো গ্রহটাকে একবার প্রদক্ষিণ করে ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে। সমুদ্রের বালুবেলায় স্কাউটশিপটা স্থির হয়ে দাঁড়াল। নিরাপত্তা বন্ধনী থেকে নিজেদের মুক্ত করে সবাই স্কাউটশিপের দরজায় এসে দাঁড়াল।
ইহিতা বলল, সবাই প্রস্তুত?
হ্যাঁ।
দরজাটি খুলব?
খোলো।
ইহিতা দরজার একটি বোতাম স্পর্শ করতেই মৃদু একটা শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল, সাথে সাথে এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস স্কাউটশিপে প্রবেশ করে। সেই নোনা বাতাসে সজীব এক ধরনের ঘ্রাণ। ঠিক তখন একটা বুনো পাখি তারস্বরে ডাকতে ডাকতে স্কাউটশিপের উপর দিয়ে উড়ে গেল।
ইহিতা সবার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা সবাই কী এখন নামার জন্যে প্রস্তুত?
সবাই মাথা নাড়ল, হ্যাঁ, প্রস্তুত।
চল তাহলে নামি।
চল।
নীহা জিজ্ঞেস করল, কে আগে নামবে?
তুমি। ইহিতা বলল, তোমার পদচিহ্ন দিয়েই এই নতুন পৃথিবী শুরু হোক। নীহা চোখ বড় বড় করে বলল, আমার পদচিহ্ন দিয়ে?
সবাই মাথা নাড়ল। টর বলল, হ্যাঁ তোমার। নতুন পৃথিবীটা শুরু হোক সবচেয়ে নিস্পাপ মানুষের পদচিহ্ন দিয়ে।।
নীহা একটু হাসল, তারপর বলল, ঠিক আছে। তাহলে আমি নামি।
নীহা তখন স্কাউটশিপের সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। শেষ ধাপে পৌঁছে সে হঠাৎ থেমে গেল। পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলল, আমি কি আরেকজনের সাথে তার হাত ধরে নামতে পারি?
ইহিতা হাসিমুখে বলল, অবশ্যই পার নীহা।
নীহা তখন লাজুকমুখে বলল, নুট তুমি কী আমার হাত ধরবে? তুমি আর আমি কী হাত ধরে একসাথে কেপলার টুটুবির এই নতুন পৃথিবীতে নামতে পারি?
নুট বলল, অবশ্যই নামতে পারি নীহা। অবশ্যই।
স্কাউটশিপের ভেতরে দাঁড়িয়ে সবাই দেখল নুট আর নীহা হাত ধরাধরি করে বালুবেলায় পা দিয়েছে। নরম বালুতে পায়ের ছাপ রেখে দুজন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
ইহিতা ফিসফিস করে বলল, দ্বিতীয় পৃথিবীর প্রথম মানব ও মানবী। তারপর সে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে তার চোখ দুটো মুছে নেয়।
কে জানে কেন তার চোখে পানি এসেছে?