আমাকে হত্যা করার কথা বলছ?
হ্যাঁ। শুধু তোমাকে না, এই মুহূর্তে বিজ্ঞান আকাদেমীর এগারোজন সদস্যকেই হত্যা করা হচ্ছে। তোমাকে দিয়ে শুরু করব। তোমাকে নিজের হাতে হত্যা করার জন্যে সবাই আগ্রহী, আমি অনেক বেছে এই মেয়েটিকে সুযোগ দিয়েছি।
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করতেই লাল চুলের মেয়েটি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এল। থুল কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, আমার ঠিক তোমার বয়সী একটা মেয়ে আছে।
আমার তোমার বয়সী বাবা নেই।
তুমি আমাকে হত্যা করবে?
হ্যাঁ।
আমার গুলি করতে খুব ভালো লাগে।
ঠিক আছে গুলি কর।
মেয়েটি তার অস্ত্রটি উপরে তুলতেই মহামান্য থুল হাত তুলে তাকে থামালেন বললেন, এক সেকেন্ড।।
কী হয়েছে?
আমাকে হত্যা করার আগে আমি কি তোমাদের একটা কথা বলতে পারি?
কী কথা?
একটি নেটওয়ার্ক দিয়ে পুরো মানবজাতিকে একটা শৃঙ্খলার মাঝে আনার মাঝে একটা ঝুঁকি আছে সেটা যে আমরা অনুমান করেছিলাম সেটা কি তোমরা জান?
তুমি কী বলতে চাইছ?
তোমরা যে নেটওয়ার্কটি দখল করতে চাইবে সেটা আমরা অনুমান করেছিলাম সেটা কী তোমরা জান?
এটা একটা ছোট শিশুও অনুমান করতে পারবে।
কাজেই আমরা কী করেছি তোমরা জান?
কী করেছ?
নেটওয়ার্কটি ধ্বংস করে দিয়েছি। এই মুহূর্তে সেটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটির এক মুহূর্ত সময় লাগল কথাটি বুঝতে। যখন বুঝতে পারল তখন সে হা হা করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল, বুড়ো ভাম কোথাকার! তুমি আমাকে বুদ্ধিহীন প্রতিবন্ধী ভেবেছ? তুমি ভেবেছ আমি জানি না যে এই নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা সম্ভব না? সরাসরি নিউক্লিয়ার বোমা ফেলেও এটা ধ্বংস করা যায় না? ওর কোনো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ নেই, এটা বন্ধ করার কোনো সুইচ নেই! এর বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করার কোনো উপায় নেই, মূল কেন্দ্রে মানুষ ঢোকার ব্যবস্থা নেই। ভূমিকম্প, সুনামি এর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না! তুমি ভেবেছ আমি এসব জানি না? তুমি ভেবেছ আমি জানি না যে এটি অনেক জায়গায় এটি কপি করে রাখা আছে? তুমি ভেবেছ আমি তোমার এই অর্থহান প্রলাপ বিশ্বাস করব?
মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, আমি একবারও সেটি ভাবি নি। আমি ভেবেছি তুমি আমার কথা শুনে খোঁজ নেবে আমি কী সত্যি কথা বলেছি নাকি মিথ্যে কথা বলে তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছি।
রবোমানবেরা তাদের হেডফোনে কিছু শোনার চেষ্টা করে, তাদেরকে হঠাৎ করে বিভ্রান্ত দেখা যায়, নিজেদের ভেতরে ফিসফিস করে কথা বলে তারপর নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটির কাছে ছুটে আসে, চাপা গলায় বলে, আসলেই নেটওয়ার্ক থেকে কোনো তথ্য আসছে না।
মহামান্য থুল হাসলেন, বললেন, এটা কোনো কূট চাল নয়! তোমাদের বিভ্রান্ত করার কোনো কৌশল নয়। আসলেই নেটওয়ার্কটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি চিৎকার করে বলল, অসম্ভব!
নেটওয়ার্ক দখল করার মতো অসম্ভব একটা কাজ যদি তোমরা করতে পার, তাহলে সেটা ধ্বংস করার মতো আরেকটা অসম্ভব কাজ কেন আমরা করতে পারব না?
এটা কেউ করতে পারবে না–নিশ্চয়ই এখানে অন্য কিছু আছে।
অন্য কিছু নেই।
আছে। নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি হিংস্র গলায় বলল, নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা অসম্ভব। স্বয়ং শয়তান এলেও পারবে না। আমি এক্ষুণি বের করছি আসলে কী হয়েছে। মানুষটি তার পকেট থেকে ছোট কমিউনিকেশন মডিউল বের করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। সে হতবাক হয়ে আবিষ্কার করে সেটি নীরব হয়ে আছে। সে বোতামগুলো স্পর্শ করল, কোনো লাভ হল না। তারপর সেটা ধরে সে ঝাঁকুনি দিল, দুই হাতে সেটাকে পাগলের মতো আঘাত করতে লাগল।
মহামান্য থুল বললেন, কোনো লাভ নেই। তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর, পৃথিবীতে এখন কোনো নেটওয়ার্ক নেই। নেটওয়ার্কটি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তোমরা যেন পৃথিবীর মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পার সেজন্যে আমরা নেটওয়ার্কটি ধ্বংস করেছি!
অসম্ভব!
হ্যাঁ। প্রায় অসম্ভব। তারপরও করেছি। খুব বেশি জানাজানি হতে দেই নি, ধ্বংস করার দায়িত্বটি নিয়েছিলাম আমি! মহামান্য থুল একটু হাসলেন, এই প্রথম আমি কিছু একটা ধ্বংস করলাম!
নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটির মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে ওঠে, সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে, অসম্ভব! অসম্ভব! তুমি আমাকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করছ। তোমাদের অন্য কোনো মতলব আছে! তোমরা খুব ভালো করে জান নেটওয়ার্ক। ধ্বংস হলে পুরো পৃথিবীর সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে! পুরো পৃথিবী অচল হয়ে যাবে। নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হচ্ছে মাথায় গুলি করার মতো।
মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ! পুরো পৃথিবী এখন ওলট-পালট হয়ে যাবে! কোথাও কোনো তথ্য নেই, কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সমস্ত পৃথিবীতে এখন বিশৃঙ্খল অবস্থা শুরু হবে! চরম বিশৃঙ্খলা!
তুমি বলতে চাইছ তুমি নিজের হাতে পৃথিবী ধ্বংস করছ?
মহামান্য থুল বাধা দিয়ে বললেন, আমি মোটেও পৃথিবী ধ্বংস করছি না। আমি শুধু নেটওয়ার্কটি ধ্বংস করেছি। নেটওয়ার্ক! নেটওয়ার্ক ধ্বংসের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হবে না—পৃথিবী অনেক বড় ব্যাপার। এতে অল্পে পৃথিবী ধ্বংস হয় না। বড়জোর বিশৃঙ্খলা হবে, হই চই হবে, ওলট-পালট হবে কিন্তু ধ্বংস মোটেও হবে না। তোমরা যেহেতু সব খবর রাখো, তোমরা নিশ্চয়ই জান খাদ্যশস্যের যেন কোনো অভাব না হয় সেজন্যে আমরা অনেকদিন থেকে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত খাবার মজুদ করেছি। ওষুধপত্র মজুদ করেছি, প্রয়োজনীয় রসদ মজুদ করেছি! কাজেই পৃথিবীর মানুষ প্রথম কয়েকদিন হই চই করবে, একটু বিশৃঙ্খল হবে তারপর নিজেরা নিজেদের নেতৃত্ব তৈরি করে নিজেদের দায়িত্ব নেবে! তোমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাবে না।