মহামান্য থুল বললেন, আমি তোমাদের আরো মন খারাপ করা খবর দিই। রবোমানব খুঁজে বের করার অসাধারণ একটা পদ্ধতি একটা কমবয়সী ছেলে বের করেছিল, রবোমানবেরা তার মস্তিষ্ক কেটে নিয়ে গেছে। শুধু যে মস্তিষ্ক কেটে গিয়েছে তা নয়, রবোমানবেরা তার মস্তিষ্ক থেকে সব তথ্য বের করে এখন আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। আর কয়েকদিনের ভেতর সব জায়গায় রবোমানবেরা ঢুকে যাবে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর সদস্যরা চুপ করে বসে রইল। একটু পর গণিতবিদ শ্রুম বলল, আমাদের কী কিছুই করার নেই?
আছে। অনেক কিছু করার আছে। আমরা তার চেষ্টা করছি।
জুহু বলল, কিন্তু নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, আমরা কয়েকদিনের মাঝে নেটওয়ার্কটি হারাব। আমি খুব দুঃখিত আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি, মানুষের এতো বড় বিপর্যয়ের জন্যে আমি দায়ী-
মহামান্য থুল হাত তুলে তাকে থামালেন, তুমি কেন মিছিমিছি নিজের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছ। এখানে তোমার কিছু করার ছিল না।
কিন্তু এই দায়িত্বটি ছিল আমার।
তোমার একার নয়, আমাদের সবার। মহামান্য থুল সবার দিকে একবার তাকালেন তারপর বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, এবারে আমি তোমাদের বলি আমি কেন তোমাদের ডেকে এনেছি।
সবাই তাদের চেয়ারে সোজা হয়ে বসল। মহামান্য থুল তার হাতের নখগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতে করতে বললেন, আমরা সত্যের মুখোমুখি হই। পৃথিবীর মানুষ প্রথমবার সত্যিকারের একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। রবোমানবেরা আমাদের সভ্যতা ধ্বংস করার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। প্রাচীনকালে এক দেশের মানুষেরা অন্য দেশ দখল করে সেই দেশের মানুষদের হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দিত। এই রবোমানবদের কাছ থেকে আমরা ঠিক সেরকম একটা বিপদ আশংকা করছি। যদি কোনোভাবে তারা নেটওয়ার্ক দখল করতে পারে তাহলে তারা পৃথিবীর মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। আমরা কোনোভাবে সেটা হতে দিতে পারি না। যে কোনো মূল্যে কিছু মানুষ হলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জীববিজ্ঞানী ত্রানা বলল, আপনি ঠিক কী বলছেন আমরা বুঝতে পারছিনা মহামান্য থুল।
আমি একটি মহাকাশযান প্রস্তুত করেছি। সেই মহাকাশযানে করে আমরা পৃথিবীর কিছু মানুষকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিতে চাই। দূরবর্তী কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে তারা নতুন করে মানুষের বসতি স্থাপন করবে। ছয়শত মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে কেপলার টুটুবি গ্রহটি আছে। অন্য কিছু খুঁজে না পেলেও অন্তত এই গ্রহটিতে থাকতে পারবে। পৃথিবী থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তারা বেঁচে থাকবে। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও মানুষের বংশধরেরা বেঁচে থাকবে। মানুষের সভ্যতা বেঁচে থাকবে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর দশজন সদস্য চুপ করে বসে রইল, কেউ একটি কথাও বলল না। মহামান্য থুল বলল, তোমরা চুপ করে বসে আছ কেন? কিছু একটা বল।
পদার্থবিজ্ঞানী ক্রন বলল, আমাদের কিছু বলার নেই মহামান্য থুল। মানব সভ্যতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের আর কিছু করার নেই।
মহামান্য থুল একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কিছু করার নেই সেটি সত্যি নয় ক্রন। আমাদের অনেক কিছু করার আছে এবং আমরা একেবারে শেষ পর্যন্ত তার চেষ্টা করব, কিন্তু আমি কোনো ঝুঁকি নেব না। মানুষ হয়ে আমি রবোমানবের পদানত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। যদি বেঁচে থাকতেও হয় আমি জানব অল্প কিছু মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও বেঁচে আছে। রবোমানবের হাতে যদি আমার মৃত্যু হয় আমি শান্তি নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারব।
সমাজবিজ্ঞানী লিহা বলল, মহামান্য থুল, মহাকাশযানে কারা যাবে, সাথে কী থাকবে, কোথায় যাবে, নিরাপত্তার জন্যে কী করা হবে এই সব খুঁটিনাটি কী ঠিক করা হয়েছে?
মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, না করা হয় নি। গোপনীয়তার জন্যে আমি কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছি, কিন্তু খুঁটিনাটি কিছুই করা হয় নি। আমি তোমাদের ডেকেছি এই পরিকল্পনাটা পূর্ণাঙ্গ করার জন্যে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর সবচেয়ে কমবয়সী সদস্য পরিবেশবিজ্ঞানী কিহি বলল, সময় নষ্ট না করে আমরা তাহলে কাজ শুরু করে দিই।
হ্যাঁ। মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, কাজ শুরু করে দাও।
০৩. টুরান
তোমার নাম কী?
টুরান।
টুরান, তুমি মাত্র বাইশ বছরের একজন যুবক। তুমি কেন পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের অনিশ্চিত জীবনে ঝাঁপ দিতে চাও? তুমি কোথায় বসতি স্থাপন করবে কিংবা আদৌ কোথাও বসতি স্থাপন করতে পারবে কী না সেটি কেউ জানে না।
তুমি কেন এই প্রশ্ন করছ?
টুরান, এখানে প্রশ্ন করব আমি, তুমি উত্তর দেবে। তুমি প্রশ্ন করতে পারবে। বল, তুমি কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাইছ?
তুমি যে উত্তর শুনলে খুশি হবে সেটি দেব নাকি সত্যি উত্তর দেব? (হাসি) প্রথমে আমাকে খুশি করার জন্যে উত্তরটি দাও।
খুব শৈশব থেকে আমার মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল। জন্মের পর থেকে আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশচারী হওয়ার। আমি সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আমি নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে ঘুরে বেড়াতে চাই। আমি অজানাকে জানতে চাই।
চমৎকার টুরান। এবারে সত্যি কারণটি বল।
এই পৃথিবী নিয়ে আমার ঘেন্না ধরে গেছে। আমি এই দূষিত গ্রহ থেকে পালাতে চাই।
কেন?
আমার সম্পর্কে সব তথ্য তোমার কাছে আছে। তুমি জান।
টুরান। তোমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বল, কেন?