নীহা বলল, তোমার গলার স্বর সুন্দর। আমাদের মাঝে তোমার সবচেয়ে বেশি কথা বলা উচিত ছিল।
নুট দুর্বলভাবে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, ধন্যবাদ নীহা। কিন্তু আমি অবশ্যি গলার স্বর নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলাম না। তুমি যে বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করেছ আমি সারাক্ষণ শুধু সেটাই ভেবেছি। ভেবে ভেবে একটা উত্তর পেয়েছি।
কী উত্তর পেয়েছ?
তুমি ভবিষ্যতের একটা পরিকল্পনা জানতে চেয়েছ, আমি তোমাকে সেই পরিকল্পনা দিতে পারি। একেবারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
সত্যি?
হ্যাঁ।
পরিকল্পনাটা খুবই সহজ, তার জন্যে আমাদের এক-দুইজনকে হয়তো মারা যেতে হবে, কিন্তু যারা বেঁচে থাকবে তাদের একটা সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকবে।
ইহিতা বলল, সেটি কী বলে ফেল নুট।
আমাদের এখনই পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে মানুষের আবাসস্থলটাতে যেতে হবে। সেখানকার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে নয়। অন্য কারণে।
কী কারণে?
এই লম্বা পথ পায়ে হেঁটে যেতে আমাদের কয়েকদিন লাগবে। এই সময়টাতে তেজস্ক্রিয় প্রাণী নিশ্চিতভাবে আমাদের আক্রমণ করবে। তখন আমরা একটা ভয়ংকর বিপদে পড়ব। আমার ধারণা তখন আমাদের মাঝে কারা মানুষ কারা রবোমানব সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কেউ কোনো কথা না বলে স্থির দৃষ্টিতে নুটের দিকে তাকিয়ে রইল। নুট বলল, আমরা যদি রবোমানবদের আলাদা করতে পারি তখন হয় তারা না হয় আমরা বেঁচে থাকব। আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি, দুই কারণে। প্রথম কারণ, আমরা সংখ্যায় বেশি।
ইহিতা জানতে চাইল, দ্বিতীয় কারণ?
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমি জানি আমাদের কোন দুইজন রবোমানব। কাজেই তারা হঠাৎ করে কিছু করতে পারবে না। অন্ততপক্ষে আমি সতর্ক থাকব!
সবাই ভয়ানকভাবে চমকে উঠল, টর তীব্র স্বরে জিজ্ঞেস করল, কোন দুইজন?
নুট মাথা নাড়ল, বলল, আমি বলব না। আমি সেটা জানি কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। প্রমাণ ছাড়া আমার কথার কোনো গুরুত্ব নেই, বরং সেটা একটা জটিলতা তৈরি করবে। আমি তাই প্রমাণের জন্যে অপেক্ষা করছি।
টর মাথা নেড়ে বলল, আসলে তুমি জান না।
জানি।
তুমি কথা বলতে না সেটাই ভালো ছিল।
নুট হাসার চেষ্টা করল, আমি বলতে চাই নি কিন্তু নীহা ভেঙে পড়ছে দেখে বলছি। নুট নীহার দিকে তাকিয়ে বলল, যখন আমরা একশভাগ খাঁটি প্রমাণসহ রবোমানবদের আলাদা করব–তখন ট্রিনিটি আমাদের যে কয়জন বেঁচে থাকবে সেই বাকি মানুষদের মহাকাশযানে নিয়ে নেবে। তুমি সেটাকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা হিসেবে নিতে পার।
নীহা কিছুক্ষণ নুটের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, ধন্যবাদ নুট। তুমি আমার ভেতরে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি করেছ! আমি আরো এক দুই দিন বেঁচে থাকার জন্যে চেষ্টা করতে রাজি আছি!
চমৎকার।
ক্লদ নুটের পোশাক স্পর্শ করে বলল, নুট!
বল।
কোন দুইজন রবোমানব আমিও সেটা জানি।
নুট হাসল, বলল, চমৎকার! কিন্তু কাউকে সেটা বল না। আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
ক্লদ মাথা নাড়ল, না বলব না।
১৪. মহামান্য থুল বাগানে
মহামান্য থুল বাগানে তার চেয়ারটিতে বসেছিলেন। সূর্য ড়ুবে যাবার পর একটা শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। তার একটা গরম কাপড় গায়ে দিয়ে বসা উচিত ছিল। দুই হাত বুকের কাছে এনে অনেকটা শিশুর মতো গুটিসুটি মেরে তিনি চেয়ারে বসে রইলেন।
পাশে তথ্যবিজ্ঞানী জুহু দাঁড়িয়েছিল। সে বলল, মহামান্য থুল, এখন আপনার ঘরের ভেতরে চলে যাওয়া উচিত।
মহামান্য থুল বললেন, ঠিকই বলেছ, কিন্তু উঠতে আলস্য লাগছে। বয়স হয়ে গেলে এটি হচ্ছে সমস্যা! সহজ কাজটিও তখন কঠিন।
তাহলে কি আপনার জন্যে একটা গরম কাপড় নিয়ে আসব?
না, না, না, কোনো প্রয়োজন নেই! মহামান্য থুল ব্যস্ত হয়ে বললেন, তুমি বরং চেয়ারটা টেনে বস। তোমার সাথে একটু কথা বলি।
জুহু একটা চেয়ার টেনে মহামান্য থুলের কাছে বসল। মহামান্য থুল দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, পৃথিবীতে খাবারের পরিবহনের কাজটা কী শেষ করা হয়েছে?
করা হয়েছে মহামান্য থুল। আপনি যেভাবে বলেছেন সেভাবে পৃথিবীর একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও খাদ্যশস্যকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
শুকনো প্রোটিন?
সেটিও।
মৌলিক ওষুধপত্র।
যথেষ্ট পরিমাণে।
চমৎকার।
কেন সেটি করা হল সেটি আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। মূল ভাণ্ডার থেকে প্রয়োজনের সময় খাবার পাঠানো অনেক বেশি কার্যকর পদ্ধতি। এখন অনেক জায়গায় নতুন করে শস্য সংরক্ষণের জন্যে ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতো অল্প সময়ে সেটা করা খুব সহজ হয় নি। তারপরেও করেছি–আপনার নির্দেশ সবাই খুব গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছে।
ধন্যবাদ জুহু।
মহামান্য থুল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, জুহু।
বলুন মহামান্য থুল।
আমরা যে মহাকাশযানটা পাঠিয়েছিলাম তার খবর কী জান?
জানি মহামান্য থুল। জুহু মাথা নেড়ে বলল, তাদের নিয়ে দুঃসংবাদ আছে।
কী দুঃসংবাদ।
সাতজন মহাকাশচারীর মাঝে দুইজন রবোমানব জানার পর মহাকাশযানের মূল কম্পিউটার সাতজন অভিযাত্রীকেই মহাকাশযান থেকে বের করে দিয়েছে।
বের করে দিয়েছে? কোথায়? মঙ্গল গ্রহে।
মহামান্য থুল শিস দেয়ার মতো শব্দ করলেন। মঙ্গল গ্রহ তো থাকার উপযোগী গ্রহ নয়। সেখানে গত শতাব্দীতে তেজস্ক্রিয় এক ধরনের প্রাণী তৈরি করা হয়েছিল। সেই প্রাণীগুলো তো এখনো শেষ হয় নি।
জুহু মাথা নাড়ল, বলল, খুবই ভয়ংকর পরিবেশ। মহাকাশচারীদের বেঁচে থাকার কথা না। সম্ভবত সবাই এর মাঝে মারা গেছে।