বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ভলান্টিয়ার জিজ্ঞেস করল, “এখন ছাত্রছাত্রীদের ঢুকতে দেব?”
মিঠু বলল, “এখন না দেওয়াই ভালো। কালাচান আর ধলাচানের একটু বিশ্রাম দরকার।”
ফর্সা মানুষটা মিঠুকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না, প্রায় একটা ধাক্কা দিয়েই বাইরের দিকে নিয়ে যায়।
স্কুলের বাইরে একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়েছিল, মিঠু আর গুল্লুকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে ফর্সা আর কালো মানুষটাও ভেতরে ঢুকল। মিঠুকে জিজ্ঞেস করল, “কোনদিকে যাব?”
“সোজা।”
ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে সোজা যেতে থাকে। রিমি আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছিল তাই কিছুক্ষণের ভিতরেই তাকে পাওয়া গেল। এদিক সেদিক দেখতে দেখতে রিমি সাবধানে হেঁটে যাচ্ছে। মিঠু বলল, “ঐ যে রিমি। গাড়ি থামাও।”
মাইক্রোবাসটা রিমির কাছে থামল, রিমি একটু অবাক হয়ে তাকাল, মাইক্রোবাসের ভেতরে মিঠু গুল্লু আর সাংবাদিকদের দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
মিঠু গাড়ি থেকে নেমে বলল, “কিছু হয় নাই।”
“তোর সাথে এরা কেন?”
অন্যরাও ততক্ষণে নেমে এসেছে, জগু নামের মানুষটাও হঠাৎ কোথা থেকে হাজির হয়ে সবাই মিলে রিমিকে ঘিরে ফেলেছে। রিমি এবারে একটু ভয় পেয়ে গেল। মিঠু বলল, “কোনো ভয় নাই। তোর ব্যাকপ্যাকটা দে।”
“কেন?”
“এখন প্রশ্ন করিস না। পরে বলব। তুই ব্যাকপ্যাকটা দে।”
“না, আমি দেব না।”
ফর্সা মানুষটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “তোমার বাবা দেবে।”
রিমি বলল, “সাহস থাকলে নেয়ার চেষ্টা করেন।”
মিঠু বলল, “মাথা গরম করিস না। এর মাঝে অনেক ব্যাপার আছে। ব্যাগটা দে।”
“না।”
মিঠু তখন রিমির পিছনে গিয়ে ব্যাগটা খুলে নেয়ার চেষ্ট করল। কেউ বুঝতে পারল না যে আসলে সে মোটেই ব্যাগটা খুলে নেয়ার চেষ্টা করল না, সে হুটোপুটি করে ব্যাকপ্যাকের জিপটা টেনে ব্যাগটা খুলে দিল। ব্যাগের ভিতরে একটুখানি জায়গায় এতক্ষণ আটকে থেকে কালাচান ধলাচান নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল, ব্যাগটা খুলতেই দুইজন উড়ে বের হয়ে গেল।
ফর্সা মানুষটা একেবারে পাগলের মতো হা হা করে ছুটে এসে কালাচান ধলাচানকে ধরা চেষ্টা করল, কিন্তু ততক্ষণে দুজনেই নাগালের বাইরে চলে গেছে। কালাচান ধলাচান বেশি দূরে গেল না, তাদের মাথার উপর উড়তে লাগল।
মিঠু চিৎকার করে বলল, “পিচিক।”
কালাচান ধলাচান নিশ্চয়ই বুঝে গেল যে কোনো জায়গায় পিচিক করলে হবে না, তাই খুব হিসাব করে নিখুঁতভাবে ফর্সার মুখের উপর পিচিক করে বাথরুম করে দিল। প্রথমে ধলাচান, তারপরে কালাচান।
ফর্সা লোকটা হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করে, কোন লাভ হয় না, তার চোখের মাঝেও কাকের বাথরুম ঢুকে গেছে, ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। গুল্লু আর রিমিও তখন চিৎকার করে বলল, “পিচিক পিচিক।”
কালাচান ধলাচান তাদের নিরাশ করল না। বোম্বার প্লেনের মতো উড়ে উড়ে মানুষগুলোর চোখে-মুখে বাথরুম করে যেতে লাগল। সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখার জন্যে মানুষের ভিড় জমে যায় এবং প্রত্যেকবার সফলভাবে বাথরুম করা মাত্র তারা হাততালি দিতে থাকে।
ফর্সা মানুষটা কোনোভাবে চোখ খুলে মিঠুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই ছেড়ে দিলি? তোর মনে এই ছিল আগে বললি না কেন? তোকেও না। হয় কোটি টাকার ভাগ দিতাম।”
মিঠু বলল, “তোমার কোটি টাকার ভাগে আমি পিচিক করে দেই।”
কালাচান ধলাচানের বাথরুম সাপ্লাই শেষ হবার পর তারা তাদের মাথার উপর কয়েকপাক উড়ে একটা ইলেকট্রিক তারের উপর বসল, তারপর উড়ে গেল।
.
কালাচান আর ধলাচানকে আর দেখা যায়নি। রতন বলেছে ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে হাত দুটো অচল হয়ে যাবে তখন সেগুলো কালাচান ধলাচানের জন্যে একটা বাড়তি ঝামেলা হয়ে দাঁড়াবে। রতন অবশ্যি নিশ্চিত ছিল কালাচান ধলাচান তখন ঠুকরে ঠুকরে সেগুলো খুলে ফেলতে পারবে। হাত ছাড়াই তখন তাদের কাক জগতে বেঁচে থাকা শিখতে হবে। রতনের ধারণা। এটা বড়ো কোনো সমস্যা হবে না, কারণ কাক হচ্ছে পাখিদের আইনস্টাইন!
.
বহুদিন পর রতন একদিন বিজয় সরণি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তখন হঠাৎ কোথা থেকে একটা কাক কা কা করে ডাকতে ডাকতে তার মাথার উপর উড়তে লাগল। রতন তখন হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে ডাকল, “কালাচান? ধলাচান?”
কাকটা তখন উড়ে তার হাতের উপর বসল। রতন চিনতে পারে, এটা ধলাচান। আরো বড়ো হয়েছে আরো তেজি হয়েছে। সাথে আরো কয়েকটা। কাক ছিল তারা অবশ্যি রতনের কাছে এল না, দূরে দূরে উড়ে উড়ে কাকা করে ডাকতে লাগল।
রতন বলল, “ধলাচান, তুমি ভালো আছ?”
ধলাচান বলল, “কা কা।”
“কালাচান কোথায়?”
ধলাচান বলল, “কা কা।”
“ঐ যারা উড়ছে তারা বুঝি তোমার ফেমিলি? বাচ্চা-কাচ্চা?”
ধলাচান বলল, “কা কা।”
রতন সাবধানে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “যাও ধলাচান, বাচ্চা-কাচ্চাকে দেখে শুনে রেখো। যেখানেই থাকো ভালো থেকো।”
ধলাচান বলল, “কা কা” তারপর উড়ে গেল।
৪. চেয়ার
রতন বেশ মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। টেবিলের অন্য পাশে বসে থাকা মানিক তার প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করছে। রতন হঠাৎ করে মানিকের দিকে তাকাল, তারপর জিজ্ঞেস করল, “কী হলো মানিক? তুমি খাচ্ছ না?”
মানিক বলল, “চেষ্টা করছি।”
রতন ভুরু কুঁচকে বলল, “কোনো সমস্যা?”
মানিক বলল, “না মানে ইয়ে, কে বেঁধেছে?”
রতন বলল, “কে বেঁধেছে মানে? অবশ্যই আমি বেঁধেছি।”