ইহিতা জিজ্ঞেস করল, এখন আমরা কী করব?
সুহা বলল, ভেতরে ঢুকব। অন্ততপক্ষে চারদিকে দেয়াল আর মাথার উপরে একটা ছাদ তো থাকবে।
কেমন করে ঢুকব? নীহা জানতে চাইল, দরজা কোথায়? চাবি কোথায়?
টুরান বলল, একটা ব্যবস্থা থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে আশ্রয় দেয়ার একটা কোড আছে, সেই কোডটি দিলেই দরজা খুলে যাবে। আগে দরজাটি খুঁজে বের করা যাক।
দরজাটা সহজেই খুঁজে পাওয়া গেল। কী প্যাডে যখন কোড সংখ্যাটি প্রবেশ করানো হচ্ছে তখন ক্লদ দরজাটাকে পা দিয়ে একটা লাথি দেয়, সাথে সাথে কঁাচ ক্যাচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। টুরান অবাক হয়ে বলল, দরজাটা খোলা।
ইহিতা দরজাটা পরীক্ষা করে বলল, কেউ একজন এটা ভেঙে আগে ভেতরে ঢুকেছে।
নীহা বলল, তার মানে এটা আশ্রয় হতে পারে, কিন্তু নিরাপদ আশ্রয় নয়। টুরান বলল, এখন কী করব?
টর বলল, অবশ্যই ভেতরে ঢুকব। ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে!
সে অস্ত্রটা হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল, বলল, আমি সবার আগে যাই। তোমরা পিছনে পিছনে এসো।
ভেতরে একটা ঝাঁপসা খোলা আলো। একটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে, সাবধানে পা ফেলে টর এগিয়ে যায়। অন্যেরা তার পিছু পিছু নামতে থাকে। নিচে একটুখানি খোলা জায়গা সেখানে দাঁড়িয়ে তারা চারদিকে তাকায়। সামনে একটা ভারী দরজা, দরজার ওপরে একটা বাতি জ্বলছে নিভছে। টর এগিয়ে এসে দরজা লাথি দিতেই দরজাটা খুলে গেল, দরজায় অন্যপাশে একজন দীর্ঘদেহী মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটির হাতে একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, অস্ত্রটি তাদের দিকে তাক করে মানুষটি ভারী গলায় বলল, তোমরা কারা? এখানে কেন এসেছ? তোমরা জান না এখানে ভয়ংকর বিপদ?
টর বলল, আমরা ঘটনাক্রমে এখানে এসেছি, আমাদের একটু আশ্রয় দরকার। এখানে বিপদটি কী?
মানুষটি তাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, টরের কথাটি শুনেছে কিংবা শুনে থাকলেও বুঝেছে বলে মনে হল না। মানুষটি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, তোমরা কারা? এখানে কেন এসেছ? তোমরা জান না এখানে ভয়ংকর বিপদ?
ইহিতা বলল, এটা সত্যিকারের মানুষ না। হলোগ্রাফিক ছবি।
টর মানুষটির হলোগ্রাফিক শরীরের ভিতর দিয়ে হেঁটে চলে যেতে যেতে বলল, কিছু একটা বিপদের কথা বলছে। মানুষকে সাবধান করার জন্যে এটাকে বসানো হয়েছে।
ইহিতা বলল, টর খুব সাবধান।
আমি সাবধান আছি।
ক্লদ বলল, আমার যন্ত্র আবার কটকট শব্দ করছে।
সবাই চমকে উঠল। শুনতে পেল সত্যিই তেজস্ক্রিয়তা মাপার ডিটেক্টরটি খুব মৃদুভাবে শব্দ করছে। টুরান ডিটেক্টরটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল। এখানে খুব অল্প তেজস্ক্রিয়তা আছে। আমাদের জন্যে বিপজ্জনক পরিমাণে নয়কিন্তু আছে।
টর হাতের অস্ত্রটা ধরে সাবধানে অগ্রসর হয়। চারপাশে কয়েকটা ঘর, ঘরের ভেতর নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘরের মেঝেতে মানুষের ব্যবহারী কিছু জিনিসপত্র, জামাকাপড়, পানীয় এর বোতল–শুকনো রক্তের ছোপ, সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় এখানে কোনো একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে।
শেষ ঘরটির ছাদ ভেঙে পড়েছে। দেওয়ালে বিস্ফোরণের চিহ্ন–একদিকে একটা বিশাল গর্ত। সেই গর্ত দিয়ে একটা সুড়ঙ্গে মতো বের হয়ে গেছে। তারা কিছুক্ষণ এই সুড়ঙ্গটার দিকে তাকিয়ে থাকে, ইহিতা নিচু গলায় বলল, এই সুড়ঙ্গটা কী যাবার জন্যে নাকি আসার জন্যে?
টর বলল, আমরা ভিতরে ঢুকে দেখতে পারি।
ইহিতা মাথা নাড়ল, বলল, না। আমরা এমনিতেই অনেক বড় বিপদের মাঝে আছি। নতুন করে বিপদ ডেকে আনার কোনো প্রয়োজন নেই।
ঠিক তখন ক্লদের কথা শোনা গেল, সে চিৎকার করছে, সবাই এসো দেখে যাও।
সবাই গিয়ে দেখল, সে একটা ছোট দরজা খুলে ভিতরে তাকিয়ে আছে। টুরান নিচু হয়ে দেখল, একটি মৃতদেহ। মানুষটি কতদিন আগে মারা গেছে বোঝার উপায় নেই, সমস্ত শরীর শুকিয়ে চামড়া হাড়ের উপর লেগে আছে। মানুষটির হাতে একটি ভিডি রেকর্ডার শক্ত করে ধরে রেখেছে।
সবাই এক ধরনের আতংক নিয়ে মৃতদেহটির দিকে তাকিয়ে রইল। নীহা ভয়ার্ত গলায় বলল, মানুষটির চোখে মুখে কী আতংক লক্ষ করেছ?
ইহিতা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ কী দেখে এতো ভয় পেয়েছ কে জানে?
হাতের ভিডি রেকর্ডারে হয়তো রেকর্ড করা আছে।
টর তখন নিচু হয়ে মৃত মানুষটির হাতে শক্ত করে ধরে রাখা ভিডি রেকর্ডারটি ছুটিয়ে আনে। উপরের লাল বোতামটি স্পর্শ করার সাথে সাথে ঘরের মাঝামাঝি একটি মানুষের ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক ছবি ভেসে আসে। অস্পষ্ট ছবি, মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে মাঝে মাঝে ছবিটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তারপর আবার ফিরে আসছে। তারা শুনতে পেল, মানুষটি কাঁপা গলায় বলছে, বিপদ। এখনে খুব বড় বিপদ। তোমরা কারা আমার কথা শুনছ আমি জানি না, কিন্তু আমি তোমাদের বলছি তোমরা এক্ষুণি এই আবাসস্থল ছেড়ে চলে যাও। তেজস্ক্রিয় প্রাণীগুলো এই আবাসস্থলের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে তারা এখন এখানে ঢুকতে পারে… কিমি আর লুসাকে ধরে নিয়ে গেছে… আমাদেরকেও নেবে… কী ভয়ংকর একটি প্রাণী… এদের জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, ধ্বংস নেই… কী ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো…
ইহিতা এগিয়ে এসে ভিডি রেকর্ডারের বোতাম টিপে সেটাকে বন্ধ করে বলল, ক্লদের মতো ছোট একটা শিশুর সামনে এটা দেখা ঠিক হচ্ছে না।
টর বলল, কিন্তু আমাদের জানা দরকার মানুষটি কী বলছে।