“শব্দ আর ধোঁয়া দিয়ে দিয়েছি এখন গাড়িটা স্টার্ট করা যায়।”
রতন আরেকটা সুইচ টিপে দিতেই গাড়িটা চলতে শুরু করে, সে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে গাড়িটা রাস্তায় নিয়ে এসে মানিকের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভয় পাচ্ছেন না তো?”
“না, না। ভয় পাব কেন?”
“আমার ড্রাইভিং দেখে অনেকে ভয় পায়।”
মানিক রতনের গাড়ি চালানো লক্ষ করতে করতে বলল, “ভয়। পাওয়ার কী আছে? আপনি তো বেশ ভালো গাড়ি চালান।”
“সত্যি?”
“সত্যি।”
“আমার ড্রাইভিংয়ের ওপর কি আপনার বিশ্বাস আছে?”
“থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে।”
“ঠিক আছে। তাহলে দেখা যাক।” বলে রতন এক্সেলেটর চেপে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল, গাড়িটি এত জোরে যাচ্ছে যে এবারে রীতিমতো কাঁপতে থাকে। মানিক দুর্বলভাবে বলল, “একটু বেশি জোরে চালাচ্ছেন না?”
“হ্যাঁ। বেশি স্পিডে এখনো টেস্ট করা হয়নি।”
“কী টেস্ট করা হয়নি?”
ঠিক তখন সামনের দিক থেকে একটা দৈত্যের মতো ট্রাক আসতে থাকে, ট্রাকটার জন্যে রাস্তা ছেড়ে না দিয়ে রতন তার গাড়িটাকে বরং রাস্তার মাঝখানে নিয়ে আসে। মানিক ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কী করছেন? সাইড দেন।”
“মজাটা দেখেন আগে!” বলে রতন স্টিয়ারিং হুইলটা ছেড়ে দিয়ে দুই হাত মাথার উপর তুলে ফেলে। মানিক আতংকে চিৎকার করে বলল, “কী করছেন আপনি?”
রতন বলল, “গাড়ি চালাচ্ছি।”
উলটো দিক থেকে ট্রাকটা বিকট হর্ন বাজাতে বাজাতে ছুটে আসছে, রাস্তার পাশে সরে গিয়ে জায়গা করে দেবার জন্যে হেডলাইট জ্বালিয়ে নিভিয়ে সিগন্যাল দিতে থাকে কিন্তু মানিকের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে। স্টিয়ারিং হুইল ছেড়ে দিয়ে দুই হাত উপরে তুলে হাত তালি দিতে থাকে। মানিক হঠাৎ করে বুঝতে পারল, না বুঝে সে আসলে একজন বদ্ধ। পাগলের গাড়িতে উঠে পড়েছে। ঠিক যখন মুখোমুখি কলিশন হবে তার আগের মুহূর্তে রতনের গাড়িটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাম পাশে সরে গিয়ে হুশ করে ট্রাকটাকে বের হয়ে যেতে দিল। মানিকের তখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে বেঁচে আছে, তার চাইতে অবাক ব্যাপার রতন এখনো স্টিয়ারিং হুইল। ধরেনি, গাড়িটা নিজে নিজে চলছে।
মানিক দুই হাতে বুক চেপে ধরে কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, “কী হচ্ছে এখানে?”
রতন দুই হাত ভাঁজ করে মাথার পিছনে নিয়ে আরাম করে বসে বলল, “কী আবার হবে? গাড়ি চলছে।”
“কেমন করে চলছে?”
“নিজে নিজে চলছে। এটা হচ্ছে আমার সর্বশেষ আবিষ্কার ড্রাইভিং সফটওয়্যার। টেস্ট করার জন্যে গাড়িতে লোড করে বের হয়েছি।”
মানিক বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে নিতে বলল, “প্লিজ, গাড়িকে নিজে নিজে চলতে দিয়েন না। গাড়ি কখনো নিজে নিজে চলতে পারে না। স্টিয়ারিংটা হাত দিয়ে ধরেন। প্লিজ ধরেন।”
রতন হাসি হাসি মুখ করে বলল, “ধরতে হবে না। আমি যতো ভালো গাড়ি চালাতে পারি, আমার ড্রাইভিং সফটওয়্যার তার থেকে একশগুণ ভালো গাড়ি চালায়?”
মানিক ভাঙা গলায় বলল, “তবুও আপনি স্টিয়ারিংটা ধরেন দোহাই লাগে।”
রতন দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, “আমি বলেছিলাম না আপনি ভয় পাবেন। এখন বিশ্বাস হলো?”
“আপনি আমাকে নিয়ে সুইসাইড করলে আমি ভয় পাব না?”
রতন দূরে তাকিয়ে বলল, “ঐ দেখেন একটা বাস আসছে! বাস ড্রাইভারকে এখন জন্মের মতো শিক্ষা দেয়া হবে!”
“কসম লাগে। আপনার কসম লাগে কাউকে শিক্ষা দিতে হবে না!”
রতন মানিকের কথায় কান দিল না। বলল, “বাস ড্রাইভারগুলো সবচেয়ে বড়ো বেয়াদব, ছোটো গাড়িগুলোকে সাইড দেয় না, রাস্তা থেকে নামিয়ে দেয়। আজকে তার শিক্ষা হবে।”
“কী শিক্ষা হবে?”
“আমার ড্রাইভিং সফটওয়্যার সাইড দেবে না।”
মানিক আর্তনাদ করে বলল, “সর্বনাশ!”
“ব্যাটাকে বাধ্য করা হবে সাইড দিতে!” রতন আনন্দে হা হা করে হাসল।
মানিক দুই হাতে নিজের বুক চেপে ধরে বলল, “প্লিজ, ওটা করবেন। বাস যদি সাইড না দেয় তাহলে? তাহলে কী হবে?”
“একেবারে শেষ মুহূর্তে কলিশনের দুই দশমিক তিন মিলিসেকেন্ড আগে আমার গাড়ি ঝটকা মেরে সরে যাবে।”
“যদি যেতে না পারে?”
“পারবে। নতুন অপারেটিং সিস্টেমে প্রোগ্রাম লোড করেছি–”
মানিক বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে, তাদের গাড়িটা সোজা বাসটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে থেকে হর্ন দিতে দিতে বাসটা এগিয়ে আসছে–শুধু হর্ণ দিয়েই থামেনি হেডলাইট জ্বালাচ্ছে নিভাচ্ছে। রতন খিক খিক করে হেসে বলল, “সরে যাও বাছাধন সরে যাও–”
মানিক আতঙ্কে চোখ বন্ধ করল, টের পেল সত্যি সত্যি শেষ মুহূর্তে গাড়িটা ঝটকা মেরে সরে গেছে। রতন আনন্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, “বিশ্বাস হলো?”
মানিক মাথা নাড়ল, “না হয়নি।”
“কেন হয়নি?”
“এটা কোনোদিন বিশ্বাস হবে না।”
“হবে হবে।” রতন মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “আপনি তো ভয়ের চোটে চোখ বন্ধ করে ফেললেন তাই দেখতে পেলেন না ব্যাটা ড্রাইভার ভয়ের চোটে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিল! না দিয়ে যাবে কোথায়?”
মানিক চিঁ চিঁ করে বলল, “আপনি বলেছিলেন না আপনার পরিচিত একজন এই গাড়িতে উঠে হার্ট এটাক হয়েছিল?”
“হ্যাঁ।”
আমারও মনে হয় হার্ট এটাক হচ্ছে। বুকের মাঝে কেমন জানি চাপ লাগছে। শরীরটা মনে হয় ঘামছে।”
রতন মানিকের দিকে একনজর তাকিয়ে বলল, “না। আপনার মোটেও হার্ট এটাক হচ্ছে না।”
“আপনি কেমন করে জানেন? নিশ্চয়ই হচ্ছে।”