“হ। তোগে কাউয়ার খবর সারা দুনিয়াতে জানাজানি হইছে। বিদেশিগো সাথে আমাগো কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট।”
গুল্লু বলল, “কেমন করে জানাজানি হলো?”
“এই খবর চাপা থাকে না।”
কালো মানুষটা খাঁচার কাছে গিয়ে কালো কাপড়টা তুলে একটু উঁকি দিয়ে সন্তুষ্টির মতো শব্দ করল। ফর্সা মানুষটা জিজ্ঞেস করল, “আছে?”
“আছে বস। দুইটা। একটা কালা আরেকটা লাল।”
“লাল?” ফর্সা মানুষটা অবাক হয়ে বলল, “কাউয়া লাল হয় কেমন করে?”
“তাইতো।” কালো মানুষটা এবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে টান দিয়ে কালো কাপড়টা সরিয়ে দিতেই মুরগি দুটো কককক শব্দ করে দাঁড়িয়ে গেল। মাথা নাড়িয়ে সবাইকে দেখল।
ফর্সা মানুষটার মুখটা হঠাৎ কেমন যেন বিকৃত হয়ে যায়, দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, “কাউয়া দুইটা কই?”
মিঠু অবাক হয়ে বলল, “কাক? কাক নেই, আমাদের কাছে এই দুটোই আছে। কালোটার নাম কালাচান আর লালটার নাম ধলাচান। আমরা এই দুটোই দেখাচ্ছি।”
কালো মানুষটা বলল, “বস। ঠিকই আছে। দেখছেন না হাত আছে। মনে হয় মুরগিরে ভুল করে কাউয়া বলেছে।”
ফর্সা মানুষটা চিৎকার করে বলল, “ঠিক নাই। আমি ছবি দেখেছি। মুরগি ছিল না, কাক ছিল। আর দেখছিস না প্লাস্টিকের স্ট্র দিয়ে হাত বানাইছে? রাবার ব্যান্ড দিয়ে মুরগির ডানার সাথে লাগাইছে?”
কালো মানুষটা বলল, “তাইতো!”
তারপর দুজনেই মিঠু আর গুল্লুর দিকে তাকাল। ফর্সা মানুষটা তার কোমরে গোজা রিভলভারটা টান দিয়ে বের করে মিঠুর মাথায় ধরল, বলল, “কাউয়া দুইটা কই?”
মিঠু বলল, “হুশ!”
“খুন করে ফেলব আমি।”
মিঠু বলল, “এত সোজা না। এই স্কুলে এক হাজার ছেলে মেয়ে থাকে। আমারে খুন করে বের হবার চেষ্টা করলে সবাই ছাতু করে ফেলবে। হুশ!”
কথাটায় যুক্তি আছে। ফর্সা মানুষটা বলল, “ঠিক আছে তাহলে।” তারপর রিভলভারটা প্যান্টে গুঁজে মিঠুর হাত ধরে ঘুরিয়ে এমনভাবে মোচড় দিল যে যন্ত্রণায় তার চোখে পানি এসে গেল। ফর্সা মানুষটা বলল, “বল, কাউয়া দুইটা কই? বল!”
মিঠু যন্ত্রণায় ছটফট করে বলল, “হুশ!”
“বল। বল এক্ষুনি।”
“হুশ! হুশ!”
“বল বলছি। নাহলে হাত খুলে আসবে।”
কথাটা সত্যি তাই মিতু বলল, “ঠিক আছে বলছি। আগে হাতটা ছাড়।”
ফর্সা মানুষটা হাতটা ছেড়ে বলল, “বল কাউয়া দুইটা কই?”
“সাইন্টিস্ট চাক্ষুর কাছে ফেরত পাঠিয়েছি।”
“কেমন করে ফেরত পাঠালি? কখন ফেরত পাঠালি?”
“রিমির ব্যাকপ্যাকে করে, তোমাদের সামনে বের হয়ে গেল মনে নাই!”
“ঐ মেয়েটা? তখনই মনে হলো মেয়েটার কোনো বদ মতলব আছে।”
মিঠু বিড়বিড় করে বলল, “মেয়েটার কোনো বদ মতলব নাই। বদ মতলব তোমাদের।”
“কী বললি?”
“কিছু বলি নাই। হুশ!”
কালো মানুষটা বলল, “ঐ ছেমড়ি বেশি দূর যাবার পারে নাই। কোনদিকে গেছে?”
ফর্সা মানুষটা বলল, “আমাদের নিয়া চল। এক্ষুনি।”
মিঠু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমাকে আগে সাইন্টিস্ট চাক্ষুর সাথে কথা বলতে হবে।”
“তোর মাথা খারাপ হইছে।”
মিঠু বলল, “হয় নাই। কথা বলতে হবে।”
ফর্সা মানুষটা বলল, “ঠিক আছে। কথা বল।” সে তার পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে মিঠুর হাতে দিল। তারপর আবার রিভলভারটা বের করে তার মাথায় ধরল।
মিঠু রতনকে ফোন করল, দুবার রিং হতেই রতন ফোন ধরল, “হ্যালো।”
“আমি মিঠু।”
“কোনো সমস্যা?”
“জি, অনেক বড়ো সমস্যা।
“কোনো মানুষ কালাচান আর ধূলাচানের জন্যে তোমাদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে? তোমাদের কোনো ধরনের বিপদ? ডেঞ্জার?”
রতন কেমন করে বুঝে গেল মিঠু বুঝতে পারল না। সে বলল, “জি সাইন্টিস্ট চাচ্চু।”
“তাকে কিংবা তাদেরকে দিয়ে দাও। এক্ষুনি দিয়ে দাও। তোমাদের যেন কোনো বিপদ না হয়।”
“আপনার এত মূল্যবান কালাচান ধলাচান।”
“আমার যেটা জানার ছিল জেনে গেছি এর মূল্য আমি পেয়ে গেছি। তুমি যদি কাকের বাচ্চা এনে দাও তাহলে দরকার হলে আমি আবার কালাচান ধলাচান বানাতে পারব। বুঝেছ? আমি চাই না কালাচান ধলাচানের জন্যে তোমাদের কোনো ঝামেলা হয়। এক্ষুনি দিয়ে দাও, দিয়ে আমাকে ফোন কর।”
“দিতে একটু সময় লাগছে। দিয়ে আপনাকে ফোন করব।”
“ঠিক আছে।”
মিঠু টেলিফোনটা ফর্সা মানুষটার কাছে ফেরত দিয়ে বলল, “হুশ।”
“কী বললি?”
“বলেছি, চল আমার সাথে, গুল্লু, তুইও আয়।”
ফর্সা মানুষটা তার টেলিফোনটা হাতে নিয়ে কোনো একটা নম্বর ডায়াল করল, তারপর বলল, “জগু, কী বলি মন দিয়া শোন। আমরা এখন এই আন্ডাবাচ্চার স্কুল থেকে বের হইতাছি। ডেরাইভারকে বল রেডি থাকতে, আর তুই গাড়ি থেকে নাম, একটা মেয়ে পিঠে একটা ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়েছে একটু আগে
“জে দেখেছি। লাল ব্যাগ।”
“হ্যাঁ, এই মেয়েটারে রাস্তায় খুঁজে বের কর। মেয়েটারে কিছু বলবি। খালি চোখে চোখে রাখবি।”
“ঠিক আছে।”
ফর্সা মানুষটা টেলিফোনটা রেখে বলল, “চল, যাই। কোনো রকম ঝামেলা করবি না তাহলে কিন্তু ঐ মেয়ে খরচা হয়ে যাবে।”
মিঠু বলল, “হুশ।”
কালো মানুষটা আবার ক্যামেরা ঘাড়ে তুলে নিল, তারপর দরজা খুলে বের হয়ে এল। দরজা খুলতেই বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে ছুটে এল, একজন জিজ্ঞেস করল, “ভিডিও হয়েছে?”
ফর্সা মানুষটা বলল, “একটা পার্ট শেষ হয়েছে, এখন অন্য পার্টটা ভিডিও করার জন্যে যাচ্ছি।” তারপর মিঠুর দিকে তাকিয়ে মধুরভাবে হেসে বলল, “এসো থোকা।”