কেউ কোনো কথা বলল না, নিঃশব্দে রবোমানবটির দিকে তাকিয়ে রইল। রবোমানবটি হলঘরের মানুষগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে বলল, আজ আমার খুব আনন্দের দিন। এতোদিন আমরা মানুষের ভয়ে লুকিয়ে থাকতাম। এখন আমাদের আর লুকিয়ে থাকতে হবে না। আমরা প্রকাশ্যে এসেছি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রত্যেকটা শহরে নগরে রবোমানবেরা বের হয়ে তার দায়িত্ব নিচ্ছে। পুরো পৃথিবী এখন রবোমানবদের হাতের মুঠোয়।
বয়স্ক একজন মানুষ বলল, আমি বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি বলছ পুরো পৃথিবীটা তোমাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু কেমন করে সেটা তোমাদের হাতের মুঠোয় গিয়েছে?
তার কারণ আমরা পৃথিবীর নেটওয়ার্ক দখল করেছি। যে পৃথিবীর নেটওয়ার্ক দখল করতে পারে সে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কিন্তু নেটওয়ার্ক তত বন্ধ। বন্ধ নেটওয়ার্ক দখল করে কী লাভ?
আমরা বন্ধ নেটওয়ার্ক দখল করি নি।
তাহলে নেটওয়ার্ক বন্ধ কেন?
নিশ্চয়ই কোনো একটা কারণে নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়েছে।
সেই কারণটা কী?
মধ্যবয়স্ক মানুষটার কোটরাগত চোখ দুটো হঠাৎ যেন জ্বলে ওঠে, সে হিংস্র গলায় বলল, তুমি সীমা অতিক্রম করেছ? আমি তোমার কথায় উত্তর দিতে বাধ্য নই।
কিন্তু আমাদের জানতে হবে।
বেশ। জেনে নাও। বলে রবোমানবটি তার রিভলবার তুলে বুড়ো মানুষটির মাথা লক্ষ্য করে গুলি করল। পুরো হলঘরটিতে গুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
বুড়োমানুষের দেহটি ঢলে নিচে পড়ে গেল। রবোমানবটি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমাদের জন্যে এটি একটি উদাহরণ হয়ে রইল। কেউ যদি সীমা অতিক্রম করে তার বেঁচে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
কেউ কোনো কথা বলল না।
আমরা পৃথিবী দখল করেছি এই বিষয়টি নিয়ে কারো প্রশ্ন আছে?
এবারেও কেউ কোনো কথা বলল না।
চমৎকার। রবোমানবটি মুখে সন্তুষ্টির একটা ভাব ফুটিয়ে বলল, এবার তাহলে সকলে ঘরে ফিরে যাও। কাল সকালে আমাদের পঞ্চাশজন মানুষ দরকার। সুস্থ সবল নীরোগ পঞ্চাশ জন মানুষ। কমবয়সী পঞ্চাশজন মানুষ। নাবী এবং পুরুষ। আজ রাতের মাঝে নেটওয়ার্ক চালু হয়ে যাবে। সেই নেটওয়ার্কে আমরা নির্দেশ পাঠাব।
এবারেও কেউ কোনো কথা বলল না। রবোমানবটির মুখে ক্রুর একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, এই পঞ্চাশজনের জীবনকে আমরা মহিমান্বিত করে দেবো। তারা তুচ্ছ মানুষের জীবন পরিত্যাগ করে সত্যিকার রবোমানবের জীবনে পা দেবে।
উপস্থিত সবাই হঠাৎ করে আতংকে শিউরে ওঠে।
» ২৩. আবছা অন্ধকার
আবছা অন্ধকার একটি ঘরে কয়েকজন তরুণ গা ঘেষাঘেষি করে বসে আছে। তাদের সামনে একটি মনিটর। সেখানে আলোর কোনো বিচ্ছুরণ নেই। একজন নিচু গলায় বলল, নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে?
না, চালু হয়নি।
আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি মনে মনে প্রার্থনা করছি যেন নেটওয়ার্ক চালু না হয়।
শুধু তুমি নয় এই প্রথমবার আমরা সবাই প্রার্থনা করছি যেন নেটওয়ার্ক চালু না হয়।
রবোমানবেরা নেটওয়ার্কটা দখল করে নিয়েছে, তুমি চিন্তা করতে পার সেটি কী ভয়ানক ব্যাপার?
না আমি চিন্তাও করতে পারি না।
একটা জিনিস লক্ষ করেছ?
কী জিনিস?
নেটওয়ার্কটা যদি চালু না হয় তাহলে রবোমানবেরা কিছু করতে পারবে।
আমরাও কিছু করতে পারব না।
কিন্তু আমরা অনেক, তারা মাত্র তিনজন। আমরা ইচ্ছে করলে তাদের আংগুল দিয়ে টিপে মেরে ফেলতে পারব।
তাদের হাতে অস্ত্র আছে।
আমরাও অস্ত্র জোগাড় করতে পারি।
কেমন করে? নেটওয়ার্ক বন্ধ-তুমি কিছুই জোগাড় করতে পারবেনা।
আমরা অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে ফেলতে পারি।
কী বলছ তুমি? এটা কতো বড় অপরাধ তুমি জান?
নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকলে এটা কোনো অপরাধ না।
যদি নেটওয়ার্ক চালু হয়ে যায়?
এখনো হয় নি।
হে ঈশ্বর তুমি নেটওয়ার্কটি বন্ধ রাখ।
কে জানে পৃথিবীর অন্য জায়গায় কী হচ্ছে!
ঠিক এখানে যা ঘটছে নিশ্চয়ই হুবহু তাই ঘটছে।
হে বিধাতা, তুমি নেটওয়ার্কটি বন্ধ রাখ। রবোমানবেরা যেন কোনোভাবে নেটওয়ার্ক চালু করতে না পারে।
২৪. রবোমানব জিজ্ঞেস করল
রবোমানব তিনজনের একজন জিজ্ঞেস করল, তোমরা কী চাও?
পেশীবহুল তরুণটি তার অস্ত্রটি হাত বদল করে বলল, তোমরা কাল বলেছিলে তোমরা সুস্থ সবল নীরোগ পঞ্চাশজন মানুষ চাও। আমরা সুস্থ সবল নিরোগ পঞ্চাশজন এসেছি।
একজন রবোমানব তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তুলে বলল, আমাদের সাথে তামাশা করার চেষ্টা করো না। এই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি দিয়ে তোমাদের সবাইকে শেষ করে দেব।
আমরা সেটা অনুমান করেছিলাম। তাই দেখতেই পাচ্ছ আমরা সুস্থ সবল নীরোগ পঞ্চাশজন খালি হাতে আসিনি। সবার হাতে অস্ত্র। অস্ত্রাগার ভেঙে নিয়ে এসেছি।
।সোনালি চুলের একটি মেয়ে বলল, পৃথিবীর নেটওয়ার্ক কেন বন্ধ সেটা আমরা এখন বুঝতে পারছি। তোমরা এটি দখল করেছ জানতে পেরে নেটওয়ার্কটি অচল করে দেয়া হয়েছে। তোমরা সোনার হরিণ ধরার চেষ্টা করেছ। ধরে আবিষ্কার করেছ এটা মরা ইঁদুর। মানুষের বুদ্ধি রবোমানবের থেকে অনেক বেশি।
রবোমানবটি হিংস্র গলায় বলল, আমার কাছে বুদ্ধি নিয়ে বড়াই করো না। তোমরা সরে যাও, না হলে গুলি করে শেষ করে দেব।
পেশীবহুল তরুণটি বলল, এই কথাটা বরং আমরাই বলি। অস্ত্র ফেলে দিয়ে দুই হাত উঁচু করে দাঁড়াও না হলে আমরা গুলি করে শেষ করে দেব।
তরুণটির কথা শেষ হবার আগে রবোমানব তিনটি তাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে শুরু করে। পঞ্চাশজন তরুণ তরুণীও তাদের অস্ত্র তুলে নেয়। হলঘরটির মাঝে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।