বুড়ো মানুষটা বলল, আমি মোটামুটিভাবে বিজ্ঞান আর গণিত জানি। তোমরা যদি চাও তাহলে আমি বাচ্চাদের বিজ্ঞান আর গণিত পড়াতে পারি।
মহিলাটির চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কিছু একটা বলতে গিয়ে সে থেমে যায়। ইতস্তত করে বলল, কিন্তু–
কিন্তু কী?
নেটওয়ার্ক নেই বলে আমাদের কোনো অর্থ সম্পদ নেই। তোমাকে তো বেতন দিতে পারব না।
বুড়ো মানুষটি বলল, আমাকে বেতন দিতে হবে না। স্কুলের কোনো কোনায় একটু ঘুমানোর জায়গা আর একটুখানি খাবার দিলেই হবে।
সেটা দিতে পারব। আমি বাসা থেকে তোমায় জন্যে দুটো কম্বল নিয়ে আসব।
বুড়ো মানুষটা হাসি হাসি মুখে বলল, হ্যাঁ। দুটো কম্বল হলেই হয়ে যাবে।
তুমি তাহলে চল আমার সাথে, আমাদের স্কুলটাতে নিয়ে যাই।
বুড়ো মানুষটি সারাদিন স্কুলের বাচ্চাদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখল। তাদের মজার মজার গল্প করল, গণিত শেখাল, বিজ্ঞান শেখাল, বেসুরো গলায় গান গাইল, বিজ্ঞানের ছোট ছোট পরীক্ষা করল। তারপর বিকেল বেলা স্কুলের বারান্দায় বসে বসে সব বাচ্চাদের বিদায় দিল।
একটি ছোট মেয়ে হাত নেড়ে বুড়ো মানুষটিকে বিদায় দিয়ে তার মায়ের হাত ধরে চলে যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। মা জিজ্ঞেস করল, কী হলো।
আমি ঐ বুড়ো দাদুকে একটা কথা বলে আসি?
কথা বলবে? যাও।
ছোট মেয়েটি বুড়ো মানুষটার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে পারি?
বল।
কানে কানে বলতে হবে। কেউ যেন শুনতে না পারে।
বুড়ো মানুষটি তার মাথা নিচু করল, মেয়েটি তখন তার কানে ফিস ফিস করে বলল, আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি। তুমি মহামান্য থুল। কিন্তু তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি কাউকে বলে দেব না!
বুড়ো মানুষটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে তার বাম চোখটা মটকে বলল, আমি জানি তুমি কাউকে বলে দেবে না!
» ২৬. অন্ধকার নেমে এলে
অন্ধকার নেমে এলে দুজন গুড়ি মেরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই ভেতর থেকে একটি কণ্ঠস্বর শোনা গেল, কে?
আমরা।
গোপন সংকেত?
কোমাডো ড্রাগন।
সাথে সাথে খুট করে দরজা খুলে গেল। ভেতরে আবছা অন্ধকার, যে দরজাটা খুলেছিল, একজন দীর্ঘদেহী মানুষ, একটু সরে দাঁড়িয়ে সে দুজনকে ঢুকতে দিল। একজন নারী এবং একজন পুরুষ ঘরের ভেতরে ঢুকে। নারীটি কমবয়সী একটি মেয়ে, লাল চুল একটি রুমাল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। পুরুষ মানুষটির চেহারায় একটি অস্বাভাবিক কাঠিন্য।
ঘরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকা একজন জিজ্ঞেস করল, কী খবর?
নিষ্ঠুর কঠিন চেহারার মানুষ কিংবা লাল চুলের মেয়ে কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দিল না। তারা হেঁটে ঘরের মাঝামাঝি ধাতব টেবিলটার পাশে রাখা চেয়ারটাতে বসে। পুরুষ মানুষটি নিজের হাতে কিছুক্ষণ মাথাটা চেপে ধরে রেখে সোজা হয়ে বসে বলল, খিদে পেয়েছে। কোনো খাবার আছে?
শুকনো প্রেটিন আর কিছু কৃত্রিম খাবার। খানিকটা রক্তের জেলো।
তাই দাও। উত্তেজক পানীয় নেই?
খুঁজলে একটা বোতল পাওয়া যেতে পারে।
খুঁজে দেখ।
খাবার এবং পানীয় টেবিলে দেবার পর দীর্ঘদেহী মানুষটি এসে ভারী গলায় জিজ্ঞেস করল, কী খবর?
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি কিছু শুকনো প্রোটিন চিবুতে চিবুতে এক ঢোক উত্তেজক পানীয় খেয়ে বলল, আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? তোমরা সবাই খুব ভালো করে জান খবর ভালো না।
সেটা তো জানি। কিন্তু কতো খারাপ?
আমাদের পুরো পরিকল্পনাটা ছিল নেটওয়ার্ক দিয়ে। নেটওয়ার্ক দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল। কিন্তু নেটওয়ার্কটিই নেই আমরা কী করব?
এখন আমরা কী করব?
মানুষের সাথে মিশে যেতে হবে।
মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, তার মানে আমরা কী ধরে নেব রবোমানবের বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে? আমরা মানুষের কাছে পরাজিত হয়েছি?
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি মাথা ঘুরিয়ে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল, মানুষ নিজেও পরাজিত হয়েছে। আমাদের হাত থেকে উদ্ধার পাবার জন্যে তারা নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে, এখন তারা পশুর মতো বেঁচে আছে।
দীর্ঘদেহী মানুষটি বলল, তোমার ধারণা সত্যি নয়। মাত্র দুই সপ্তাহ পার হয়েছে তার মাঝে মানুষ নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। আমি কয়েকটি শহর ঘুরে এসেছি। সেখানে মানুষেরা রীতিমতো উৎসব করছে।
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি কিছুক্ষণ দীর্ঘদেহী মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল তারপর একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন আমাদের মানুষের সাথে মিশে যেতে হবে। দরকার হলে এখন আমাদের তাদের উৎসবে যোগ দিতে হবে।
দীঘদেহী মানুষটি বলল, তুমি বলেছিলে বিকেল তিনটার সময় নেটওয়ার্ক দখল হবে। দুই ঘণ্টার ভিতরে মানুষদের আঘাত করতে হবে। শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। রবোমানবেরা তোমার কথা বিশ্বাস করে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে শহরের দখল নেবার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত নেটওয়ার্ক দখল হয় নি-বরং নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়েছে। সারা পৃথিবীর খবর জানি না কিন্তু বেশির ভাগ শহরে রবোমানদের ধরে ফেলেছে। কোথাও কোথাও মেরে ফেলেছে। কোথাও জেলে আটকে রেখেছে।
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি তীব্র দৃষ্টিতে দীর্ঘদেহী মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এই সবকিছু জানি। তুমি কেন আবার এই কথাগুলো আমাকে শোনাচ্ছ?
তুমি আমাদের আনুষ্ঠানিক দলপতি। সেজন্যে শোনাচ্ছি। রবোমানবদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব তোমার হাতে ছিল। তুমি কী তোমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছ?