মানিক মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। এবং টর্চার করার ভয় দেখাচ্ছে। শব্দটা অবশ্যি টর্চার ব্যবহার করেনি, ওরা বলেছে, বানাবে।”
শুকনো পুলিশটা দুর্বল গলায় বলল, “বলি নাই। আমি—“
পুলিশ অফিসার তাকে প্রচণ্ড একটা ধমক দিয়ে বলল, “তুমি চুপ কর।”
শুকনো পুলিশটা চুপ করে গেল। মানিক আবার শুরু করল, “যাই হোক, আমাদের হাতকড়া লাগিয়ে এখানে দাঁড় করিয়ে কার সাথে জানি কথা বলল–”
“আমার সাথে।”
“তারপর ঐখানে দাঁড়িয়ে কিছু-একটা খেলো–“
মোটামতন পুলিশটা বলল, “খাই নাই।”
“সিগারেটের মতো কিন্তু সিগারেট না ড্রাগ বোঝা গেল না। খাওয়ার পরই তিনজনই কেমন জানি অন্যরকম হয়ে গেল। এক ধরনের হেলুসিনেশান বলতে পারেন। অদৃশ্য কিছু-একটা দেখিয়ে চিৎকার করে বলে, গাড়ি আসছে! বাঁচাও বাঁচাও! লাফ দেয়, দৌড়ায়, চিৎকার করে। তারপর দেখলাম চিৎকার করতে করতে পানিতে লাফিয়ে পড়ল। তখন। মনে হলো তিনজনই একটু শান্ত হলো।”
পুলিশ অফিসার সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “ও! তাহলে এই ব্যাপার। ডিউটিতে ড্রাগস খাওয়া হচ্ছে?”
কালোমতন পুলিশটা বলল, “বিশ্বাস করেন স্যার, কিছু খাই নাই। আল্লাহর কসম!”
“কিছু না খেলে কেউ কখনো গাড়িকে লাফাতে দেখে? গাড়িকে দুই চাকার উপর দাঁড়িয়ে নাচানাচি করতে দেখে? দেখে?”
পুলিশ তিনটি কী করবে বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। পুলিশ অফিসার অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “কী লজ্জা! কী লজ্জা! তোমাদের মতো মানুষের জন্যে আমাদের এত বদনাম। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!”
পুলিশ অফিসার এবারে মানিক আর রতনের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি খুবই দুঃখিত, আপনাদের মিছিমিছি হয়রানি করার জন্যে। ক্ষমা চাচ্ছি আপনাদের কাছে।”
রতন হাতকড়াটা দেখিয়ে বলল, “এবারে তাহলে এটা খুলে দেন। খুব চুলকাচ্ছে হাত।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ খুলে দিচ্ছি। চাবিটা কার কাছে?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের হাত থেকে হাতকড়া খুলে দেয়া হলো। পুলিশ অফিসার অনেকবার ক্ষমা চাইলেন, পুরো ব্যাপারটা ভুলে যেতে বললেন, মানিক আর রতন বলল তারা চেষ্টা করবে ভুলে যেতে।
কালোমতন, মোটামতন এবং শুকনোমতন পুলিশকে গাড়ির পিছনে তোলা হলো, তাদেরকে নিয়ে এখন ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে। মানিক আর রতন লক্ষ করল তারা বিড়বিড় করে বলেছে, “একেবারে স্পষ্ট দেখেছি আমরা বিশ্বাস করেন! কী আজিব ব্যাপার! বাপের জন্মে এরকম দেখি নাই–”
.
পুলিশের দলটি সবাইকে নিয়ে চলে যাবার পর মানিক আর রতন একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে প্রথমে আস্তে আস্তে তারপর জোরে জোরে হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে হঠাৎ করে মানিক থেমে গেল, বলল, “একটা জিনিস লক্ষ করেছ?”
“কী?”
“তোমার নামটাই এখনো জানা হয়নি! আমার নাম মানিক। আজিজ মার্কেটে গিয়ে যে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করো কবি মানিক কোথায়, সাথে সাথে তারা আমাকে খুঁজে বের করে দিবে। তোমার নাম?”
রতন বলতে শুরু করল, “আমার নাম—“
মানিক হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বলর, “দাঁড়াও! দাঁড়াও! আগেই বলে দিও না। আমি অনুমান করার চেষ্টা করি। তোমার নাম হচ্ছে বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ, অনিরুদ্ধ অনুরণন–”
রতন মাথা নাড়ল, বলল, “না। আমার নাম রতন।”
এইভাবে মানিক আর রতনের পরিচয় হলো।
২. ডুগুডুগু
রতনের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মানিক দরজায় টোকা দেবার আগেই খুট করে দরজাটা খুলে গেল, দরজার ওপাশে রতন দাঁড়িয়ে আছে। মানিক অবাক হয়ে বলল, “কী হলো? দরজায় টোকা দেবার আগেই দরজা খুলে দিলে?”
“হুঁ দিয়েছি।”
“নিশ্চয়ই টেলিপ্যাথি। তুমি টেলিপ্যাথি করে বুঝে গেছ আমি এসেছি। ঠিক কি না?”
“উঁহু।” রতন মুখ শক্ত করে বলল, “আমি ক্লোজসার্কিট টিভিতে দেখেছি তুমি আসছ।”
মানিকের একটু মন খারাপ হলো, বলল, “ইশ! যদি টেলিপ্যাথি হতে তাহলে কী মজা হতো তাই না? তুমি একটু গবেষণা করে টেলিপ্যাথি যোগাযোগ করতে পার না?”
“মোবাইল টেলিফোন টেলিপ্যাথি থেকে অনেক ভালো কাজ করে। অনেক সস্তাও।”
মানিক হতাশভাবে মাথা নেড়ে বলল, “নাহ্! তোমার মাঝে কোনো কোমল ব্যাপার নেই। তোমার সবকিছু হচ্ছে কাঠখোট্টা।”
রতন একটু সরে মানিককে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দিয়ে বলল, “এটা মোটেও সত্যি না। আমার সবকিছু যদি কাঠখোট্টা হতো তাহলে আজকে তোমাকে আমি বাসাতে ঢুকতেই দিতাম না।”
মানিক অবাক হয়ে বলল, “সে কী! আমাকে কেন বাসায় ঢুকতে দেবে?”
রতন মুখ শক্ত করে বলল, “এখন কয়টা বাজে?”
মানিক তার ঘড়ি দেখে বলল, “এগারোটা।”
“তোমার সকাল আটটার সময় আসার কথা ছিল, আজকে আমাদের সাভারে সাপের বাজারে যাবার কথা। তুমি এসেছ তিন ঘণ্টা পরে। এগারোটায়।”
মানিক এমনভাবে রতনের দিকে তাকিয়ে রইল যে তাকে দেখে মনে। হলো সে রতনের কথা বুঝতে পারছে না। একটু ইতস্তত করে বলল, “আটটা আর এগারোটার মাঝে পার্থক্য কী? একই তো কথা।”
“একই কথা?” রতন চোখ কপালে তুলে বলল, “একই কথা?”
“হ্যাঁ একই কথা। সময় নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কী আছে? আমরা সময়কে ব্যবহার করব, নাকি সময় আমাদের ব্যবহার করবে?”
“মানে?”
“কে বলেছে আমাদের ঘড়ি ধরে চলতে হবে? আমি আমার জীবনকে ঘড়ি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে দেব না। কক্ষনো না। আমার যখন ইচ্ছে ঘুমাব যখন ইচ্ছা ঘুম থেকে উঠব।”
রতন বলল, “ঠিক আছে। তাহলে তুমি কেন কালকে বললে আজ সকাল আটটায় আসবে? আমি আটটা থেকে অপেক্ষা করছি। তোমাকে ফোন করেছি তুমি ফোন ধরো না”