মানিক বলল, “আমরা মোটেও ডাকাত সন্ত্রাসী কিডন্যাপার এরকম কেউ না। আমি একজন কবি, লেখালেখি করি। ইনি হচ্ছেন বৈজ্ঞানিক!”
মোটামতন পুলিশ হা হা করে হাসল। বলল, “আমাদের সঙ্গে মশকরা। তোরা কবি? তোরা বৈজ্ঞানিক? চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোরা হচ্ছিস ক্রিমিনাল। তোদের চেহারার মাঝে ক্রিমিনালের ছাপ।”
মানিক বলল, “দেখেন, আপনাদের সাথে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা মোটেও ক্রিমিনাল না। আপনারা চাইলে প্রমাণ করে দিতে পারব।”
শুকনোমতন পুলিশ বলল, “কথা পরে। আগে আচ্ছামতন একবার বানাই।”
মোটামতন পুলিশ শুকনোমতন পুলিশকে ধমক দিয়ে বলল, “তোমার শুধু বানানো আর বানানো! বানানোর সময় কি চলে গেছে? রাস্তার পাশে মারধোর করলে কোনো একজন সাংবাদিক ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলে উপায় আছে?”
কালোমতন পুলিশ, “আগে বিজনেস। তারপরে অন্য কথা।”
মোটামতন পুলিশ বলল, “হ্যাঁ আগে বিজনেস।” তারপর মানিক আর রতনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোরা এখন বল কত টাকা দিবি?”
রতন অবাক হয়ে বলল, “টাকা? টাকা কেন দেব?”
মোটামতন পুলিশ হা হা করে হাসল, বলল, “টাকা কেন দিবি জানিস? টাকা না দিলে তোদের নামে মামলা করে হাজতে পাঠিয়ে দেব! বাকি জীবন জেলখানায় থাকবি।”
“মামলা?” রতন বলল, “আমাদের নামে কী মামলা করবেন?”
“ব্যাংক ডাকাতি।”
রতন হেসে ফেলল, “আমাদের নামে ব্যাংক ডাকাতির মামলা কেউ বিশ্বাস করবে না!”
কালোমতন পুলিশ হুংকার দিয়ে বলল, “বিশ্বাস করবে না? হাতে নাতে ব্যাংক ডাকাতকে ধরলে কেউ বিশ্বাস করবে না!”
“আমাদেরকে হাতে নাতে ধরেছেন?”
“অবশ্যই, হাতে নাতে ধরেছি। তোদের গাড়ির ভেতর থাকবে অস্ত্র আর টাকা! ব্যাংক থেকে যে টাকা ডাকাতি করে এনেছিস, সেই টাকা তোদের গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হবে।”
“আমাদের গাড়িতে কোনো টাকা নেই।”
“দেখতে চাস টাকা আছে কি নেই?”
রতন কোনো কথা না বলে কালোমতন পুলিশটির দিকে তাকিয়ে রইল। পুলিশটি গলা উঁচিয়ে বলল, “গাড়ির ভিতরে পলিথিনের ব্যাগে দুই লাখ টাকা আছে না?”
শুকনোমতন পুলিশটা বলল, “আছে।”
“এই গাড়ির ভেতরে রাখ।”
রতন চিৎকার করে বলল, “আপনি এটা করতে পারেন না। কিছুতেই করতে পারেন না।”
মোটামতন পুলিশ বলল, “দেখা যাক সেটা করা যায় কি না!” তারপর আনন্দে হা হা করে হাসল।
মানিক আর রতন বিস্ফারিত চোখে দেখল তাদের গাড়িতে সিটের। নীচে পলিথিনের ব্যাগে করে অনেকগুলো টাকা ঠেসে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। তারপর একটা জংধরা রিভলবার আর একটা বড়ো চাকু ড্যাশবোর্ডের ভিতর ঢুকিয়ে রাখল। মোটা পুলিশটা বলল, “কাজ কমপ্লিট।”
চিকন পুলিশটা বলল, “এখন বানাই?”
“এখনই না।”
কালোমতন পুলিশ বলল, “এখন স্যারকে খবর দেই। স্যার আসার পর স্যারের সামনে গাড়ি তল্লাশি করে টাকা আর অস্ত্র বের করব। তাহলে আর কেউ সন্দেহ করবে না।”
মোটামতন পুলিশ আনন্দে আবার হা হা করে হাসল। মানিক দুর্বল গলায় বলল, “দেখেন, কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। আমরা একেবারেই নিরপরাধী মানুষ, কিছুই করি নাই। আমাদেরকে এরকম একটা বিপদের মাঝে ফেলে দেয়া কি ঠিক হচ্ছে?”
শুকনোমতন পুলিশটা বলল, “বিপদের তোরা দেখেছিস কী?” মাত্র তো শুরু হলো! আগে হাজতে নিয়ে যাই তারপরে দেখবি বিপদ কত প্রকার ও কী কী!”
কালোমতন পুলিশ তখন ওয়াকিটকি বের করে কথা বলতে শুরু করেছে। মানিক আর রতন শুনল সে বলছে, “জী স্যার, দুইজন ব্যাংক ডাকাতকে ধরেছি। ব্যাংক থেকে খবর দিয়েছিল। গাড়িটা কেমন বলেছে আর চেহারার বর্ণনা দিয়েছে। আমরা রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে ধরে ফেলেছি। গাড়িটা এখনো সার্চ করি নাই। আপনি আসার পর আপনার সামনে সার্চ করব।… না স্যার… চেহারা দেখে বোঝাই যায় না ব্যাংক ডাকাত। দ্রলোকের মতো চেহারা। কী যে হয়েছে দেশটার বুঝি না, স্যার। মানুষের মাঝে সততা নাই। ঠিক আছে স্যার আমরা অপেক্ষা করছি।”
পুলিশ তিনজন মানিকের ডান হাত আর রতনের বাম হাতের মাঝে একজোড়া হাতকড়া লাগিয়ে তাদেরকে রাস্তার পাশে একটা গাছের নীচে বসিয়ে রাখল। মানিক বিস্ফারিত চোখে হাতে লাগানো হাতকড়াটির দিকে তাকিয়ে নীচু গলায় বলল, “কী বিপদে পড়েছি দেখেছেন! এখন কী হবে!”
“কুংফু।”
মানিক অবাক হয়ে বলল, “কী বললেন?”
“বলেছি কুংফু।”
“কুংফু? কুংফু কেন বলছেন?”
“হ্যাঁ। আপনি ঘুংচুর প্রতিশব্দ চাচ্ছিলেন, কুংফু কি হতে পারে?”
মানিক মুখ শক্ত করে বলল, “এরকম সময় আপনি ঠাট্টা করতে পারেন? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আপনি জানেন আমরা কী বিপদে পড়েছি?”
রতন খোলা হাত দিয়ে তার পকেট থেকে টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলের মতো একটা জিনিস বের করে বলল, “আমরা বেশি বিপদে পড়েছি নাকি এই পুলিশগুলো বেশি বিপদে পড়েছে দেখা যাক।”
“পুলিশগুলো কেন বেশি বিপদে পড়বে?”
রতন রিমোট কন্ট্রোলের মতো জিনিসটা মানিককে দেখিয়ে বলল, “এটা হচ্ছে আমার গাড়িটির রিমোট কন্ট্রোল। দুইটা মোডে কাজ করে, নরমাল আর কুংফু।”
“কুংফু?”
“হ্যাঁ। কুংফু মোডে আগে টেস্ট করি নাই। দেখি কেমন কাজ করে।” বলে রতন রিমোট কন্ট্রোলারে একটা বেতাম টিপে ধরতেই গাড়িটা হঠাৎ যেন কেমন গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল, তারপর নিঃশব্দে পুলিশগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পুলিশ তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন, প্রথমে লক্ষ করেনি হঠাৎ শুকনোমতন পুলিশটা গাড়িটাকে দেখতে পায়, সে চিৎকার করে উটলে, “ইয়া মাবুদ।” গাড়িটা তখন হঠাৎ তাদের দিকে ছুটে গেল এবং কাছাকাছি যেতেই গাড়ির দরজা খুলে যায় আর দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে কালোমতন পুলিশটা রাস্তার উপর ছিটকে পড়ল।