টর বলল, আমি এখনও বুঝতে পারছি না, তুমি কী বলতে চাইছ!
তুমি বুঝতে পারছ না কারণ আমি এখনো কথাটি বলি নি।
তাড়াতাড়ি বলে ফেল।
টুরান বলল, আমি যদি ঠিক করে অনুমান করে থাকি তাহলে ইহিতা আমাদের বলতে চেয়েছিল মানুষের একটা দল হিসেবে আমাদের একটা দলপতি থাকা দরকার। যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শুধু তাই না, দলপতিকে মেনে নিলে আমরা সবাই তার সিদ্ধান্তটি কোনোরকম প্রশ্ন না করে মেনে নিতে পারব।
টুরান একটু থামল এবং সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইল। সে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বলল, এই মুহূর্তে আমাদের একজন দলপতি দরকার। আমি দলপতি হিসেবে ইহিতার নাম প্রস্তাব করছি। একটু আগে ইহিতা আমাদের যে কথাগুলো বলেছে তার প্রত্যেকটি কথা সত্যি বের হয়েছে। সে আমাদের ভয়ংকর বিপদে নিজে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
টর বলল, আমাদের মাঝে দুইজন রবোমানব আছে, তুমি কেমন করে জান ইহিতা একজন রবোমানব না?
টুরান থতমত খেয়ে বলল, সেটা আমি জানি না। কেউই জানে না।
নুট একটু এগিয়ে এসে বলল, আমি জানি, ইহিতা রবোমানব না।
টর মাথা ঘুরিয়ে নুটের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি জান না। তুমি অনুমান করছ।
নুট বলল, না। আমি জানি। আমার টুরানের প্রস্তাবটা খুব পছন্দ হয়েছে। আমিও ইহিতাকে আমাদের দলপতি হিসেবে গ্রহণ করছি।
নীহা বলল, আমিও।
সুহা বলল, আমিও তাকে দলপতি হিসেবে চাই।
ক্লদ সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আলাপটা বোঝার চেষ্টা করল। সে এমনিতে খুবই ছটফটে ছেলে, কিন্তু একটু আগে এতো কাছে থেকে তেজস্ক্রিয় প্রাণীগুলো দেখার পর থেকে সে হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেছে। সে কিছুক্ষণ ইহিতার দিকে তাকিয়ে বলল, আমিও চাই।
টর বলল, তার মানে বাকি রয়েছি শুধু আমি?
কেউ কোনো কথা বলল না। টর বলল, আমার অবশ্যি কোনো পথ বাকি থাকল না। আমাকেও মেনে নিতে হচ্ছে।
টুরান বলল, চমকার।
ইহিতা বলল, আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মঙ্গল গ্রহের এই পাহাড়ের নিচে এই ধূলিঝড়ের মাঝে, তেজস্ক্রিয় প্রাণীদের আনাগোনার মাঝে আমরা বসে বসে একটা নাটক করছি! কিন্তু আমি এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করব না। সময় খুব মূল্যবান। আমি সময়টা বাঁচাতে চাই। আমাকে যেহেতু দলপতির দায়িত্ব দিয়েছ আমি সেই দায়িত্ব নিচ্ছি-শুধুমাত্র এই বিপজ্জনক পথের অংশটুকুতে। যদি ঠিকভাবে মানুষের আবাসস্থলে পৌঁছাতে পারি তখন অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সেটি তখন দেখা যাবে। টুরান বলল, তাছাড়া আমরা একটি খেলার টিম তৈরি করছি না যে একেক খেলায় একেকজন দলপতি হবে।
ইহিতা বলল, সেই আলোচনা থাকুক। তোমরা সবাই এখনই রওনা দাও। দ্রুত আমি আসছি।
নীহা জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথা থেকে আসছ?
সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। সবাই হাঁটতে শুরু কর।
সবাই হাঁটতে হাঁটতে দেখল, ইহিতা পিঠ থেকে তার ব্যাকপেক নামিয়ে মাটিতে উবু হয়ে কিছু একটা করছে। কী করছে কেউ অনুমান করতে পারল না।
ইহিতা তার কাজ শেষ করে একটু জোরে হেঁটে ছোট দলটির সাথে যোগ দিল। টর জিজ্ঞেস করল, কাজ শেষ হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে।
টর আশা করছিল ইহিতা বলবে সে কী করেছে, ইহিতা বলল না। তখন টর নিজেই জিজ্ঞেস করল, তুমি পিছনে কী করে এসেছ?
এমন কিছু নয়।
তার মানে তুমি আমাদের বলতে চাইছ না?
না।
কেন?
টর, তোমার একটা বিষয় বুঝতে হবে। তোমরা আমাকে তোমাদের দলপতি বানিয়েছ, এখন আমার উপর কিছু বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়েছে। শুধু আমাকে বেঁচে থাকলে হবে না। তোমাদেরকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেজন্যে আমাকে কিছু বাড়তি কাজ করতে হয়ে। আমি সেটা করছি। যখন তোমাদের এটা জানার প্রয়োজন হবে আমি তোমাদের জানাব।
টর কিছু বলল না, ইহিতার কথাটা তার খুব পছন্দ হল বলে মনে হল না।
ছোট দলটি চারঘণ্টা হাঁটার পর ইহিতা বলল, আমরা এখন বিশ্রাম নেব।
নীহা বলল, তোমার এই অসাধারণ সিদ্ধান্তের জন্যে অনেক ধন্যবাদ ইহিতা। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর কোনোদিন বুঝি একটু বিশ্রাম নেবার কথা বলবে না।
ইহিতা বলল, শক্তি থাকতে থাকতে আমি যতটুকু সম্ভব পথ অতিক্রম করে ফেলতে চাইছিলাম।
ক্লদ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, টুরান এতোক্ষণ তাকে ট্রান্সপোর্টারে শুইয়ে এনেছে, এবারে তাকে নিচে শুইয়ে দিয়ে বলল, ভাগ্যিস মঙ্গল গ্রহে মাধ্যাকর্ষণ বল অনেক কম, তা নাহলে ক্লদকে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যেত।
সুহা টুরানের হাত স্পর্শ করে বলল, আমি যে তোমাকে কী বলে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না! কতোটুকু পথ ক্লদকে ট্রান্সপোর্টারে করে এনেছ!
টুরান পাথরে পা ছড়িয়ে বসে বলল, ধন্যবাদ দেবার তুমি আরো ভালো সুযোগ পাবে–এবারে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেয়া যাক।
ইহিতা বলল, সবাইকে মনে করিয়ে দিই–এবার যখন রওনা দেব তখন কিন্তু আর থামাথামি নেই। রওনা দেবার আগে সবাই খানিকটা স্নায়ু-উত্তেজক পানীয় খেয়ে নিও। তাহলে খিদেও পাবে না, ক্লান্তও হবে না। ঘুমাতেও হবে না।
নীহা বলল, যখন রওনা দেব তখন সেটা দেখা যাবে। এই মুহূর্তে আমার ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমি একটু ঘুমাই যখন রওনা দেবে তখন ডেকে তুলো।
সুহা বলল, তুমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাও। তোমাকে দেখে আমার হিংসা হচ্ছে।
কেন? হিংসা হচ্ছে কেন?
এরকম একটা পরিবেশে যার ঘুম পায় তাকে দেখে হিংসা হতেই পারে!
নীহা চোখ বন্ধ করতে করতে বলল, তোমাকে কুগুরাভ সমস্যাটা শিখিয়ে দেব-তার সমাধানের কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যাবার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই!
১৭. নীহা ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠল
নীহা ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠল। টুরান ঝাঁকুনি দিয়ে তাকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করে বলল, নীহা! ওঠ।